৩৬ বছর পর আরাধ্য বিশ্বকাপ জয়। আর্জেন্টিনায় তাই এ জয়োৎসব সহসায় শেষ হচ্ছে না। বুয়েন্স আয়ার্স থেকে রোজারিও, পুরো দেশটাই যেন এক ধরনের উৎসব নগরীতে পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিক এ বিশ্বকাপ জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে লাতিন আমেরিকার দেশটির প্রায় সিংহভাগ মানুষই ভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে সাজাচ্ছেন, ব্যতিক্রমধর্মী উদযাপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা নিজের শরীরে ট্যাটু আঁকিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্বকাপে মেসিদের আইকনিক সব মুহূর্তের প্রতিচ্ছাপ অঙ্কনে তাই বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ট্যাটু শিল্পীরা।
বুয়েন্স আয়ার্সের এক ট্যাটু শিল্পী, এস্তেবান ভুচিনোবিচের সুরে মিলল এমন সব মধুর ব্যস্ততারই কথা। এএফপি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, আগামী আরো দুই সপ্তাহ ধরে শুধু বিশ্বকাপ জয়ের সেলিব্রেশনের ট্যাটু আঁকা হবে। এ ছাড়া তিনি আরো বলেন, ‘আগামী বেশ কিছুদিনের কাজ এরই মধ্যে আমাদের বুক হয়ে গেছে।’
বুয়েন্স আয়ার্সের মানুষের উন্মাদনা কোন পর্যায়ে গেছে তা টেনে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে সাপ কিংবা মূর্তির ট্যাটুর বুকিং বেশি ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই সে সব ট্যাটুর রিপ্লেসে এখন তারা বিশ্বকাপ ট্রফি কিংবা মেসির আইকনিক মুহূর্তের ট্যাটু করিয়ে নিতে চাচ্ছে।’
ট্যাটু চাহিদায় এখন বিশ্বকাপ ট্রফি থাকলেও মেসি আর এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ট্যাটুর চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানান বুয়েন্স আয়ার্সের এ ট্যাটু শিল্পী। তিনি বলেন, ‘মেসি তো সব সময়ই জনপ্রিয় ছিল। তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জেতার পর এমি মার্টিনেজের ট্যাটুরও অনেক জনপ্রিয়তা বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মেসির আইকনিক সেলিব্রেশনের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোল করে দুই হাত কানে দেওয়ার ভঙ্গিমাটা বুয়েন্স আয়ার্সে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। এ ছাড়া অনেক মেসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্যাটু করিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে মেসি, এই ট্যাটুর চাহিদাও অনেক। এ ছাড়া ট্যাটুর তালিকায় ডি মারিয়ার ট্যাটু নিয়েও রয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা।’
আর্জেন্টিনার এক ফুটবল সমর্থক জানিয়েছেন, ‘সৌদি আরবের সাথে ম্যাচ হারার পরও একটা বিশ্বাস ছিল। তখনই একটা সংকল্প করি যে, আর্জেন্টিনা যদি বিশ্বকাপ জেতে, তাহলে বিশ্বকাপ ট্রফির একটা ট্যাটু করাব। ১৮ তারিখে আমরা জিতলাম। এরপর ট্রফির ট্যাটু করি।’
ট্যাটুকে অনেক ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের অলঙ্কার মনে করা হলেও বিশ্বকাপ জয়ের পরে আর্জেন্টিনায় এবার বয়স্ক নাগরিকরাও সেটির দিকে ছুটেছে। এরিয়েল সাচ্চি বলে একজন আর্জেন্টাইন, যিনি পেশায় শিক্ষক, তিনি ট্যাটু করিয়েছেন মেসির খেলা ৫ বিশ্বকাপের সম্মিলিত মুহূর্ত নিয়ে। যার মাঝখানে ছিল, বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু খাওয়ার মেসির সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি। তিনি বলেন, ‘মেসি আমাদের দীর্ঘ দিনের চাওয়া ফিরিয়েছে, আমাদের এ বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্তের উৎস সে। তাই তাঁর ছবির ট্যাটু আমি করিয়েছি।’
বুয়েন্স আয়ার্স কিংবা রোজারিও, আর্জেন্টিনার এ কূল থেকে ও কূল, সব মানুষেরই অভিব্যক্তি, উন্মাদনা জানান দিয়ে দেয় যে, একটা বিশ্বকাপের জন্য কতটা অধীর আগ্রহে তারা ছিল। লাতিন আমেরিকার দেশ গুলো এমনিতেই ফুটবল পাগল। আর এমন একটা দেশে যুগের পর যুগ ধরে বিশ্বকাপ আসেনি। হয়তো সেই সব অপেক্ষা এক সময় তাদের পেয়ে বসেছিল।
এ জন্য মেসিকেও কম কটুক্তি সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু নিজের শেষ অধ্যায়টায় মেসি নিজেকে নিয়ে গেলেন একদম শীর্ষে। নিজের পূর্ণতায় আর্জেন্টিনাতেও আলো ফিরিয়ে আনলেন। তাই বিশ্বকাপ পেরিয়ে যাওয়ার দিন সাতেক হয়ে গেলেও মেসি বন্দনার রেশ এতটুকুও কমেনি সে দেশটায়। বরং মেসি, আর্জেন্টিনা আর আর্জেন্টিনার মানুষ যেন মিলেমিশে একাকার দৃঢ় এক সুতোর টানে।