ইংল্যান্ড থেকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতে ফেরার পর বিশ্রামেই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে জাতীয় দলের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরা। তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন একজন। তিনি, নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রায় প্রতিটা দিন তিনি এসেছেন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাম ঝড়িয়েছেন। তপ্ত গরম উপেক্ষা করে ক্রিকেটীয় সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং করেছেন। ক্লান্তিহীন এক ব্যাটিং মেশিনে যেন তিনি পরিণত হয়েছেন।
তবে প্রযুক্তির বিপ্লবে মেশিন হয় নির্ভুল। শান্ত তবুও মানুষ। তাইতো তিনি নিজেকে একেবারে ঘষে মেজে ক্ষুরধার করতে নিঙড়ে দিচ্ছেন নিজের সবটুকু। বাকি সবাই যখন খানিকটা গা এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করতেই ব্যস্ত, তখনও শান্ত দু’হাতে তুলে নিয়েছেন ব্যাট। নিজের দূর্বলতাগুলোর উপর পরিশ্রমের প্রলেপ এটে হতে চাইছেন ইস্পাত।
বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে অবশেষ নিজের সক্ষমতা আর সামর্থ্যের দৃশ্যায়ন করতে শুরু করেছেন তিনি। রাজ্যের সমালোচনা, নিন্দুকদের কটু কথা ট্রল আর বিদ্রুপের বন্যা পেরিয়ে হাসতে শুরু করেছে শান্তর ব্যাট। এত ত্যাগ আর তিতিক্ষার ফসল তো আর এমনি এমনি নষ্ট হতে দেবেন না তিনি। তাইতো পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়েছেন শতভাগ। নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষুধা তাকে পেয়ে বসেছে।
শান্ত একেবারে শুরু থেকেই নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। বয়সভিত্তিক দল থেকেই তার উপর বাড়তি নজর ছিল দেশের ক্রিকেটের সবার। সেই শান্ত জাতীয় দলের শুরুর দিকের চাপ সামলে নিতে একটু হিমশিমই খাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন কেটে যেতে শুরু করেছে। তিনি এখন দলের আস্থাভাজন এক ব্যাটারের পরিণত হয়েছেন।
না শুধু আস্থাভাজন ব্যাটারের পরিসীমায় তাকে আটকে ফেলাটা অন্যায় হয়ে যায়। তিনি তো ফিল্ডার হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা। একটু বাড়তি সাহস নিয়ে বলাই যায়, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডারদের একজন তিনি। সেদিক থেকেও তো দলকে বাড়তি ভরসা জোগান নাজমুল হোসেন শান্ত।
আবার আয়ারল্যান্ড সিরিজেই তিনি ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছেন বল হাতে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেই দারুণ খেলতে থাকা হ্যারি টেক্টররে উইকেট তুলে নেন। তাছাড়া তিন ওভারে বেশ শক্ত হাতে দমন করেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। মাত্র নয় রান খরচা করেন শান্ত। তাতেই ম্যাচ জয়ের কাজটা সহজ হতে শুরু করে বাংলাদেশের জন্য।
সুতরাং ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে, সব ক্ষেত্রেই শান্ত এখন দলের একজন মহাগুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবুও ব্যাট হাতে দলে এখনও তার রয়েছে স্বাধীনতা। কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জন অপেক্ষা রক্ষা করা কঠিন। শান্ত নিশ্চয়ই অবগত এই বিষয়টি নিয়ে। তাইতো ছুটির দিনগুলোতেও অলস সময় না কাটিয়ে তিনি নিজের ব্যাটার সত্ত্বার উন্নতিতে কাজ করে গেছেন।
পৃথিবীর কোন খেলোয়াড়ই হুট করে সাফল্য পেয়ে যায়নি। কঠোর পরিশ্রম করবার মানসিকতাই মানুষকে বড় করে তুলেছে। সেই মানসিকতা শান্তর মধ্যেও স্পষ্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেট তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের একটা ছাপ ছেড়ে যাওয়াই এখন তার পরিকল্পনা। সেজন্যই নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায়।