বাঁকের মুখে দাঁড়ানো সেই ২০০১ সালের ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার কলকাতা টেস্ট। শুরু হয়েছিল ১১ মার্চ ২০০১ তারিখ, রবিবারে।
মাইকেল স্ল্যাটার-ম্যাথু হেইডেন-জাস্টিন ল্যাঙ্গার-ওয়াহ ভাইয়েরা মিলে প্রথম চার ঘন্টাতেই ১-০ এগিয়ে থাকা তিন টেস্টের সিরিজ পকেটে পুরে ফেলার ব্যবস্থা প্রায় পাঁকা করে ফেলেছেন। ইনিংসের ৭১.১ ওভারে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেছে ২৫২/৪।
পরের তিন বলেই তাদের ২৫২-৭ পিঁছলে যাওয়া দেখতে হবে, ইডেনে হাজির কেউই বোধহয় ভাবেন নি। ভুল বললাম, একজন কুড়ি বছর পেরনো তরুণ ভেবেছিলেন। তিনি হরভজন সিং, ঐ ইনিংসের শেষে যার বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ৩৭.৫-৭-১২৩-৭। তার সাত শিকার ছিলেন ম্যাথু হেইডেন, মার্ক ওয়াহ, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্ন ও জেসন গিলেস্পি।
সেদিন অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে ৭২ তম ওভারের পরের তিনটি বলে তাঁর সাফল্য ছিল এই রকম –
- ৭১.২: পন্টিং এলবিডব্লিউ – ৬।
- ৭১.৩: গিলক্রিস্ট এলবিডব্লিউ – ০।
- ৭১.৪: ওয়ার্ন ক রমেশ – ০।
ঐ হ্যাটট্রিকই সেদিন ছিল ঐ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দিকে প্রথম আঘাত।
যদিও চিত্রনাট্য ধরেই এগিয়ে ক্রিকেট বিধাতা তারপরে স্টিভ-গিলেস্পির ১৩৫ রানের নবম উইকেট জুটি এবং স্টিভ-ম্যাকগ্রার ৪৫ রানের দশম উইকেট জুটি অস্ট্রেলিয়াকে পৌঁছে দেবেন ৪৪৫-এ, স্টিভ করবেন ১১০। ১৭১-তে ভারতকে মুড়িয়ে দিয়ে ২৭৪ রানের প্রথম ইনিংস লিড দেবেন অস্ট্রেলিয়াকে। দ্বিতীয় ইনিংসেও ২৩২/৪ হয়ে যাবে ভারত।
তারপরে লেখা হবে উল্টো রথের চিত্রনাট্য। ফলোঅন করে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৭৪ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি হবে রাহুল-লক্ষ্ণণ মিলে, যাতে ২০ টি আর ৪৪ টি চার মারবেন তারা যথাক্রমে, ছয় মারা হবেনা একটিও। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮১, ম্যাচে ৩৪০ রান করবেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮০, ম্যাচে ২০৫ রান করবেন রাহুল দ্রাবিড়।
চতুর্থ দিন কোন উইকেট না হারিয়ে ভারত তুলবে ৩৩৫ রান, সারাদিন অবিচ্ছিন্ন থেকে যাবেন রাহুল-লক্ষ্ণণ। ৬৫৭/৭-এ দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করবে ভারত শেষ দিনে, অস্ট্রেলিয়াকে ৩৮৪ রানের জেতার টার্গেট দিয়ে। এবং ২১২ রানে গুটিয়ে ১৭১ রানে হেরে যাবে অস্ট্রেলিয়া, শেষতম সেশনে সাতটি উইকেট হারিয়ে। এবং আবার ছয়টি উইকেট লেখা থাকবে আজকের বার্থডে বয়ের নামের পাশে, যার বোলিং গড় হবে ৩০.৩-৮-৭৩-৬।
এবারের শিকার স্ল্যাটার, ল্যাঙ্গার, স্টিভ, পন্টিং, গিলেস্পি, ম্যাকগ্রা। শেষ দিন মাঠে থেকে দেখেছিলাম অধিনায়কের প্রশ্রয় পেলে কতটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে তার স্পিন বোলিং। যদিও ম্যাচে ৩৪০ রানসংগ্রাহক লক্ষ্মণ ম্যাচ সেরা হয়ে যান, ম্যাচে ১৩ উইকেট নেওয়া তাকে পিছনে ফেলে।
এই ম্যাচের লড়াইটাই আমার কাছে হরভজন সিং। পরে ২০১১‘র বিশ্বকাপ আর ২০০৭য় সালের কুড়িবিশ বিশ্বকাপ জেতা বা ২০০৩ সালে অল্পর জন্য বিশ্বকাপ না জেতাটা নয়। ১০৩ টি টেস্ট খেলে দুটি শতরান ও নয়টি অর্ধশতরানসহ ২২২৫ রান করা বা ৪১৭ টি উইকেট নেওয়াটা নয়।
২৩৬টি একদিনের ম্যাচ খেলে ১২৩৭ রান করা বা ২৬৯ টি উইকেট নেওয়াটা নয়। বা ২৮টি কুড়িবিশ ম্যাচ খেলে ১০৮ রান করা বা ২৫ টি উইকেট নেওয়াটাও নয়। ১৯৯৮-২০১৫, এই ১৭ বছরের টেস্ট জীবন, ১৯৯৮-২০১৫, এই ১৭ বছরের একদিনের ম্যাচের ক্যারিয়ার অথবা ২০০৬-২০১৬, এই ১০ বছরের কুড়িবিশ ক্যারিয়ারও নয়।
চল্লিশে চালশে না হতে দেবার লড়াইয়েই থাকুক ভাজ্জির।