বাংলাদেশের চলমান পেস বোলিং বিপ্লবের নেতা যদি হন তাসকিন আহমেদ, তাহলে সেই বিপ্লবকে পরের ধাপে নিয়ে যাবার প্রধান কাণ্ডারি নি:সন্দেহে হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যত ধরা হয় তাকে। কেন সেটা ধরা হয় তা যেন ম্যাচের পর ম্যাচে বোঝাচ্ছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট কিংবা অন্য সব দারুণ পরিসংখ্যানও হয়তো হাসানের দারুণ পারফরম্যান্সের পরিচায়ক নয়। হাসানের প্রতিভা বা দলে তাঁর ভূমিকা বুঝতে হলে সূক্ষ্মভাবে চোখ রাখতে হবে তাঁর বোলিংয়ে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেকের পর থেকেই দ্যুতি ছড়াচ্ছেন হাসান মাহমুদ। ২০১৮ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসার পর থেকেই ছিলেন সবার নজরে। সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সিতে ২২ ম্যাচে ৩০ উইকেট হাসানের প্রতিভার পরিচায়ক নয় মোটেও।
প্রতিভার পাশাপাশি নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে বোলিং করার জন্য অন্য সবার চেয়ে কিছুটা হলেও আলাদা হাসান মাহমুদ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই নিজের মাথা খাটানো বোলিংয়ের চমৎকার প্রদর্শনী দেখালেন হাসান। আট ওভারে ১০৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনাই পায় আয়ারল্যান্ড। নাসুম ও মোস্তাফিজের করা প্রথম দুই ওভারেই ৩২ রান তুলে ফেলেন আইরিশরা।
পরের ছয় ওভারে তখন আইরিশদের প্রয়োজন ৭২ রান। দশ উইকেট হাতে নিয়ে সেই টার্গেট বেশ সহজই মনে হচ্ছিল আইরিশদের জন্য। ঠিক তখনই হাসান মাহমুদের হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আইরিশ দুই ওপেনার স্টার্লিং আর মার্ক এডায়ার তখন মারমুখী ভূমিকায়।
এডায়ারকে করা প্রথম বলটি হাসান মাহমুদ করলেন অফ স্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার বল। ব্যাট সুইং করলেও হাসানের স্লোয়ার ডেলিভারি ধরতে পারেননি এডায়ার। পরের বলটি হাসান মাহমুদ করতে চাইলেন ইন সুইঙ্গিং ইয়োর্কার। কিন্তু কিছুটা লো ফুলটস হয়ে বল ফেরত আসে হাসানের কাছেই।
তৃতীয় বলে আবারো নিজের ভ্যারিয়েশন দেখালেন হাসান। প্রথম বলে স্লোয়ার আর দ্বিতীয় বলে ইয়োর্কারের পর তৃতীয় বলটি করলেন লেগ কাটার। ১১০ কিলোমিটার গতিতে নেমে আসা সেই কাটার বুঝতেই পারেননি এডায়ার। এই বলেও বল ব্যাটে ছোঁয়াতে পারেননি এডায়ার।
প্রথম দুই ওভারে ৩২ রানের পর তৃতীয় ওভারের প্রথম তিনটিই ডট বল। এমন পরিস্থিতিতে তখন চাপে এডায়ার। ১১০ কিলোমিটার গতির কাটার থেকে চতুর্থ বলে ১৩৯ কিলোমিটার গতির নিখুঁত ইয়োর্কার, বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটারও সামলাতে হিমশিম খাবেন নিশ্চিতভাবেই। এডায়ারও পারলেন না, নিখুঁত সেই ইয়োর্কার উপড়ে ফেললো স্টাম্প।
আধুনিক পেস বোলিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ ভ্যারিয়েশন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখন খেলাটা অনেকটাই ব্যাটারদের। এমন পরিস্থিতিতে বোলারদের বাড়াতে হয় তাদের অস্ত্র ভান্ডার। গতি, সুইং,স্লোয়ার, কাটার, ইয়োর্কার; সব ধরণের অস্ত্রই আছে হাসানের ভান্ডারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে হলে এই অস্ত্র গুলো ব্যবহার করতে হবে মাথা খাটিয়ে। সেই সামর্থ্য যে দারুণ ভাবে আছে হাসান মাহমুদের তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ(বিপিএল), নিজের দুর্দান্ত ফর্ম টেনে নিয়ে যাচ্ছেন হাসান মাহমুদ। বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার, কিংবা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নেয়াটাও হাসান মাহমুদের সীমানা নয়। প্রতিভার যথাযথ বিচ্ছুরণ করতে পারলে আর নিজের ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারলে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের স্বপ্নের ৫০০ উইকেটে মাইলফলককেও একদিন ছাড়িয়ে যাবেন হাসান।