১৯৮৪ সাল। গোটা ভারতে জরুরি অবস্থা চলমান। সেই মুহুর্তে সপরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন খুশি চিমা। পাঞ্জাবের ছোট্ট একটি গ্রাম চিমা খুর্দ থেকে ট্রেন চেপে দিল্লি, সেখান থেকে বিমানে চেপে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডার্ম।
সেই থেকে খুশি চিমার পরিবারের বসতি ডাচদের দেশে। কিন্তু সেখানেও জীবন বেশ কঠিন হয়ে দাড়ায় খুশি চিমার পরিবারের জন্য। সংস্কৃতির ভিন্নতা, ভাষার ভিন্নতা, বর্ণবৈষম্য এবং নিজেদের বেশভুষার জন্য বেশ কঠিন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।
খুশি চিমা সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একটা সময়য়ে গিয়ে স্বদেশের টান অনুভব করলেন। তখন ছেলে হারপ্রীত সিং এর কাছে ব্যবসা হস্তান্তর করে ভারতে ফিরে গেলেন। বিক্রমজিতের জন্মও বাবা-দাদার মতো সেই ছোট্ট গ্রাম চিমা খুর্দেতে এবং তাঁকেও সাত বছর বয়সে নেদারল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরিবারের মতো বিক্রমজিতকে অবশ্য সংকটের সম্মুখীন হতে হয়নি।
বিক্রমজিতের ধ্যানজ্ঞান ধীরে ধীরে ক্রিকেটে পরিণত হতে থাকলো। ক্রিকেটপাগল দেশ ভারতেই তো জন্মেছিলেন। এক্কেবারে ছোট্টবেলায় ভারতের মাটিতেই তাঁর ক্রিকেটে হাতেখড়ি। গ্রামের বাচ্চাদের সাথে দাপিয়ে বেড়াতেন।
নেদারল্যান্ড আসার পর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা বরং আরও বাড়লো। বাবা হারপ্রীত নিজেও প্রচণ্ড ক্রিকেট ভালবাসতেন। নেদারল্যান্ডসের স্থানীয় প্রতিযোগিতায় খেলতেন। বিক্রমজিতের বয়স তখন বারো। তখন তিনিও বাবার সাথে একই দলে খেলতে লাগলেন।
অনূর্ধ্ব ১২ পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতায় নেদারল্যান্ডসের তৎকালীন অধিনায়ক পিটার বোরেনের চোখে পড়েন বিক্রমজিৎ। পরে তাঁর অ্যাকাডেমিতে বিক্রমজিৎ অনুশীলন শুরু করেন। একটি ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছ থেকে একটি স্পনসরশিপও পেয়েছিলেন। যেটি শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং হরভজন সিং–এর মতো ক্রিকেটারদের জন্য ব্যাট তৈরি করেছিল।
মাত্র পনের বছর বয়সেই বিক্রমজিৎ ইতোমধ্যেই নেদারল্যান্ডস ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন। এর দুই বছর পর নেদারল্যান্ড জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে তাঁর। ফুটবল পাগল নেদারল্যান্ডসের মতো একটি দেশে পেশাদার ক্রিকেটার হওয়া মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়।
ক্যালেন্ডারের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল সেখানে ক্রিকেটের মৌসুম থাকে। তাই ক্রিকেটপাগল ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা হারপ্রিত সিং চণ্ডীগড়ের একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন প্রশিক্ষণের জন্য। বছরের ছয়মাস এই অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতেন।
ভারতে এসে স্বদেশের মায়ায় পড়ে গেলেন বিক্রমজিত। তাই খেলা না থাকলে ভারতে ফিরে আসেন তিনি। এখানে এসে দাদা-দাদীর সাথে সময় কাটান। আর বাকী সময় কাটান নেদারল্যান্ডে। নেদারল্যান্ড জাতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান বিক্রমজিত সিং।
মজার বিষয় হল সুপার টুয়েলভে ভারত-নেদারল্যান্ডের ম্যাচে বিক্রমজিত মাঠে নেমেছিলেন ডাচদের জার্সিতে। খেলেছেন মাতৃভূমির বিপক্ষে। যদিওবা নেদারল্যান্ডের জন্য আজ ব্যাট হাতে তেমন কোন ভূমিকাই রাখতে পারলেন না। শোনা যাচ্ছে এই ম্যাচে বিক্রমজিতের বাবা-দাদা সমর্থন করেছেন ভারতকে। আবার বাড়ির ছেলের প্রতিও আছে সমর্থন। এ তো এক দ্বৈত সমস্যা!