চার বোলারের আত্মঘাতী বোমা!

বাংলাদেশ মাত্র চারজন নিয়মিত বোলার নিয়ে খেলেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোটা পূরণে হাত ঘোরানোর কাজটা করতে হবে অন্তত পাঁচ জনের। একজন এমনিতেই কম ছিল বাংলাদেশের। সে জায়গাটা পূরণের দায়িত্ব ছিল পার্টটাইমার সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেনের উপর।

বহু আকাঙ্ক্ষিত জয়। বহুকাল বাদে একটা জয় এসে ধরা দিল। সময়ের হিসেবে তা প্রায় দেড় দশক। ভাবুন তবে! এর মধ্যে কতকিছু গিয়েছে বদলে। শিশুরা পা রেখেছে যৌবনে। তাগড়া যুবকরা মধ্য বয়সের দিকে হাঁটা ধরেছে। সেবার সেই জয় দেখা অনেকেও নেই। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর ২০২২ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়। কতটা সময়!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিটা আসরে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কোন আসরেই বলার মত তেমন কোন পারফরমেন্সই নেই। মূল পর্বে এই আসরের জয় মিলিয়ে কেবল দুই জয়। অবশ্য অল্পের জন্য বাঁচা গিয়েছে। বোলারদের অভাবে ম্যাচটা হাতছাড়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তেই ছিল। নয় রানের জয়টা কষ্টার্জিত বলতেই হচ্ছে। বোলারদের অভাব হবার কারণটাও স্পষ্ট।

বাংলাদেশ মাত্র চারজন নিয়মিত বোলার নিয়ে খেলেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোটা পূরণে হাত ঘোরানোর কাজটা করতে হবে অন্তত পাঁচ জনের। একজন এমনিতেই কম ছিল বাংলাদেশের। সে জায়গাটা পূরণের দায়িত্ব ছিল পার্টটাইমার সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেনের উপর। সে দায়িত্বটা যে খুব ভাল ভাবেই পালন করতে পেরেছিলেন তাঁরা সেটা বলবার উপায় নেই। নেহায়েৎ ভাগ্য সহায় হয়েছিল আর দুর্দান্ত ফিল্ডিং- এই দুইয়ের মিশেলে জয়টা পাওয়া গিয়েছে।

প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস বলেই সম্ভবত এই ঘাটতি নিয়েও বাংলাদেশ ম্যাচটা জিততে পেরেছে। এখানে অবশ্য টাইগারদের এগিয়ে রেখেছিল অভিজ্ঞতা। বড় ম্যাচ খেলবার অভিজ্ঞতা খুব একটা তো নেই নেদারল্যান্ডসের। অবশ্য আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার চাইতেও মহাগুরুত্বপূর্ণ সাহসিকতা। সে সাহসটাই সম্ভবত বাংলাদেশ দেখাতে চাইছে। তবে আদৌ কি এই অপরিকল্পিত সাহসিকতা কোন কাজে আসবে?

বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। দলটা পূর্ণ মারকুটে ব্যাটারদের নিয়ে। ওপেনিংয়ে কুইন্টন ডি কক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই প্রমাণ করেছেন দুর্দান্ত বোলার না হলে তাঁকে থামিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। ব্যাটিং অর্ডারে থাকা রাইলি রুশো, ডেভিড মিলার, এইডেন মার্করামের মত ব্যাটাররা যেকোন বোলিং লাইনআপকে একেবারে নাস্তানাবুদ করে দিতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ভাল করেই জানা।

এখন প্রশ্ন জাগছে, এই বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধেও কি বাংলাদেশ চারজন বোলার নিয়েই খেলতে নামবে? সেটা বেশ আত্মঘাতি এক সিদ্ধান্তই হতে পারে। কেননা দলের অন্যতম আস্থাভাজন মোস্তাফিজুর রহমান ভুগছেন ফর্ম হীনতায়। উইকেটের মহৌৎসবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিনি ছিলেন উইকেট শূন্য। তাঁর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা নেহায়েৎ বোকামির শামিল। তিনি বা অন্য যেকোন নিয়মিত বোলার খারাপ করলে সেক্ষেত্রে একজন পার্টটাইম বোলারকে ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। সেদিক বিবেচনায় দলে পার্ট টাইম বোলারদের থাকাটা সমীচীন।

তাই বলে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ওভারের জন্য পার্টটাইমারদের উপর ভরসা করাটা হিতে-বিপরীত হতে পারে টাইগারদের জন্য। সেক্ষেত্রে দলে মেহেদি হাসান মিরাজ জায়গা করে নিতে পারে। বাংলাদেশের ব্যাটিংটাও খুব একটাভরসা-যোগ্য অবস্থানে নেই। সে বিবেচনায় একজন ব্যাটারের পরিবর্তে একজন বোলারকে দলে নেওয়াটাও হতে পারে বিপদজনক। সেদিক থেকে একজন অলরাউন্ডার হতে পারে যোগ্য বিকল্প। তবে সেক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্তই নিতে হবে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টকে।

নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুটা ভাল করলেও দলের স্বার্থে তাঁকে ছেটে ফেলা যেতে পারে। যেহেতু সৌম্য মিডিয়াম পেস করতে পারেন সেহেতু তাঁকে দলে রাখাটা হতে পারে লাভজনক। তবে এমন কিছু করতে না চাইলে বাংলাদেশকে বাদ দিতে হবে কোন একজন ব্যাটারকে। সেক্ষেত্রে ইয়াসির আলী রাব্বির কপাল পুড়তে পারে। তাছাড়া লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে শান্তকে পড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে অ্যাপ্রোন। তেমনটা হলে বাংলাদেশ দলে জায়গা পাওয়ার দাবিদার এবাদত হোসেন।

এসব কিছুই সম্ভাবনা। আসল পরিকল্পনা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ইতোমধ্যেই করে ফেলেছে। প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও চারজন বোলারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নেবে না হয়ত। তবে সব খোলাসা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে টসের পর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...