ক্রিকেটটা নাকি ভদ্রলোকের খেলা। তবে মাঠে ক্রিকেটারদের অনেক কর্মকাণ্ডই বারবার বিতর্কিত করেছে খেলাটাকে। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরাবরই এগুলোকে সামলিয়েছে শক্ত হাতে। তবে ম্যাচ ফিক্সিং ক্রিকেটের আগে এক কলঙ্কের মত। লজ্জাজনক এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নামী অনেক ক্রিকেটারও। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো আসার পর এই ফিক্সিং চক্রের তৎপরতা যেনো আরো বেড়ে গিয়েছে।
আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটও এই ফিক্সিং রোধে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। তাঁদের তদন্তে বেড়িয়ে আসছে ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচ ও ক্রিকেটের সাথে যুক্ত আরো অনেকেই জড়িয়েছেন এই অপরাধে। এদের শাস্তির ব্যবস্থাও করেছে সংস্থাটি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসেই কয়েকজন ক্রিকেটার ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছেন ফিক্সিং ও ফিক্সিং সংক্রান্ত নানা বিষয়ে। তাঁদের নিয়েই এই ‘নিষিদ্ধ’ তালিকা।
- হিথ স্ট্রিক (জিম্বাবুয়ে)
এবছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিথ স্ট্রিকের নিষিদ্ধ হওয়া। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। দেশটি হয়ে তিনি ৬৫ টি টেস্ট ও ১৮৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে যথাক্রমে নিয়েছেন ২১৬ ও ২৩৯ উইকেট। এছাড়া ব্যাট হাতেও তাঁর ঝুলিতে আছে প্রায় পাঁচ হাজার রান।
ভারতের নিষিদ্ধ লিগ আইসিএলে আহেমাবাদ রকেটস এর হয়েও খেলেছিলেন তিনি। তবে এইবছর তাঁকে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ২০১৮ সালে তিনি আইপিএলে দলের ভিতরের তথ্য বুকিদের কাছে পাচার করেছিলেন। এছাড়া সেবছর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে-শ্রীলঙ্কা ত্রিদেশীয় সিরিজেও এই কাজ করেন তিনি। এছাড়া আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসে হিথ স্ট্রিকের বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে আট বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে জিম্বাবুয়ের এই কিংবদন্তিকে।
- দিলহারা লোকুহেত্তিগে (শ্রীলঙ্কা)
২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন এই পেসার। দেশটির হয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারয়ার ছিল মাত্র ৯ ওয়ানডে ও ২ টি-টোয়েন্টি এর। তাঁর অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচ ছিল ভারতের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও যুবরাজ সিং এর উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই বোলার। তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে আর প্রমাণ করতে পারেননি তিনি।
এবছর এপ্রিলে ৪০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারক ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। আরব আমিরাতে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ম্যাচ ফিক্সিং এ জড়িত থাকার অপরাধে এই শাস্তি পান লোকুহেত্তিগে।
- শাইমান আনোয়ার (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে খেলা অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শাইমান আনোয়ার। ২০১৫ সালে দেশটির হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। তবে তিনিও এই বছর পেয়েছেন আট বছরের নিষেধাজ্ঞা। ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের এক ম্যাচে ফিক্সিং এর চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
- মোহম্মদ নাভিদ (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
আরব আমিরাতের আরেকজন ক্রিকেটারও এবছর নিষিদ্ধ হয়েছেন। দেশটির এই অলরাউন্ডার ৩৯ টি ওয়ানডে ও ৩১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তবে স্বদেশী শাইমান আনোয়ারের মত তিনিও নিষিদ্ধ হয়েছেন একই কারণে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ম্যাচ ফিক্সিং এর সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। দুইজনই তাই একই দিনে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।
- নুয়ান জয়সা (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার এই পেস বোলার দেশটির হয়ে ৩০ টি টেস্ট ও ৯৫ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। টেস্ট ও ওয়ানডেতে তাঁর উইকেটের স্ংখ্যা ৬৪ ও ১০৮ টি। ডেকেন চার্জার্সের হয়েও মাঠে নেমেছিলেন এই ক্রিকেটার।
তাঁর সাথে বুকিরা যোগাযোগ করলেও তাই আইসিসিকে জানাননি তিনি। এই অপরাধের জন্য এইবছর তাঁকে ছয় বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।