দলের মূল পেসারদের ইনজুরি আর ফর্মহীনতার সুবাদে নিজেদের বোলিং লাইনআপ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের। কিন্তু আকাশ মাধওয়াল একাই যেন ঘুচিয়ে দিয়েছেন সমস্ত ভাবনা। নিজের প্রথম আইপিএল খেলতে নেমেই তারকা বনে গেছেন এই তরুণ পেসার।
একটা সময়ে মুম্বাইয়ের পেস বোলিং মানেই ভাবা হতো জাসপ্রিত বুমরাহ। গত মৌসুমে জোফ্রা আর্চারকে দলে নেবার পর এই দুজনের জুটি দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা বিশ্ব। কিন্তু বুমরাহর ইনজুরি এবং আর্চার পুরোপুরি ফিট না থাকায় স্বপ্নভঙ্গ হয় ক্রিকেটপ্রেমীদের।
দুই তারকা পেসারকে হারিয়ে যেন দিশাহীন হয়ে পড়ে মুম্বাইয়ের বোলিং লাইনআপ। তারকাপুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার, আরশাদ খান কিংবা রমনদ্বীপরা সিংরা সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। অবশেষে আকাশ মাধওয়ালে এসে ভরসা পেয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
তরুণ এই পেসারও নিজেকে উজাড় করে দিয়ে পারফর্ম করছেন মুম্বাইয়ের জার্সিতে। জাসপ্রিত বুমরাহর অভাব ভুলিয়ে দিয়ে নিজেই হয়ে উঠছেন আগামীর বুমরাহ।
অথচ ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় আকাশ তেমন পরিচিত মুখ নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে টেপ টেনিসে খেলাতেই তাঁর আগ্রহ সীমাবদ্ধ ছিল বছর পাঁচেক আগেও। নেহায়েত শখের বসে ট্রায়াল দিয়ে গিয়েই প্রথম নজর কাড়েন ভারতের সাবেক তারকা ওয়াসিম জাফরের।
জহুরির চোখে হীরে চিনতে মোটেই ভুল হয়নি জাফরের, ঠিকই বুঝে যেন উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে বহুদূর যাবার সামর্থ্য আছে এই তরুণের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আকাশকে।
যদিও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে এই পেসারের। টেপ টেনিস আর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে লড়াইয়ের ব্যবধানটা টের পেয়েছেন প্রতিটি মূহুর্তে। তবুও হাল ছাড়েননি, চেষ্টাটা চালিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত। দুরন্ত গতি তো ছিলই, পাশাপাশি আয়ত্ত্বে এনেছেন নানা বৈচিত্র্য।
তবুও এত তাড়াতাড়ি আইপিএলে সুযোগ পেয়ে যাবেন এমনটা হয়তো নিজেও ভাবেননি আকাশ। গত মৌসুমেও সুরিয়াকুমার যাদবের ইনজুরির সুবাদে মুম্বাই স্কোয়াডের সাথেই ছিলেন। মাঠে নামতে না পারলেও অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে বিস্তর। এবারের মৌসুমের শুরুতে অবশ্য তাঁকে সরাসরি দলে ডাকাতে সমালোচনার কমতি ছিল না। তবে মাঠেই সবকিছুর জবাবটা দিলেন আকাশ।
আকাশের বোলিংয়ের মূল শক্তি তাঁর গতি। উমরান মালিকের মতো বুনো গতি না থাকলেও নিয়মিত ১৪০ কিমির বেশি গতিতে বল করতে জানেন এই পেসার। মূলত মুম্বাই তাঁকে ব্যবহার করছে ডেথ বোলার হিসেবে। ইনিংসের শেষের দিকে গতির পাশাপাশি বোলিংয়ে বৈচিত্র্য এনে এখনো পর্যন্ত দারুণ সফল এই তারকা।
আইপিএলের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন আকাশ। তবে সেরাটা বোধহয় জমিয়ে রেখেছিলেন নক আউট পর্বের জন্য। লখনৌ সুপার জায়ান্টসকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিলেন একা হাতে। তাঁর বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি লখনৌর কোনো ব্যাটার।
শুরুতে যেমন টপ অর্ডারের উইকেট তুলে নিয়েছেন, তেমনি শেষদিকে এসে ধসিয়ে দিয়েছেন মিডল অর্ডারও। কোন বাউন্ডারি হজম তো দূর, তাঁর ১৭ বলে কোনো রানই নিতে পারেনি লখনৌর ব্যাটাররা।
শেষ পর্যন্ত ৩.৩ ওভারে মাত্র পাঁচ রান দিয়ে শিকার করেছেন পাঁচ উইকেট। আকাশের এই বোলিং ফিগার এবারের আইপিএলের সেরা বোলিং তো বটেই, গোটা আইপিএল ইতিহাসের চতুর্থ সেরা।
খানিকটা দেরিতেই পা রেখেছেন আইপিএলের আঙ্গিনায়। তবে আকাশ বোধহয় এসব নিয়ে ভাবতে চাইবেন না, বরং ফর্মটা ধরে রেখে মুম্বাইকে শিরোপা জেতাতেই তাঁর যত মনোযোগ।