সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ও জনপ্রিয় টিভি কমেন্টেটর মাইকেল জোনাথন স্ল্যাটার। ১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭৪ টি টেস্ট ও ৪২ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নিয়েছেন সাবেক এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মাইকেল স্ল্যাটার দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তাঁর স্টাইলিশ ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংশৈলীর কারণে। তাঁর ট্রেডমার্ক শট ছিল ফ্রন্টফুট পুল।
রঙিন পোশাকের তুলনায় সাদা পোশাকের ক্রিকেটেই অধিক সফলতা পেয়েছেন স্ল্যাটার। ১৪ সেঞ্চুরি ও ২১ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪২.৮৩ গড়ে সংগ্রহ করেছেন ৫৩১২ রান। সে তুলনায় ওয়ানডেতে তেমন কিছুই করতে পারেননি। ব্যাটিং গড় মাত্র ২৪.০৭; হাফ সেঞ্চুরি নয়টি, কোন সেঞ্চুরি নেই।
মাইকেল স্ল্যাটারের একটা বদনাম ছিল যে, নব্বইয়ের কোটা পার করতে পারেন না। টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৩ বারের মধ্যে ৯ বারই শিকার হয়েছেন ‘নার্ভাস নাইনটিজে’র।
১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে অ্যাশেজ সিরিজের দলে তিনি প্রথম ডাক পেয়েছিলেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে। মার্ক টেলরের ওপেনিং পার্টনার হিসেবে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কুইন্সল্যান্ডের ম্যাথু হেইডেন।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অভিষেক টেস্টেই ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দারুণ একটি অর্ধশতক (৫৮) হাঁকিয়েছিলেন স্ল্যাটার। লর্ডসে পরের টেস্টেই পেয়ে যান প্রথম সেঞ্চুরি (১৫২)। অভিষেক সিরিজে ৪১.৬ গড়ে করেছিলেন ৪১৬ রান।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখেন। হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে খেলেন ১৬৮ রানের দারুণ একটি ‘ম্যাচ উইনিং নক’। তিন ম্যাচের সিরিজে ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৭৬.২৫ গড়ে তাঁর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩০৫ রান।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে ৬২৩ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন মাইকেল স্ল্যাটার। ৫ টেস্টের তিনটিতেই সেঞ্চুরি (১৭৬, ১২৪ ও ১০৩) হাঁকিয়েছিলেন তিনি।
পরের মৌসুমে পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পেয়ে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক (২১৯)। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের শেষ ম্যাচটা হয়েছিল সিডনিতে। সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে স্ল্যাটার খেলেছিলেন ১২৩ রানের একটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস; যেখানে অস্ট্রেলিয়ার দলীয় স্কোর ছিল ১৮৪।
এখানে না বললেই নয় যে, ওই ইনিংসে সর্বমোট দলীয় সংগ্রহের ৬৬.৮৪ শতাংশ রানই এসেছিল স্ল্যাটারের ব্যাট থেকে। এই একটা ইনিংসই পরিসংখ্যানবিদদের ১২২ বছরের পুরনো একটি রেকর্ড ঘাটতে বাধ্য করেছিল।
ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যানের অপরাজিত ১৬৫ রানের ইনিংসটি ছিল দলের মোট রানের ৬৭.৩৪ শতাংশ। ব্যানারম্যানের ঠিক পরেই জায়গা করে নেয় স্ল্যাটারের ১২৩ রানের ইনিংসটি।
মাইকেল স্ল্যাটারের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ইনিংসের মধ্যে রয়েছে ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৬, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬৯ এবং ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৩।
ক্রিকেট ছাড়ার পর মাইকেল স্ল্যাটার বেছে নিয়েছেন ধারাভাষ্যের পথ। ২০০৫ অ্যাশেজ থেকে ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় চ্যানেল নাইনে’র ধারাভাষ্য প্যানেলের সাথে যুক্ত আছেন তিনি।