ক্রিকেট খেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো পিচ। ম্যাচের ফলাফল অনেকটা নির্ভর করে পিচের উপর। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচের উপর। পিচের উপর নির্ভর করে সব দল তাদের একাদশ সাজিয়ে থাকে।
আর এই পিচের উপরই নির্ভর করে ম্যাচে কারা আধিপত্য বিস্তার করবে। ব্যাটসম্যান না বোলাররা। এই উপমহাদেশের উইকেট সাধারণত স্পিন সমৃদ্ধ হয়ে থাক। আর এই ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরের উইকেটগুলোতে থাকে পেসারদের আধিপত্য। টেস্ট ম্যাচেই আসলে বোঝা যায়, উইকেটে কার প্রাধান্য থাকবে।
ক্রিকেটে ইদানিংকালে খুব বেশি বাজে উইকেটে দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বাজে উইকেট বলতে বোঝানো হয়, উইকেট হয়তো খুব বেশি স্পিন বান্ধব না হয় খুব বেশি পেস বান্ধব। স্পোর্টিং উইকেট বলতে যেটা বোঝায় সেটা পাওয়া আজকাল দুস্কর।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রিকেট মাঠে স্বাগতিক দলের আধিপত্য কমানোর জন্য ২০০৬ সালে মাঠ এবং পিচের জন্য একটি নিয়ম চালু করে। যাতে মাঠ এবং পিচের অতিরিক্ত সুবিধা না নিতে পারে। দুই দলই যেন সমান সংখ্যক সুবিধা পেতে পারে এর জন্যই এই আইন করেছেন আইসিসি। অন্যান্য দেশের মত ভারতীয় বিভিন্ন মাঠ এই আইনের কারণে ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছে।
- কানপুর, ২০০৭
কানপুর হলো ভারতের প্রথম ভেন্যু যেটা কিনা আইসিসির কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়েছিল। ২০০৭ সালে কানপুরে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এই টেস্টের উইকেট ছিল প্রচুর শুকনো এবং প্রচুর পরিমানে অপ্রত্যাশিত বাউন্স হচ্ছিল। এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জন্য টিকে থাকা ছিল খুব বেশি কঠিন। এই ম্যাচের ম্যাচ রেফারি রোশান মহানামা বলেছিলেন, এই উইকেট টেস্ট ম্যাচের যোগ্য না।
কানপুরে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচ শেষ হয়েছিল মাত্র তিন দিনে। আর এই ম্যাচে ভারত জয় লাভ করেছিল আট উইকেটে। এই উইকেট ছিল স্পিন বোলারদের জন্য একটি স্বর্গ।
- দিল্লী, ২০০৯
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম, যা আগে পরিচিত ছিল ফিরোজ শাহ কোটলা নামে। এই স্টেডিয়ামও নিষিদ্ধ হয়েছিল বাজে উইকেটের জন্য। এই মাঠে ২০০৯ সালে ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং শ্রীলঙ্কা।
কিন্তু এই উইকেটে ছিল প্রচুর অপ্রত্যাশিত বাউন্স। এই উইকেটে যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যও ছিল খুব কঠিন। আর এছাড়াও ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা ইনজুরিগ্রস্ত হয়ে মাঠ ছেড়েছিল। এই ম্যাচের ম্যাচ রেফারি অ্যালান হার্স্ট এই উইকেটকে ম্যাচ খেলার জন্য প্রস্তুত নয় বলে মাত্র ২৩.৩ ওভার খেলা হবার পর ম্যাচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মাঠ এবং উইকেট পরিদর্শনের পর আইসিসি এই মাঠকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে।
- নাগপুর, ২০১৫
বির্দভ ক্রিকেট অ্যাসোসিশন স্টেডিয়াম ভারতের অন্যতম স্পিন নির্ভর উইকেট। ২০১৫ সালে টেস্টে এই মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এই টেস্টের ম্যাচ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জেফ ক্রো। তিনি এই ম্যাচের উইকেটকে টেস্ট ম্যাচের জন্য অযোগ্য বলে অ্যাখা দিয়েছেন।
এই টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়েছিল মাত্র তিনদিনে। এই ম্যাচের উইকেটে ছিল বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত বাউন্স। যার কারণে উইকেটে ব্যাট করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যানই। এই টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন ভারতের দুই স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ভারতকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন অশ্বিন।
- পুনে, ২০১৭
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম,পুনেতে ২০১৭ সালে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। এই টেস্টও শেষ হয়েছিল মাত্র তিন দিন। এই ম্যাচের পর আইসিসি এই ম্যাচের উইকেটকে খেলার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছিল। এই ম্যাচের পর এই মাঠকে আইসিসি সতর্ক করে দিয়েছিল এই উইকেট বানানোর জন্য।
এই ম্যাচের কঠিন উইকেটেও লড়াই করার জন্য অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জেতার জন্য বেশ ভালো পুঁজি করেছিল। আর সাথে ম্যাচও জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।