জাতীয় দলে নতুন নাম লেখানো যে কেউই এই দিনটার অপেক্ষায় থাকেন। এটা হল সেদিন, যেদিনে তাঁকে দলের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্নের মত ব্যাপার।
একালের ক্রিকেটে এমন অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণ বিকশিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলো তাঁদের মধ্যে ভবিষ্যতের কান্ডারিকে খোঁজা হচ্ছে। সে জন্য একটু একটু করে তাঁদের নানারকম দায়িত্ব দিয়ে ঝালিয়েও নেওয়া হচ্ছে।
তেমনই কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
- বেন স্টোকস
তিনি লাল বলে ইংল্যান্ডের সহ-অধিনায়ক। এটুকু বললেই বোঝা সম্ভব যে, তাঁর মধ্যে ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ড অধিনায়ককে দেখছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। তিনি এক টেস্টে জো রুটের পরিবর্তে ব্রিটিশ দলের অধিনায়কত্বও করেছেন।
আর পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে এটুকু বলা যায় যে – যেকোনো ফরম্যাটে এখন কেবল ইংল্যান্ড দলেই নয় বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার তিনি। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ে নায়ক, অ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টে খেলেছেন বিশ্ব কাঁপানো এক ইনিংস – বেন স্টোকস একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়েছেন। তবে, বেন স্টোকসের আচরণবিধি ইংল্যান্ডের দুশ্চিন্তার কারণ। যদিও, সময়ের সাথে সাথে পরিপক্ক হয়ে উঠছেন এই নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভুত ক্রিকেটার।
- শ্রেয়াস আইয়ার (ভারত)
ভারতের নবীন ব্রিগেডের কথা বললে, প্রথম যার নাম মাথায় আসে তিনি হলেন শ্রেয়াস। খুব তরুণ বয়সেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণ দেখা যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের হয়ে অধিনায়কত্ব করে তিনি ফাইনালও খেয়েছেন।
বড় ব্যাপার হল তিনি দিল্লী দলে সময় কাটানোর সুযোগ পান দলের মেন্টর রিকি পন্টিংয়ের সাথে। পন্টিংকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। অর্জনের দিক থেকে এই পন্টিং বিশ্বের ইতিহাসেরই সেরা অধিনায়কদের একজন।
একটু একটু করে এখন তিনি ভারতের সীমিত ওভারের অপরিহার্য্য সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) চাইলে ভবিষ্যতের অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।
- লিটন দাস (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের নেতৃত্বে এখন চলছে পালাবদল। ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায়ের পর নেতৃত্ব এখন তামিম ইকবালের হাতে। টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও টেস্টের মুমিনুল হক সৌরভ। তবে, এই কাঠামোতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) খুব লম্বা সময় পড়ে থাকবে না।
এক্ষেত্রে খুব ভাল একজন বিকল্প হতে পারেন লিটন দাস। বিশেষ করে, তাঁর বড় সুবিধা হল তিনি যে কোনো ফরম্যাটে নিজেকে আগাগোড়া মানিয়ে নিতে পারেন। কে জানে, শীর্ষ ক্রিকেটারদের অবসরের পর হয়তো অধিনায়ক হিসেবে তাঁকেই বেছে নেবে বিসিবি।
লিটনের ব্যাটিং ধারাবাহিকতা নিয়ে একটা সংকট ছিল। খুব নান্দনিক ব্যাটিং করলেও, বড় ইনিংসের অভাব ছিল। তবে, সময়ের সাথে সাথে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠছেন লিটন।
- শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ক্যারিবিয়ানদের বর্তমান দলের খুব কার্যকর এক ব্যাটসম্যান হলেন শাই হোপ। বিশেষ করে তিনি ওয়ানডেতে টপ অর্ডারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল ভরসা। শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান কিংবা আন্দ্রে রাসেলের পাওয়ার হিটিংয়ে এক সুতোয় বেঁধে রাখে শাইয়ের ঠাণ্ডা মেজাজের ব্যাটিং।
তিনি খুব বড় কোনো ক্রিকেটার নন। তবে, তাঁর ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলার গুনটা দারুণ। অধিনায়ক হিসেবে এটা চাইলে কাজে লাগাতে পারে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই)। আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যার খুব বেশি নামডাক নেই তাঁর পক্ষে ক্যারিবিয়ান দলকে বড় সময় অধিনায়ক হিসেবে সার্ভিস দেওয়া সহজ।
- টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড)
চাপের মুখে বড় ইনিংস খেলার দারুণ ক্ষমতা আছে নিউজিল্যান্ডের সহ-অধিনায়ক টম ল্যাথামের। ল্যাথামের হজন্য অধিনায়কত্ব অবশ্য নতুন কিছু নয়। কেন উইলিয়ামসনকে ব্যাটিং চাপ ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে যখনই বিশ্রামে রাখে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি) তখনই নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে টম ল্যাথামের ওপর।
আর সেই দায়িত্বও তিনি শতভাগ নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। এনজেডসি’র আচরণেই পরিস্কার উইলিয়াসনের পর দায়িত্ব পাবেন এই ল্যাথামই।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)
তিন ফরম্যাটেই পাকিস্তানের অধিনায়ক এখন বাবর আজম। তবে, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তৈরি করে রাখছে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। ক’দিন আগে বাবর আজমের ইনজুরিতে এই রিজওয়ানই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নেতৃত্বে দেন পাকিস্তানকে।
যদিও, পাকিস্তান দলের পারফরম্যান্স মোটেও আশাব্যঞ্জক ছিল না, তবে প্রশংসিত হয়েছেন রিজওয়ান। বিশেষ করে তাঁর ব্যাটিংয়ে পরিস্কার ছিল যে – সামনের থেকে নেতৃত্ব দিতে পারদর্শী এই রিজওয়ান।