Social Media

Light
Dark

আফসোস বুকে বিদায়ের ডাক

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সরে দাঁড়িয়েছিলেন অধিনায়কত্ব থেকে। ব্যাট হাতে সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজে ১৯৯ রানের দূর্দান্ত ইনিংস থাকলেও ব্যাট হাতে মোটেও ভালো সময় যাচ্ছিলো না সাবেক এই প্রোটিয়া অধিনায়কের। নিজের বাজে পার্ফরমেন্স, দলের শোচনীয় হার সব মিলিয়ে ৩৬ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন সাদা পোশাককে বিদায় জানানোর।

হ্যাঁ, বিদায়ই বলে দিলেন ফাফ ডু প্লেসিস।

কিছুদিন আগেই লঙ্কানদের বিপক্ষে মাত্র এক রানের জন্য নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক মিস করেন ডু প্লেসি। ১৯৯ রানে অনেকটা ভুল শটেই এক রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিলো তাকে। এর আগে এমন আক্ষেপের ঘটনার তালিকায় আরো ১০ ক্রিকেটারের নাম থাকলেও এর মধ্যে পরবর্তীতে ছয় জন ক্রিকেটার দেখা পেয়েছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির।

ডু প্লেসির সামনেও অবশ্য সেই আক্ষেপ ঘুচানোর সুযোগ ছিলো, তবে হঠাৎ করেই সাদা পোশাককে বিদায় জানিয়ে সেই আক্ষেপের রাস্তাটা বরং লম্বাই করলেন ৩৬ বছর বয়সী এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান।

সবশেষ ৫ ইনিংসে ডু প্লেসির রান ৮, ২৩, ১০, ১৭, ৫! মোট পাঁচ ইনিংসে মাত্র ৬৩ রান করেন তিনি! যা তার নামের পাশে বড্য বেমানান। লংকানদের বিপক্ষে ওই ১৯৯ রানের ইনিংস ছাড়া গত এক বছরে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বাজে সময় পার করেছেন তিনি। গত ২০২০ জানুয়ারি থেকে সবশেষ পাকিস্তান সিরিজ পর্যন্ত মোট ১২ ইনিংসে রান করেছেন মোটে ৩৬৪! ১৯৯ রানের ইনিংস বাদ দিলে ১১ ইনিংসে তিনি করেন মাত্র ১৬৫ রান। ১৯৯ রানের ইনিংস ছাড়া নেই কোনো ফিফটি, সর্বোচ্চ রানও মাত্র ৩৬! সাদা পোশাকে কতটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি এই পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট।

সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারে পতন খুব কমই হয়েছে তার। রান ক্ষরায় থাকলেও সেই অবস্থা থেকে দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারতেন তিনি। ২০১২ সালে টেস্ট অভিষেকের বছরেই ছিলেন সেরা ফর্মে। মাত্র ৪ ইনিংস খেলে সবছর ১৪৬ গড়ে করেছিলেন ২৯৩ রান। ২০১৩ সালে গড় কিছুটা কমে নেমে আসে ৪৩-এ! সে বছর ১২ ইনিংসে করেন ৪৮৯ রান। ২০১৪ সালেও কাছাকাছি গড়ে ধরে রেখেছিলেন ফর্মটা, তবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়টা পার করেন ২০১৫ সালে। ১২ ইনিংসে ১৬ গড়ে মাত্র ২০১ রান করে সে বছর সাদা পোশাকে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় ছিলেন তিনি। তবে পরের বছরই রান ক্ষরা কাটিয়ে আবারো ফর্মের তুঙ্গে উঠেন ফাফ। ২০১৬ সালে ১৩ ইনিংসে ৫৬ গড়ে ৫৬৭ ও ২০১৭ সালে ৫৪ গড়ে ১৭ ইনিংসে ৫০৬ রান করে সেরা ফর্মে ছিলেন তিনি।

এরপর ২০১৮ সালে আবারো রান ক্ষরায় ছিলেন এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান! ২০ ইনিংসে ২৪ গড়ে মাত্র ৪৬৪ রান করে বেশ খারাপ সময়ই পার করেন তিনি। তবে তার নামটা যে ফাফ ডু প্লেসিস, রান ক্ষরা কাটিয়ে উঠতে তিনি যে পারদর্শী। পরের বছরই ২০১৯ সালে ৪৩ গড়ে সাত ইনিংসে ৩০১ রান করে আবারো ফর্মে ফেরেন তিনি। তবে এবারই যেনো এই উত্থান পতনের খেলা টা শেষ ছিলো! পরের বছর ২০২০ সালে লংকানদের বিপক্ষে ১৯৯ রানের ইনিংস ছাড়া সবশেষ পাকিস্তান সিরিজ পর্যন্ত ১১ ইনিংস মাত্র ১৬৫ রান করেন তিনি।

পতনের যে শুরুটা হয়েছিলো এবার আর সেটা থেকে উঠার চেষ্টা করেননি তিনি। দলের বাজে অবস্থা সাথে নিজের ফর্মহীনতা সব মিলিয়ে একটা মানসিক চাপে যে ভুগছিলেন তিনি সেটা তার হুট করেই সাদা পোশাকে অবসরের সিদ্ধান্তে বেশ স্পষ্ট।

টেস্ট ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ৬৯ ম্যাচে ১১৮ ইনিংসে ৪১৬৩ রান করে তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে করা ১৯৯ রানের ইনিংসটিই সর্বোচ্চ। ৪০ গড় সাথে ২১ অর্ধশতক ও ১০টি শতক! সাদা পোশাকে প্রোটিয়া শিবিরে বেশ বড় স্তম্ভ ছিলেন তিনি।

ক্যারিয়ারে যতবারই ব্যাট হাতে আছড়ে পড়েছেন ততবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আবারো ফিরেছেন দাপটের সাথেই। এবারো পতন হয়েছিলো তবে এবার হয়তো নিজেই নিজের উপর ভরসা রাখতে পারেননি, পারেননি আবারো উঠে দাঁড়াতে, পারেননি মুখে হাসির রেখা এঁকে আবারো ২২ গজে সাদা পোশাকে দ্যুতি ছড়াতে। পারেননি বলেই হাল ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে।

বলা হয় টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্যের খেলা, সম্মানের লড়াই। তবে ফর্মহীনতায় ধৈর্য্য টাও হয়তো হারিয়ে ফেলেছেন ফাফ। তাই আর এই আক্ষেপের পথে বেশিদূর যেতে চাননি তিনি। সাদা পোশাকে বেশ উজ্জ্বল এই প্রোটিয়া খেলোয়াড়ের বিদায়ে হারিয়ে গেলো প্রোটিয়া শিবিরের এক অমূল্য রত্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link