ডাকাতের আক্রোশে পড়েছেন তিতে

প্রতিভায় পরিপূর্ণ এক স্কোয়াড, খেলোয়াড়দের বাজার মূল্যের দিকে তাকালে চোখ কপালে ওঠে, এদের প্রত্যেকেই আবার নিজেদের ক্লাবের তারকা – ব্রাজিল দলের ফুটবলারদের গল্পটা এমনই। প্রতিটা পজিশনেই আছে একাধিক সেরা ফুটবলার, তবে নামের ভারে এগিয়ে থাকলেও হতাশায় শেষ হয়েছে সেলেসাওদের ফুটবল বিশ্বকাপ মিশন। ষষ্ঠ বারের মত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাতারে পা রাখলেও ফিরে যেতে হয়েছে আক্ষেপ নিয়ে।

আর এই ব্যর্থতার জন্য ফুটবলারদের দায় যতটা না বেশি, তারচেয়ে বেশি দায় ব্রাজিলের কোচ তিতের, এমনটাই মনে করেন অধিকাংশ ফুটবল বিশ্লেষক এবং ভক্তরা। ব্যর্থতার দায়ভার মেনে নিয়ে অবশ্য নিজেই সরে গিয়েছেন তিতে; ২০২২ বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হতেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে চাকরি হারানোতেই শেষ হয়নি তাঁর দুর্ভাগ্য, এবার শিকার হতে হয়েছে ডাকাতির।

রিও ডি জেনেরোর রাস্তায় সকাল বেলায় হাঁটতে বের হয়েছিলেন তিতে। এরপরই তাঁর মুখোমুখি হয় এক ছিনতাইকারী, এ সময় সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি তিতের গলার চেইন ছিনিয়ে নেয় এবং একই সাথে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ব্যর্থতার জন্য ভর্ৎসনা করে এই কোচকে। তবে কোনরূপ শারিরীক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি এই ৬১ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানকে।

২০১৬ সালে তৎকালীন কোচ দুঙ্গা দায়িত্ব ছাড়ার পর লাতিন আমেরিকার জায়ান্টদের কোচ হিসেবে আবির্ভূত হন তিতে। তাঁর সময়কালে ২০১৯ সালে ব্রাজিল মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেও বিশ্বে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে নক আউট ম্যাচে টেকনিক্যালি বারবার পরাস্ত হয়েছেন এই কোচ। সর্বশেষ, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেও অতিরিক্ত সময়ে বদলি খেলোয়াড় নামানোর সময় ভুল করে বসেন তিনি; এরই খেসারত হিসেবে ম্যাচের শেষ দিকে গোল হজম করে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে, সেখানে কোন প্রতিরোধ ছাড়াই পরাজয় বরণ করে নিতে হয় নেইমার, ক্যাসেমিরোদের। এমন দু:সহ পরাজয়ের দুইঘন্টা পরই নিজের সরে যাওয়ার বার্তা দেন কোচ তিতে। তিনি বলেন, ‘আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমি এটি আরও দেড় বছর আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম যে ফলাফল যাই হোক এটিই আমার শেষ বিশ্বকাপ। এখন আর আমি কোন নাটক চাই না। অনেক ভাল ভাল কোচ রয়েছেন যারা পরবর্তীতে ব্রাজিলকে পথ দেখাতে পারবেন।’

ব্রাজিলের কোচিংয়ের দায়িত্ব ছাড়ার কিছু সময় পরেই মূলত অজ্ঞাত এই ছিনতাইকারীর ক্রোশের শিকার হয়েছেন তিতে। সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করলেও শিষ্যদের সাথে এই অভিজ্ঞ কোচের সম্পর্ক বেশ ভালোই। ব্রাজিল দল ছেড়ে যাওয়ার পর পরই বেশ কয়েকজন তারকা তিতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।

প্যারিস সেন্ট-জার্মেই তারকা নেইমার তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন যে, ‘আমি তোমাকে (তিতে) একজন কোচ হিসাবে জানতাম এবং জানতাম যে তুমি খুব ভাল। কিন্তু একজন ব্যক্তি হিসাবে তুমি অনেক বেশি দুর্দান্ত!’

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ের পর রিচার্লিসন, পাকুয়েতার সাথে সাম্বা ড্যান্সে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে তিতেকে। যদিও সেটি নিয়ে রয় কিনের মত কিংবদন্তি ফুটবলারও সমালোচনা করেছিলেন। তবে তিতে বলেন, ‘তাঁর নাতির বয়সী এসব ফুটবলারের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়তে যদি একসাথে নাচতে হয়, তিনি সেটাই করবেন। এতে প্রতিপক্ষের জন্য অসম্মানের কিছু নেই, এটাই আমাদের সংস্কৃতি।’

সাবেক করিন্থিয়ানস বস তিতে ব্রাজিল দলের কোচ হওয়ার পর থেকে গত ছয় বছরে ৮১টি ম্যাচে সাইড লাইনে ছিলেন। এ সময় ৬১টি ম্যাচেই জিতেছিলেন তিনি, ড্র করেছেন ১৩ বার। আর হারতে হয়েছে বাকি সাত ম্যাচে। তিতের অধীনে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা সেলেসাওরা ৩০ গোল হজমের বিপরীতে সব মিলিয়ে ১৭৪টি গোল করেছে। তবে দুঃখের ব্যাপার যে, সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহুর্তেই গোল পায়নি দলটির ফরোয়ার্ডরা।

তাই তো ২০১৮ সালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে আর ২০২২ সালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালেই শেষ হয়েছে হেক্সা জয়ের দৌড়। নতুন কোচের অধীনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলটির গোল খরা কাটবে কি না সেটিই এখন ভাবনার বিষয়। আপাতত ব্রাজিলের সম্ভাব্য কোচের তালিকায় আছেন ইউরোপ কাঁপানো কার্লো আনচেলত্তি, জোসে মরিনহোরা। যদিও আনচেলত্তি ইতোমধ্যে সেলেসাওদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link