ফ্রেড ট্রুম্যান, সাবেক ইংলিশ পেসার। তাঁর এর চেয়েও বড় পরিচয় হল, তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট পাওয়া প্রথম বোলার। সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ট্রুম্যানকে রাখেন অনেকেই। ক্রীড়া সাময়িকী উইজডেনের ভাষ্যমতে, ‘সম্ভবত ইংল্যান্ড থেকে আসা সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার।’
পরিসংখ্যানও কিন্তু কথা বলে তাঁর হয়েই। ৬৭ টেস্টে মাত্র ২১.৫৭ গড়ে ট্রুম্যান নিয়েছেন ৩০৭ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট ১৭ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট চার বার।
টেস্টে কমপক্ষে ৩০০ উইকেট নিয়েছেন, এমন বোলারদের মধ্যে ট্রুম্যানের (২১.৫৭) চেয়ে ভালো বোলিং গড় আছে কেবল দুইজনের। দুইজনেই ফাস্ট বোলার। ম্যালকম মার্শাল ৩৭৬ উইকেট নিয়েছেন ২০.৯৪ গড়ে আর কার্টলি অ্যামব্রোস ৪০৫ উইকেট নিয়েছেন ২০.৯৯ গড়ে।
আর স্ট্রাইক রেট (৪৯) হিসেব করলে ট্রুম্যানের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন শুধু অ্যালান ডোনাল্ড (৪৭), ম্যালকম মার্শাল (৪৬), ওয়াকার ইউনিস (৪৩) ও ডেল স্টেইন (৪১)।
ট্রুম্যানের ছিল ক্লাসিক হাই আর্ম রিলিজ ও ইজি সাইড-অন অ্যাকশন। লম্বা রানআপে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে আসতেন বল হাতে। বাইশ স্টেপের লম্বা রানআপের গতিপথটা ছিল ঈষৎ বাঁকানো। শেষ স্টেপগুলোতে দৌড়ের গতি বেড়ে যেত ক্রমবর্ধমান হারে। ডেলিভারি স্ট্রাইড এবং ফলোথ্রু ছিল স্মুথ ও সাবলীল।
সাবেক ক্রিকেটার জন ওয়ারের ভাষায় ট্রুম্যানের রানআপটা ছিল, ‘curving and long but nicely modulated.’ বিখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক জিম কিলবার্নের ভাষায়, “long, accelerating run-up ending in a wide delivery stride with a “cartwheel” swing of the arms and a balanced follow-through.’
জেনুইন ফাস্ট বোলার হলেও ট্রুম্যানের বোলিংয়ে মূল অস্ত্র ছিল সুইং আর ভ্যারিয়েশন। তাঁর ন্যাচারাল মুভমেন্ট ছিল ‘predominantly away from the bat’ অর্থাৎ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য আউটসুইং। ট্রেডমার্ক ডেলিভারি ছিল মিডল স্টাম্পে পিচ করে অফ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ‘লেট অ্যাওয়ে সুইঙ্গার’। ইনসুইংও হত তবে কদাচিৎ; ইয়র্কার লেংথের ইনসুইঙ্গারগুলো ছিল আরও ভয়ংকর।
ঘাসের উইকেট বা গ্রিন টপে ট্রুম্যান ছিলেন অত্যন্ত ভয়ানক একজন বোলার। ক্লাসিক ‘হিট দ্য ডেক’ বোলিংয়ে পিচ থেকে পাওয়া সুবিধা কাজে লাগিয়ে ল্যাটেরাল সিম মুভমেন্ট ও এক্সট্রা বাউন্স আদায়ে তিনি ছিলেন দারুণ পারদর্শী। আর ছিল অফ কাটার ও স্লোয়ার বলের বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন। যার কারণে স্পিন সহায়ক ‘ডাস্টি’ পিচেও সমান কার্যকরী ছিলেন তিনি। কেবল এক্সপ্রেস গতি দিয়েই নয়; প্রয়োজনের সময় গতি কমিয়ে স্লোয়ার ও কাটারের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারেও প্রচুর উইকেট পেয়েছেন তিনি।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ইংলিশ ক্রিকেট দলের মূল শক্তিমত্তার জায়গা ছিল ফাস্ট বোলিং। পৃথিবীর সব জায়গাতেই তারা আধিপত্য বিস্তার লাভে সমর্থ হয়েছিল ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্ট্যাথাম আর ফ্রাঙ্ক টাইসনকে নিয়ে গড়া ভয়ংকর পেস আক্রমণের বদৌলতেই। ফ্রাংক ওরেলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর রিচি বেনোর পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে এই ‘তিন’ গ্রেট ফাস্ট বোলারের মিলিত ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
তিনজনের মধ্যে সবচাইতে দ্রুততম ছিলেন ফ্রাঙ্ক টাইসন; প্রলয়ঙ্করী গতির জন্য যাকে ডাকা হত ‘টাইফুন টাইসন’ নামে!
তিনজনের প্রত্যেকের বলেই যথেষ্ট গতি থাকলেও একেক জনের বোলিং স্টাইল ছিল একেক রকম। ট্রুম্যানের বৈশিষ্ট্য ছিল গতির সাথে সুইং ও স্লোয়ার বলের বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন। স্ট্যাথামের ছিল সুইংয়ের সাথে লাইন-লেংথের অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ ও অ্যাকুরেসি। আর টাইসনের প্রধান অস্ত্র ছিল দ্রুতগতির বাউন্সার ও ইয়র্কার।
১৯৫২ সালের ৫ জুন, হেডিংলিতে ট্রুম্যান তাঁর ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচটি খেলেন ভারতের বিপক্ষে। স্যার অ্যালেক বেডসারের সাথে জুটি বেঁধে বোলিংয়ের সূচনাটাও করেছিলেন তিনিই। ২১ বছরের তরুণ এই ফাস্ট বোলারকে খেলতে রীতিমত ঘাম ছুটে গিয়েছিল ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের। অভিষেক ম্যাচেই ট্রুম্যান নিয়েছিলেন পলি উমরিগড়, বিজয় হাজারে, বিজয় মাঞ্জরেকারের মত বড় মাপের ব্যাটসম্যানের উইকেট।
ভারতের প্রথম ইনিংসের ২৯৩ রানের জবাবে ইংল্যান্ড করেছিল ৩৩৪ রান। তবে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ! স্কোরবোর্ডে কোন রান যোগ না হতেই তারা হারিয়ে ফেলে চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের উইকেট! ‘নারকীয়’ সেই ধ্বংসযজ্ঞের নেতৃত্বটা দিয়েছিলেন ট্রুম্যানই। মাত্র ১৪ বলের ব্যবধানে ট্রুম্যান ৩টি আর বেডসার তুলে নেন ১টি উইকেট।
২.২ ওভারে ০/৪! আজ পর্যন্ত টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে শুরু এটাই।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ভারত শেষ পর্যন্ত করতে পেরেছিল ১৬৫ রান। ইংলিশদের টার্গেট দাঁড়ায় ১২৮ রান। মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় তুলে নেয় তারা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে (৩/৭৯ ও ৪/২৭) অভিষেকেই ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ট্রুম্যান।
লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আট উইকেটের আরও একটি অনায়াস জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। দুই ইনিংস মিলিয়ে ট্রুম্যান নিয়েছিলেন আট উইকেট।
১৯৫২ সালের ১৯ জুলাই, ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ভারতকে এক দিনে দুইবার অলআউট করে ইংল্যান্ড। পরাজয়ের ব্যবধান ছিল এক ইনিংস ও ২০৭ রান। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮.৪ ওভারের বিধ্বংসী এক স্পেলে ট্রুম্যান একাই নিয়েছিলেন ৮ উইকেট, ৩১ রানের বিনিময়ে। ভারত অলআউট হয় মাত্র ৫৮ রানে!
দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য মাত্র ১টির বেশি উইকেট নিতে পারেননি ট্রুম্যান। স্যার অ্যালেক বেডসার (৫/২৭) ও টনি লকের (৪/৩৬) বোলিং তোপে মাত্র ৮২ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। টেস্ট ইতিহাসে কোন দলের একই দিনে দু’বার অলআউট হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা।
ওভালে সিরিজের শেষ টেস্টটি পড়েছিল বৃষ্টির কবলে। পাঁচ দিনের মধ্যে তিনদিনই ভেসে যায় বৃষ্টিতে। ৩২৬/৬ রান তুলে ইংল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করলে ভারত আরও একবার অল আউট হয় একশ’র নিচে (৯৮/১০)। ভারতীয় ইনিংসে মূল হন্তারকের ভূমিকায় ছিলেন ট্রুম্যান (৫/৪৮) ও বেডসার (৫/৪১)। দু’বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ অভিষেক সিরিজেই মাত্র ১৩ গড়ে ট্রুম্যানের শিকার ২৯ উইকেট।
শুরুতেই অমন একটা অভিষেকের পরও ট্রুম্যান কিন্তু দলে থিতু হতে পারেননি, অধিনায়কের আস্থাও অর্জন করতে পারেননি সব সময়। কখনো ফর্মহীনতায়, কখনো বিতর্কে জড়িয়ে, আবার কখনো নির্বাচকদের অবহেলার শিকার হয়ে বেশ কয়েকবার দলের বাইরে যেতে হয় তাঁকে। সেসব না হলে এই ৩০০ উইকেটের কীর্তি তো তার আগেই হয়ে যাওয়ার কথা।
ট্রুম্যান তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ১৯৫৭-৬৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজটা ছিল ট্রুম্যানের কামব্যাক সিরিজ। নির্বাচকদের উপেক্ষার জবাবটা বেশ শক্ত হাতেই দিয়েছিলেন সেবার।
চার ম্যাচ খেলে মাত্র ২০ গড়ে ট্রুম্যানের শিকার ছিল ২২ উইকেট। তার মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ছিল, ট্রেন্টব্রিজের ফ্লাট ট্র্যাকে দুই ইনিংস মিলিয়ে নয় উইকেট প্রাপ্তি।
১৯৫৯-৬০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে প্রথম বারের মত টেস্ট সিরিজ হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ২১ উইকেট নিয়ে তাতে বিরাট অবদান রেখেছিলেন ট্রুম্যান।
১৯৬১ সালের অ্যাশেজ। হেডিংলির ‘ডাস্টবোলে’ রিচি বেনোর অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় ইংলিশরা। চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ট্রুম্যান একাই নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। বলের গতি কমিয়ে অফ কাটার ও স্লোয়ার বলের বৈচিত্র্য ব্যবহার করেছিলেন দারুণভাবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রুম্যানের বোলিং বিশ্লেষণ ছিল যথাক্রমে ৫/৫৮ ও ৬/৩০! যথারীতি ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন তিনিই।
১৯৬৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত হয় ব্রিটিশরা। তবে বল হাতে আরও একবার নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ‘ফিয়ারি ফ্রেড’। ওয়েস হল ও চার্লি গ্রিফিথের মত গ্রেট ফাস্ট বোলারদের টপকে হয়েছিলেন সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। মাত্র ১৭ গড়ে একাই নিয়েছিলেন ৩৪ উইকেট!
লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা পরিণত হয়েছিল রূদ্ধশ্বাস এক থ্রিলারে! ২৩৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দিনের শেষ ওভারে মাত্র ২ বল বাকি থাকতে ইংল্যান্ড হারায় ৯ম উইকেট। ডেভিড এ্যালেনের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান ডেরেক শ্যাকলটন।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ‘প্লাস্টার মোড়ানো’ ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েন কলিন কাউড্রে। অবশ্য একটি বলও খেলতে হয়নি তাঁকে; ছিলেন নন স্ট্রাইকিং এন্ডে। ওয়েস হলের শেষ দুটো বল কোনমতে ঠেকিয়ে ড্র নিশ্চিত করেছিলেন ডেভিড অ্যালেন। ব্যাট হাতে মাত্র ১০ রান করলেও ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ট্রুম্যান।
এজবাস্টনে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ট্রুম্যান করেছিলেন তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ১১৯ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। স্যার গ্যারি সোবার্সের মিডল স্টাম্প উপড়ে ফেলা বলটা ট্রুম্যানের মতে, তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ডেলিভারি! অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে থেকে লেট সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলটা ছিল দেখার মত।
১৯৬৪ সালের অ্যাশেজ। প্রথম ম্যাচ হেরে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ম্যানচেস্টারে হেরে যাওয়া টেস্টটা ট্রুম্যানকে দেখতে হয়েছিল মাঠের বাইরে বসে। ওভাল টেস্টে আবার ডাক পড়ল ৩৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসারের।
ওভাল টেস্ট শুরুর আগে, ট্রুম্যানের উইকেটসংখ্যা ছিল ২৯৭। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যখন বোলিংয়ের পালা এল, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ৬ উইকেটের একটাতেও ভাগ বসাতে পারেন নি। অবশেষে উইকেট পেলেন তৃতীয় দিন লাঞ্চের ঠিক আগে। তবে একটি নয়; একেবারে একজোড়া!
প্রথমে ইয়ান রেডপ্যাথের অফ স্টাম্প মাটিতে আছড়ে ফেললেন, পরের বলেই গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জিকে ক্যাচ বানালেন স্লিপে কলিন কাউড্রের হাতে। ট্রুম্যানের সামনে তখন হ্যাটট্রিক করে ৩০০ উইকেটের মাইল ফলক ছোঁয়ার অভিনব সুযোগ। কিন্তু সেটা হল না অল্পের জন্য! ট্রুম্যানকে তাই অপেক্ষা করতে হলো আরও এক ঘণ্টা।
লাঞ্চের পর অবশেষে এল সেই স্বর্ণালি মুহূর্ত। ট্রুম্যানের দারুণ একটি অফ কাটারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান নিল হক, এবারও বল গিয়ে জমা পড়ল স্লিপে কাউড্রের বিশ্বস্ত হাতে।
ম্যাচ শেষে ট্রুম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আর কেউ কি কখনও ভাঙতে পারবে এই রেকর্ড? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি যে উত্তরটা দিয়েছিলেন, ইতিহাসে অমর হয়ে আছে সেটাও। ট্রুম্যান বলেছিলেন, ‘যেই হোক না কেন, সে হবে ভীষণ ক্লান্ত একজন মানুষ।’
ট্রুম্যানের ছিল অবিশ্বাস্য স্ট্যামিনা, অ্যাথলেটিসিজম ও ফিজিক্যাল স্ট্রেংথ। বল করতে ক্লান্তি অনুভব করতেন না কখনও। বিরামহীন স্পেলে ওভারের পর ওভার টানা বোলিং করে যেতে পারতেন তিনি। বাবা ছিলেন খনি শ্রমিক, ছোটবেলায় কাজও করেছেন বাবার সাথে কয়লা খনিতে। পা জোড়া শুরু থেকেই তাই ক্লান্তিহীন চাপ নেওয়ার জন্য তৈরিই ছিল।
একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে ট্রুম্যানের ক্যারিয়ারকে বলা যায় ‘ইনজুরিমুক্ত’। খেলোয়াড়ি জীবনের ব্যাপ্তিকালটাও তাই বেশ লম্বা। ১৯৪৯ সালে শুরু, ১৯৬৯ সালে শেষ। কেবল ইয়র্কশায়ারের হয়েই কাউন্টি খেলেছেন টানা ২০ বছর! ১৮.২৯ গড়ে ২৩০৪ উইকেট নিয়ে পেয়েছেন কিংবদন্তির মর্যাদা।
১৯৭২ সালে ৪১ বছর বয়সে অবসর ভেঙে আবারও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাঁর সে যাত্রা। মাত্র ৭টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলে নেন ৬টি উইকেট।
ফ্রেড ট্রুম্যান কেবল একজন পেসারই ছিলেন না; ছিলেন তার চাইতেও বেশি কিছু। দুর্দান্ত ‘ক্লোজ ইন ফিল্ডার’ হিসেবেও প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছেন। বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগ ও লেগ স্লিপে ‘অ্যাক্রোব্যাটিক’ ক্যাচ নেয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি।
লোয়ার অর্ডারে ব্যাটের হাতটাও তাঁর মন্দ ছিল না। ৩টা ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি আছে; টেস্টে সর্বোচ্চ ৩৯। কিউই লেগ স্পিনার অ্যালেক্স মোইরকে টানা ৩ বলে ৩ ছক্কাও হাঁকিয়েছেন একবার। পঞ্চাশ ষাটের দশকের ক্রিকেটার হিসেবে (তাও টেইলএন্ডার ব্যাটসম্যান) টেস্টে ২৫ টি ছক্কা মারার রেকর্ডও যথেষ্ট অবাক করার মত।
অবসরের পর স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবেও ট্রুম্যান ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। বিবিসির রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকাতেও একটা সময় নিয়মিত দেখা গেছে তাঁকে। অনেকেই হয়ত জানেন না, ক্রিকেটের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে তাঁর ছিল অগাধ পান্ডিত্য। ক্রিকেট নিয়ে লেখালেখিও করতেন মাঝেমধ্যে।
জন আর্লটের লেখা ফ্রেড ট্রুম্যানের ওপর একটি আত্মজীবনী গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে যার নাম – ‘ফ্রেড: পোট্রেট অব অ্যা ফাস্ট বোলার’।
পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন ২০০৬ সালে, কিন্তু তার আগেই ট্রুম্যান দেখে গেছেন টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট পাওয়াটা কেমন সহজ হয়ে গেছে। ট্রুম্যানের চেয়ে কম টেস্ট খেলে ৩০০ উইকেট নেয়া বোলারের সংখ্যাই নয়জন। তাঁর জীবদ্দশাতেই ‘স্পিন জাদুকর’ মুত্তিয়া মুরালিধরন স্পর্শ করেছেন ৩০০ এর দ্বিগুণ ৬০০ উইকেটের মাইলফলক। ওয়ার্নের ৬০০, ৭০০; মুরালির ৭০০, ৮০০ উইকেট পাওয়া দেখলে কী বলতেন ট্রুম্যান?