সাতটি ব্যালন ডি’অর, ছয়টি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট, অগুনিত সব রেকর্ড আর ৩৮টি মেজর ট্রফি – লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারের অর্জন নিশ্চিতভাবেই ঈর্ষান্বিত করবে পেলে, ম্যারাডোনাদের মত কালজয়ীদেরও। তবে এমন সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারেও ছোট একটি অপ্রাপ্তি আছে মেসির, বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্বকাপ ট্রফি এখনো জিততে পারেননি তিনি।
প্রায় দেড়যুগের দীর্ঘ ক্যারিয়ারকে পরিপূর্ণ করার শেষ সুযোগ অবশ্য পেয়েছেন লিওনেল মেসি। কাতার বিশ্বকাপে তাঁর দল আর্জেন্টিনা পৌঁছে গিয়েছে ফাইনালে, ফ্রান্সকে হারাতে পারলেই আরাধ্য সোনালী ট্রফি হাতে উঠবে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকায় মেসির স্থান নিয়েও তখন থাকবে না বিতর্কের সুযোগ।
অতিমানবীয় সব মাইলফলকের মালিক লিওনেল মেসিকে পেলে, ম্যারাডোনা, ডি স্টেফানো, ক্রুইফদের মত কিংবদন্তির সাথে একই কাতারে রাখা হয়। বিশ্বকাপ ফাইনালে একটি জয় হয়তো তাঁকে এই এলিটদের সারি থেকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে। যদিও কেউ কেউ মনে করেন মেসি ইতিমধ্যে সবার উপরে চলে গিয়েছেন।
আর্জেন্টিনার বর্তমান কোচ লিওনেল স্কালোনি আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলে দিয়েছেন লিওনেল মেসি-ই ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়। তবে ইংলিশ তারকা অ্যালেন শিয়েরারের মতে, ম্যারাডোনা তাঁর বিশ্বকাপ সাফল্যের জন্য এগিয়ে আছেন। তবে এই সাবেক ফুটবলার জানিয়েছেন মেসি বিশ্বকাপ জিতলে তাঁর এমন ভাবনার পরিবর্তন ঘটবে।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার অ্যাসিস্ট থেকে গোল করা জর্জ বুরুচাগা মনে করেন, লিওনেল মেসি একটি প্রজন্মের সেরা ফুটবলার যেখানে কেবল মাত্র ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। এছাড়া এই আর্জেন্টাইনের কাছে বর্তমান প্রজন্মের তারকাদের সাথে কিংবদন্তিদের তুলনা করা অযৌক্তিক।
তাই তো বিশ্বকাপ ফাইনালের ফলাফল দিয়ে লিওনেল মেসিকে বিচার করতে ইচ্ছুক নন বুরুচাগা। ম্যারাডোনা, পেলে, ডি স্টেফানো এবং ক্রুইফদের সঙ্গে একইসাথে মেসিকে ফুটবলের সেরা মানছেন তিনি, বিশ্বকাপ জিতলে কিংবা হারলেও মেসির এই স্থানে পরিবর্তন ঘটবে না।
লিওনেল মেসিকে নিয়ে আলোচনা চলছেই; তিনি আলোচিত হওয়ার মতই ফুটবলার বটে। ইতোমধ্যে এলএম টেনের জার্সির চাহিদা পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙেছে। কিন্তু সেসবে মনোযোগ দেয়ার সময় কই তাঁর, লিওনেল মেসি এখন পুরোপুরি ডুবে আছেন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনাল ম্যাচটিই হতে যাচ্ছে মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি রেখা। আর শেষটা রাঙিয়ে রাখতে নিশ্চয়ই চেষ্টার কমতি রাখবেন না পিএসজি ফরোয়ার্ড।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে হৃদয় ভেঙেছিল আলবিসেলেস্তাদের; ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে টানা দুইবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও জিততে পারেনি মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ২০১৬ সালের ফাইনালে পেনাল্টি মিস করেছিলেন স্বয়ং লিওনেল মেসি, সেসময় ব্যথিত মেসি তুলে রেখেছলেন আকাশি-সাদা জার্সিটা। তবে অবসর ভেঙে ফিরেছেন তিনি, ফিরেছেন রাজার মত করেই।
২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার তৃতীয় হওয়ার পর ২০২১ সালে শিরোপা জিতে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কিছুই না জেতার আক্ষেপ সেদিন ঘুচে গিয়েছিল মেসির। এরপর থেকে অনেকটা নির্ভার হয়েই খেলেছেন তিনি; দেখা গিয়েছে মেসির সবচেয়ে সেরা রূপ। লাতিন আমেরিকার দলটিও হয়ে উঠেছে আরো পরিণত।
গোল, অ্যাসিস্ট আর পারফরম্যান্সের বিবেচনায় এটিই লিওনেল মেসির সবচেয়ে সফলতম বিশ্বকাপ আসর। এবারের আসরে পায়ের জাদুতে কত কত রেকর্ড ভেঙেছেন, গড়েছেন তিনি। আর্জেন্টিনা দলও অন্য অনেক সময়ের চেয়ে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। মেসির ক্যারিয়ারকে পূর্ণতা দিতে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল, এখন অপেক্ষা শুধুই নব্বই মিনিটের। এই নব্বই মিনিট নিজেদের সেরাটা দিতে পারলেই ক্ষুদে জাদুকরকে এক গ্র্যান্ড ফেয়ারওয়েল দিতে পারবেন ডি পল, আলভারেজরা।