হ্যান্সি ক্রনিয়ে, প্রোটিয়া মুকুটের ঝরে পড়া পালক

১৯৯০ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হয়ে বিশ্ব ক্রিকেট পটে আঁচড় কাটেন তিনি। তরুণ এই অধিনায়কের হাত ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে ভিন্নভাবে, হয়ে ওঠে সত্যিকারের চোখ রাঙানো এক শক্তি।

হ্যান্সি ক্রনিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট চিত্রের এক হারিয়ে যাওয়া শিল্পী। নেতৃত্ব গুণে অন্য এক বীর। মাঠের খেলায় দৃঢ়চেতা, বিচক্ষণ আর ব্যতিক্রমী এক চরিত্র।

জন্ম তাঁর ১৯৬৯ সালে। ১৯৯০ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হয়ে বিশ্ব ক্রিকেট পটে আঁচড় কাটেন তিনি। তরুণ এই অধিনায়কের হাত ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে ভিন্ন ভাবে, হয়ে ওঠে সত্যিকারের চোখ রাঙানো এক শক্তি।

এক শক্ত প্রতিপক্ষ-রূপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গড়ে তোলেন ক্রনিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা আগ্রাসী ধাঁচের খেলা শুরু করে ক্রনিয়ের রেসিপি মেনেই।

ক্রনিয়ের বদৌলতে জয় করে বেশ কিছু সিরিজ। ইতিহাস বলে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া বাদে প্রায় সব দলের বিপক্ষেই সিরিজ জিতে ক্রনিয়ে আমলের প্রোটিয়ারা।

অধিনায়ক ক্রনিয়ের ছায়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৮ টি ওয়ানডের ৯৯-টিতেই জয়লাভ করে। যা পরিসংখ্যানে ৭৩.৭০ শতাংশ জয়ের গল্প বলে। এ গল্পে তার ওপর নাম আছেন কেবল রিকি পন্টিং, ক্লাইভ লয়েডের মতো রাঘব বোয়ালের।

টেস্টেও হয়ে ওঠে শক্ত প্রতিপক্ষ। ক্রনিয়েকালীন প্রোটিয়া পাতে ছিল ২৭ খানা টেস্ট জয়। তবে অধিনায়ক ক্রনিয়ের সবচেয়ে বড় অবদান ১৯৯৮ সালের আইসিসি নক আউট ট্রফি জয়। প্রোটিয়া মুকুটে একমাত্র আইসিসির পালক আজও ওই একটাই।

খেলোয়াড় হিসেবেও মন্দ ছিলেন না এই অলরাউন্ডার। ১৮৮ ওয়ানডেতে ৩৮.৬৪ গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি রান তার ঝুলিতে। উইকেটও রয়েছে ১১৪ টি। ১৯৯৩-২০০০ সালের মাঝে রেকর্ড পরিমান ১৬২ ওয়ানডে খেলেন তিনি।

টেস্টেও, কিন্তু কম যাননি। ছয় ফুট চার ইঞ্চির ক্রনিয়ে ৬৮ টি ম্যাচ খেলেন লাল বলে। সংগ্রহ ৩৭১৪ রান ৩৬.৪১ গড়ে। ২৯.৯৫ গড়ে সাথে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট।

প্রোটিয়া ক্রিকেটপটে ক্রনিয়ে অধ্যায়ে চির ধরতে শুরু করে ২০০০ সাল থেকে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কলঙ্ক নেমে আসে। প্রোটিয়া এই বীর জড়িয়ে যান অন্ধকার এই জগতে। ম্যাচের তথ্য দিয়ে বাগিয়ে নেন অর্থ। ম্যাচের ফলাফলেও প্রভাব খাটানোর প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রোটিয়া ক্রিকেটের রাজপুত্তুর হয়ে ওঠেন লজ্জা আর কলঙ্কের প্রতীক। বিশ্ব তখনও এই অধ:পতন মেনে নিতে পারছিল না। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অধিনায়কের এ কেমন বিশ্বাসঘাতকতা।

সেই সুবাদেই কিং কমিশন আট-ঘাট বেধে তদন্তে নামে। ক্রিকেট পাড়া যে আশার আলো দেখে, তাও ছিল ক্ষণস্থায়ী। তারা সত্যিই ক্রনিয়ের পাপের ফিরিস্তি খুঁজে পান। ফলে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যান তিনি।

এক সময়ের ভরসার নাম ক্রনিয়ে হয়ে ওঠেন ঝড়ে পড়া এক ঘাতক। ক্ষমার পর ক্ষমা চেয়েও ক্রনিয়ে তাঁর আসন ফিরে পেতে ব্যর্থ হন। কালক্রমে তিনি পর্দার একেবারেই আড়ালে চলে যান।

সাবেক এই প্রোটিয়া বীরের জীবনের শেষটাও ছিল এক বিয়োগান্তক নাটক। ২০০২ সালের এক জুন চার্টার্ড প্লেনে চড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ওই সময়ই সব শেষ হয়ে যায়, ওটেনিকুয়া পর্বতমালায় বিধ্বস্ত হয় ক্রনিয়ের বিমান।

ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন মহিমার সাগরে। আর সেই অধ্যায়ের ইতি ঘটে ইতিহাস কাঁপানো জঘন্যতম এক ফিক্সিং অধ্যায় দিয়ে।

Share via
Copy link