অবিসংবাদিতভাবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ডিফেন্ডার বলা যায় তাঁকে, এমনকি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের তালিকা করা হলে ওপরের দিকেই রাখতে হবে তাঁকে – তিনি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। পুরোটা ক্যারিয়ার জুড়ে দলের গোলবার সামলেছেন তিনি, থামিয়ে দিয়েছেন অপ্রতিরোধ্য সব ফরোয়ার্ডকে। তবে ‘মৃত্যু’ নামক পরম সত্যকে থামানোর সাধ্য ছিল না তাঁর, ৭৮ বছর বয়সে ওপারে পাড়ি জমালেন এই কিংবদন্তি।
পার্কিনসন ও হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরেই শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে গত রবিবার পৃথিবীকে বিদায় বলেন; তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন পরিবারের সদস্যরা। একটি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি খুবই দু:খজনক যে আমাদের বাবা ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার গতকাল মারা গিয়েছেন। আমরা সবার কাছে বিতর্ক সৃষ্টি ছাড়া নীরবে শোক পালনের অনুরোধ করছি।’
একই সাথে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ব্যালন ডি’অর এবং বিশ্বকাপ জেতা ফুটবলারের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। আর এই মর্যাদার সংক্ষিপ্ত ক্লাবটির পুরনো সদস্য বেকেনবাওয়ার। বার্য়ান মিউনিখের হয়ে ১৯৭৩/৭৪ মৌসুমে ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি, একই বছর ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা তুলে ধরেছিলেন তিনি।
এর আগে ১৯৭২ সালে জার্মানির হয়ে ইউরো জিতেছিলেন, সেই সাথে নিজের করে নিয়েছিলেন ব্যালন ডি’অর। ডিফেন্ডার হয়েও দুই দুইবার এই পুরষ্কার জিতেছেন এই তারকা। এমন রেকর্ড আর কেউ ভাঙ্গতে পারবে সেই বাজি ধরার সাহস নেই তেমন কারোই।
শুধু কি তাই, খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ম্যানেজারের দায়িত্ব নেয়ার পর সেখানেও সফল হয়েছেন তিনি। জার্মান জাতীয় দলকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ আর বায়ার্নকে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বাদ। সবমিলিয়ে কোচ ও ফুটবলার হিসেবে সম্ভাব্য সব ট্রফি রয়েছে কাইসারের ক্যাবিনেটে; তাঁর মত বর্ণাঢ্য ফুটবল ব্যক্তিত্ব খুঁজতে যাওয়া তাই নেহাৎ বোকামি।
বায়ার্ন মিউনিখ আর জার্মানির এমন কোন অর্জন নেই যেখানে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের নাম লেখা হয়নি। জার্মান ফুটবলে তাই তাঁকে মানা হয় দেবতা; ইউরো জয়ী কোচ অটো রেহাগেল তো বলেই দিয়েছেন, কাইজার যদি বলে ফুটবল গোলক নয় বরং ঘনাকৃতি কোন বস্তু তাহলে পুরো জার্মানি সেটাই বিশ্বাস করবে।
শেষ বিদায়ের পরেও তাই জার্মানি সহ পুরো ফুটবল বিশ্ব মনে রাখতে বাধ্য হবে তাঁকে; মনে রাখতে বাধ্য হবে একজন সুইপার ডিফেন্ডারদের অদম্য মনোবল আর প্রতিরোধ স্পৃহাকে।