পাড়ার খেলা নয়, এমন বাজে আউটফিল্ড বিশ্বকাপেই!

মাঠের ঘাস উঠে গিয়ে একটা পর্যায়ে সেখানকার আউটফিল্ডের চেহারা হয়ে উঠেছিল বেহাল দশা। যেন কোনো বিশ্বকাপের আসর নয়, স্থানীয় কোনো ম্যাচের মতো আয়োজনের বন্দোবস্ত করে ধর্মশালায় চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপের ম্যাচ। 

সমস্যা, উদ্বেগ কিংবা হতাশার নাম যখন আউটফিল্ড। দেখে বুঝার উপায় নেই, মঞ্চটা বিশ্বকাপের। বাংলাদেশ-আফগান মহারণে ম্যাচের দৃশ্যপট যতটা সামনে আসলো, তার চেয়েও দৃষ্টিকটুভাবে বারবার নজরে পড়লো ধর্মশালার আউট ফিল্ড। তাসকিন বল করছেন। তবে সেই বল ডেলিভারির চেয়ে দৃশ্যত হলো, রান আপের সময় আউটফিল্ড থেকে উড়তে থাকা ধুলোবালি।

তাসকিন নাহয় সেই ধুলোবালিকে সামলে বল করে গিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংসের সময় ফিল্ডিং করতে গিয়ে বড় ইনজুরির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন মুজিব উর রহমান। বাউন্ডারির প্রান্তে গিয়ে ডাইভ দিতে গিয়ে ঘাসে আটকে যায় মুজিবের পা। তাতে বড় একটা বিপদ ঘটতেই পারতো।

তবে বিপদ না হলেও, মাঠের ঘাস উঠে গিয়ে একটা পর্যায়ে সেখানকার আউটফিল্ডের চেহারা হয়ে উঠেছিল বেহাল দশা। যেন কোনো বিশ্বকাপের আসর নয়, স্থানীয় কোনো ম্যাচের মতো আয়োজনের বন্দোবস্ত করে ধর্মশালায় চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপের ম্যাচ।

ধর্মশালার এ আউটফিল্ড নিয়ে অবশ্য আগেই উদ্বেগ জানিয়েছিলেন আইসিসি’র পিচ পরামর্শদাতা অ্যান্ডি অ্যাটকিনসন। হিমাচলের ক্রিকেট কর্তাদের কাছে আউটফিল্ড নিয়ে প্রকাশ্যেই নিজের অসন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন তিনি। কারণ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বকাপের মাঠগুলো পরিদর্শন করতে যখন অ্যাটকিনসন ভারতে আসেন তখনই তাঁর চোখে পড়েছিল ধর্মশালার আউটফিল্ডের সমস্যা।

আউটফিল্ডের রিপোর্টে দেখা যায়, ধর্মশালার নতুন তৈরি আউটফিল্ডের অধিকাংশ অংশে চতুর্থ পর্যায়ের ছত্রাক সংক্রমণ হয়েছে। ফলে, সে সময়েই নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে আউটফিল্ডের ঘাস। এমতাবস্থায় এ রিপোর্ট দেখে অ্যাটকিনসন ধর্মশালার ম্যাচগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে সে সময় দেশের সেরা আউটফিল্ড তৈরি করা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হিমাচল প্রদেশের ক্রিকেট কর্তারা। কিন্তু, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে তার অগ্রগতি তো মেলেই নি, বরং খেলার চেয়ে বেশি ধুলাই দৃষ্টিগোচর হয়েছে বেশি।

আগামী ১০ অক্টোবর এই মাঠেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ধর্মশালায় বাংলাদেশের দুটি ম্যাচ বাদে নিউজিল্যান্ড দুটি, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া একটি করে ম্যাচ খেলবে। এখন এই মাঠে বাকি চারটা ম্যাচে আউটফিল্ড সমস্যা আদৌ নিরসন হবে কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে, এই এক সমস্যার কারণেই চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের টেস্ট স্থানান্তরিত হয়েছিল।

কিন্তু বিশ্বকাপের মতো আসরে এমন একটা সমস্যা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কেন নজরে পড়লো না, সেটিই এখন প্রশ্নের বিষয়। যদিও জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিসিসিআই সচিব জয় শাহ সরেজমিনে ধর্মশালার মাঠ পরিদর্শন করেছিলেন। এরপরও তিনি কেন আউটফিল্ডের সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ নেননি, তা এখন উঠে আসছে প্রশ্নের কাঠগড়ায়।

যদিও এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই নানান সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছে বিসিসিআই। প্রথমত, কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাখা হয়নি এবারের বিশ্বকাপে। কেন রাখা হয়নি, তা নিয়ে কোনো বিবৃতিও এখন পর্যন্ত আসেনি। দ্বিতীয়ত, স্বাগতিক দেশ হয়েও ভারত ম্যাচ খেলছে টুর্নামেন্টের চতুর্থ দিনে। সব মিলিয়ে অনেক গোঁজামিল আর জোড়াতালি দিয়েই শুরু হয়েছে এবারের বিশ্বকাপ। উপমহাদেশের মাটিতে বৈশ্বিক আসর নিয়ে আয়োজকদের এমন উদাসীনতার উদাহরণ অবশ্য বেশ বিরলই বলা চলে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...