গোল্ডেন বুটের সেরা ভাগিদার

ব্যক্তিগত অর্জনেরও বেশ বড় একটা মঞ্চই বলা যায় ফুটবল বিশ্বকাপকে। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের জন্য থাকে 'গোল্ডেন বল'। সেরা গোলরক্ষকের জন্য থাকে 'গোল্ডেল গ্লাভস'। ঠিক তেমনি ‘গোল্ডেন বুট’ নামক একটা পুরুষ্কার থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে তা সর্বোচ্চ গোলদাতার। বহু অপেক্ষার পর ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষে আয়োজিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ।

অধীর আগ্রহ। মরুর বুকে একটু খানি জলাধার খুঁজে পাওয়ার যে আকুতি বা অপেক্ষা ঠিক যেন তেমন। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আগ্রহ বা অপেক্ষা কোনটারই কমতি কখনোই হয় না। কেননা এটা তো ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। মাঠের প্রতিটা ইঞ্চিতে লড়াই হয় হাড্ডাহাড্ডি- পরিকল্পনার, ফুটবলীয় শৈলী আর গোলের। বিশ্বকাপের সেই স্বর্ণালী শিরোপা জয় করার লক্ষ্য থাকে সবার। সেটা নবাগত দল হোক কিংবা শিরোপা জয়ের শীর্ষে থাকা কেউ।

তবে ব্যক্তিগত অর্জনেরও বেশ বড় একটা মঞ্চই বলা যায় ফুটবল বিশ্বকাপকে। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের জন্য থাকে ‘গোল্ডেন বল’। সেরা গোলরক্ষকের জন্য থাকে ‘গোল্ডেল গ্লাভস’। ঠিক তেমনি ‘গোল্ডেন বুট’ নামক একটা পুরুষ্কার থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে তা সর্বোচ্চ গোলদাতার। বহু অপেক্ষা পর ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষে আয়োজিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব জুটবে কার কপালে তা নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা।

  • হ্যারি কেইন (ইংল্যান্ড)

২০১৮ বিশ্বকাপে ছয় গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’ নিজের করে নিয়েছিলেন হ্যারি কেইন। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক পানামার বিপক্ষে হ্যাট্রিক করার পাশাপাশি তিউনেশিয়ার বিপক্ষে দুই খানা বল জড়িয়েছিলেন জালে। স্বাভাবিকভাবে এই স্ট্রাইকারই থাকছেন ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের গোল্ডন বুট জয়ের দৌড়ে সবার আগে। সাম্প্রতিক পারফরমেন্সও তাঁর পক্ষেই কথা বলে। নিজের সেরা ছন্দে থাকতে পারলে হয়ত আবারও তিনি জিতে নেবেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স)

মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে খেলতে নেমেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। শুধু খেলতে নামেননি জিতেও নিয়েছিলেন তিনি বিশ্বকাপ। সেবারের বিশ্বকাপ জয়ের যাত্রায় তিনি চার খানা গোল আদায় করেছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় আরও বেশি পরিপক্ক হয়েছেন এমবাপ্পে। ডি-বক্সের সামনে গোল করার সক্ষমতা বেড়েছে তাঁর। নিঃসন্দেহে তিনিও আজকের তালিকায় থাকা বাকি সবাইকে টেক্কা দেবেন ঠিকঠাক। বিশ্বকাপ যেমন রক্ষা করতে হবে তেমনি বনে যেতে হবে বিশ্বের সেরা।

  • করিম বেনজেমা (ফ্রান্স)

বয়সটা ৩৫ ছুঁইছুঁই। তবুও ইনজুরি মুক্ত করিম বেনজেমা ঠিক কতটা ভয়ংকর তাঁর সবটুকুই তো পুরো বিশ্বের জানা। রিয়াল মাদ্রিদকে প্রায় একাই টেনেছেন। সঙ্গ অবশ্য দিয়েছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তবে মোক্ষম সময়ে তাঁর পা থেকেই অধিকাংশ সময়ে এসেছে গোল। তাঁর মত ধূর্ত একজন গোল স্কোরার নিশ্চয়ই পায়তারায় থাকবেন বিশ্বকাপের বড় মঞ্চের সর্বোচ্চ গোলদাতা হবার। সেটা করে ফেললেই তো অর্জনের মুকুটে আরও এক পালক জুড়ে যাবে তাঁর।

  • লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)

২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। একা মেসির উপর ভর করেই তাঁরা সেবার ফাইনালটা খেলেছিল। যার স্বীকৃতিস্বরুপ গোল্ডেন বল জিতেছিলেন এই ফুটবল জাদুকর। তবে বিশ্বকাপটা তাঁর ছোঁয়া হয়নি সেবার। এবার আর্জেন্টিনা দলটা বেশ গোছালো, দলের রসায়নও জম্পেশ। খানিকটা নির্ভার হয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা নিশ্চয়ই খেলতে পারবেন মেসি। আর তেমনটা হলে ব্যক্তিগত সব অর্জন যে মেসি নিজের করে নিতে পারেন তা নিয়ে তো দ্বিমত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

  • ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)

আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই। বয়সটা বেড়েছে সে কথা সত্য। পাশাপাশি তাঁর সামর্থ্য কমেছে, সে সাথে কমেছে তীক্ষ্ণতা। তবে পর্তুগালের জার্সি গায়ে সব সময়ই যেন অন্যরুপে হাজির হন রোনালদো।

এবারের বিশ্বকাপ তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ। সেদিক বিবেচনায় তিনি নিশ্চয়ই নিজের একটা ছাপ ফেলে রেখে যেতে চাইবেন তিনি। আর গোল্ডন বুট জিতে নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের হালখাতায় নতুন করে আঁকিবুঁকি নিশ্চয়ই করতে চাইবেন ক্রিশ্চিয়ানো।

  • নেইমার (ব্রাজিল)

হেক্সা জয়ের স্বপ্নে বিভোর গোটা ব্রাজিল। বরাবরের মতই ব্রাজিলের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন নেইমার। ইনজুরি জর্জরিত ক্যারিয়ার, তবুও নেইমার গেল এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্রাজিলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।

প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়ে ভাল সময়ই পার করছেন তিনি। পূর্ণ ফিট হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে যেতে পারলে তিনিও প্রতিযোগিতা করবেন গোল্ডল বলের জন্য সে কথা বলে দেওয়া যায় নির্দ্বিধায়। হেক্সা জয়ে তাঁর তো ভূমিকা রাখতে হবে সবচেয়ে বেশি।

  • মেম্ফিস ডিপাই (নেদারল্যান্ডস)

২০১৮ সালের ব্যর্থতার পর আবারও হয়ত নিজেদের গুছিয়ে নিতে চাইবে নেদারল্যান্ডস। আবার হয়ত লড়াই করতে চাইবে বিশ্বকাপের মঞ্চে। সেক্ষেত্রে তাঁদের প্রধান অস্ত্র হতে পারে বার্সেলোনার স্ট্রাইকার মেম্ফিস ডিপাই।

অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার বার্সেলোনা দলে নিয়মিত না হলেও, তিনি সুযোগ পেলেই পারফর্ম করে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হয়ত নিজের সেরাটা বিশ্বকাপের মঞ্চে উজাড় করে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে।

  • লাউতারো মার্টিনেজ (আর্জেন্টিনা)

ইতালিয়ান সিরি আ মাতাচ্ছেন আর্জেন্টিনার লাউতারো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের যাত্রায় তিনি হতে পারেন সম্মুখ ভাগের সেনানি। ডি-বক্সের আশেপাশে বল পায়ে বেশ ভয়ংকর মার্টিনেজ।

তাঁকে দিয়ে হয়ত গোল আদায় করিয়ে নেওয়ার কাজটা করে যাবেন লিওনেল মেসি। লাউতারো মার্টিনেজ নিজের ফর্মটা নিশ্চয়ই বজায় রাখতে চাইবেন। আর গোল্ডেন বুট তাঁর পায়েও পেতে পারে শোভা।

  • রোমেলু লুকাকু (বেলজিয়াম)

ইংল্যান্ডের ক্লাব চেলসি থেকে অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে ধারে ইন্টার মিলানে খেলতে গিয়েছেন রোমেলু লুকাকু। ইন্টার মিলানে তিনি ঠিকঠাক প্লেয়িং টাইম হয়ত পাবেন না। তবুও নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে লুকাকুকে।

বেলজিয়ামের সোনালী যুগের অবসান হয়ত ঘটতে পারে এবারের বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে। বেলজিয়ামের ফুটবলের ইতিহাসটা নিশ্চয় রাঙিয়ে যেতে চাইবেন লুকাকু ও তাঁর সতীর্থরা।

  • রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি (পোল্যান্ড)

ক্লাব বদলেছেন রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি। তবে ধার কমেনি এক বিন্দুও। বয়স বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে তাঁর গোলের ক্ষুধা। তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন পোল্যান্ডকে এবারের বিশ্বকাপের একটা ভাল অবস্থানে নিয়ে যেতে।

সেক্ষেত্রে তাঁকে গোল করতে হবে। আর সেটা তাঁর সবচেয়ে পছন্দের কাজ। সে কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলে তিনি হয়ত হতে পারবেন সর্বোচ্চ গোলদাতা এবারের বিশ্বকাপের আসরে।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...