জাতীয় দলের হয়ে নিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই খানিকটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি ফাফ ডু প্লেসিস। দলের টপ অর্ডার খানিকটা ধসের সম্মুখীন। গুরুদায়িত্ব- ইনিংসের হাল ধরতে হবে। একটা স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যেতে হবে স্কোরবোর্ড। নিজের দৃঢ়তার প্রমাণ সেদিন তিনি রেখেছিলেন। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান ফাফ ডু প্লেসিস। প্রায় ১১০ রানের জুটি বাঁধেন তিনি জেপি ডুমিনির সাথে। নিজে ৬০ রান করে কাটা পড়েন মুনাফ প্যাটেলের বলে। সেই থেকে জাতীয় দলের সাথে ফাফ ডু প্লেসিসের যাত্রা শুরু। তবে খুব সহজেই তিনি এমন মসৃণ এক যাত্রায় নিজেকে আবিষ্কার করেছেন তেমনটা ভাবার কোন সুযোগ নেই।
বরং ১৯৮৪ সালের ১৩ জুলাই জন্ম নেওয়া ফ্যাঙ্কোয়েস ডু প্লেসিসকে একটা দারুণ সংগ্রাম চালাতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে একটা কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সে অবশ্য একটা লম্বা সময় ধরেই চালু আছে। তবে সমস্যাটা হল সে কোটার কারণে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারই নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেন না। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে সুযোগটাই পায় না।
সে সুযোগ না পেয়ে প্রোটিয়া ক্রিকেটাঙ্গন থেকে একপ্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস। তিনি নতুন কোন রাস্তায় নিজের ক্রিকেটিয় শৈল্পিকতার মুগ্ধতা ছড়ানোর অধীর আগ্রহে নিমজ্জিত ছিলেন। তাইতো ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন। অন্যদিকে তাঁর স্কুল সতীর্থ এবি ডি ভিলিয়ার্স প্রোটিয়াদের হয়ে ক্রিকেট দুনিয়ার আলো ছড়াচ্ছিলেন।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে তিনি কখনোই মুখ ফিরিয়ে নেননি। বরং তিনি ধারাবাহিকতার উদাহরণ দেখিয়ে রান করে গেছেন নিয়মিত। সে সুবাদেই জাতীয় দলে ডাক পান ডু প্লেসিস। তাঁর সবচেয়ে বড় অস্ত্রই ছিল তিনি ভীষণরকম ধারাবাহিক। নিয়ম করে রান করতেন। তাছাড়া তাঁর দৃষ্টিনন্দন শটেরও প্রশংসা হয়েছে নানা সময়ে। তার থেকেও বড় কথা, তিনি ছিলেন ইনিংস গড়ার অন্যতম সুচারু কারিগর।
প্রায় প্রতিটি ইনিংসে তিনি নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন। শুরুর দিকে অবশ্য মারকুটে ব্যাটার হিসেবেই ডু প্লেসিস বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন। টেস্ট অভিষেকের আগেই টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে যায় ফাফের। ব্যাট হাতে তিনি সর্বদা যেন একজন দলনেতা হয়েই বাইশ গজে সতীর্থদের সঙ্গ দিয়েছেন। আবার প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলোধুনো করেছেন।
তবে তিনি যে মারকাটারি হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন একজন ধৈর্য্যশীল খেলোয়াড়, সে প্রমাণ তিনি রেখেছেন বছর খানেকের মাথায়- অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অ্যাডেলেডে হওয়া দ্বিতীয় টেস্টের প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি প্রায় সাড়ে সাত ঘন্টা সময় কাটিয়েছেন বাইশ গজে। ৩৭৬টি বল খেলেছিলেন তিনি। সাদা পোশাকে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির দেখাও তিনি পেয়েছিলেন সে এক টেস্টে।
এরপর ভরসার জায়গায় পরিণত হতে আর বেশি বেগ পোহাতে হয়নি ফাফকে। তিনি বনে যান দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের পরিক্রমায় তাঁর নেতৃত্ব গুণের কারণে ফাফকে অর্পণ করা হয়ে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কের দায়িত্ব। ২০১৩ সালে তিনি সে দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। যদিও এর আগে কেবলমাত্র চারটি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। তবে তাতে খুব বেশি সমস্যার পড়তে হয়নি ফাফকে। তিনি ছিলেন বড্ড বেশি সাবলিল।
যেমনটা তিনি ব্যাট হাতে। দারুণ এক ব্যাটার হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। প্রকৃত একজন ব্যাটার ছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস। যিনি সময় বুঝে গিয়ার পরিবর্তন করতে পারতেন। প্রয়োজনে সময় নিয়ে অ্যাংকরিং করতেন তো কখনো হাতখুলে খেলতেন। এভাবেই প্রোটিয়াদের সাথে রেললাইনের দুই পাতের মত সমানতালে চলতে থাকে ফাফ ডু প্লেসিসের ক্রিকেট ক্যারিয়ার।
হঠাৎ করেই ঘটে ছন্দপতন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মনোযোগ দিত চাওয়ায় টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান ডু প্লেসিস। তবে সেটাই যেন সমান্তরাল রেলের পাতের ছন্দপতন। এরপর জাতীয় দল থেকে অনেকখানি দূরে সড়ে যান তিনি। প্রায় বছর দুয়েক তিনি রয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে। এমন প্রতিভাবান একজন ব্যাটারকে দলের রাখাটাই নিশ্চয়ই দৃষ্টিকটু। তবুও অজানা কারণে তিনি রয়েছেন দলের বাইরে।
তবে তাই বলে পারফরম করা বন্ধ করে দেননি ফাফ ডু প্লেসিস। তিনি বরং পৃথিবীর নানা প্রান্তের ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলো খেলে বেড়াচ্ছেন। নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন। আবার ডাক পেলেই যেন নিজের আলোয় আলোকিত করতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট।