হিথ স্ট্রিক মরিয়া প্রমাণ করিলেন সেদিন তিনি মরেন নাই

হেনরি ওলোঙ্গারা এখন নিশ্চিন্ত হয়ে স্মৃতিচারণা করতে পারেন। কেউ হোয়াটস্যাপে নক করে তাঁদের ভুল ভাঙাবে না।

২৩ আগস্টের সেই খবরটা নিছকই গুজব ছিল। হেনরি ওলেঙ্গার এক টুইট ভুল বোঝাবুঝি হয়। জানা যায়, দিব্যি বেঁচে আছেন হিথ স্ট্রিক।

তবে, বিধাতা সেই সবুজ বাতি জ্বালালেন মাত্র ১৪টা দিনের জন্য। এবার সত্যি সত্যিই চলে গেলেন হিথ স্ট্রিক। তাঁর পরিবারই এই খবর নিশ্চিত করেছে।

হিথ স্ট্রিক মরিয়া প্রমাণ করিলেন সেদিন তিনি মরেন নাই। নশ্বর পৃথিবীতে তিনি নিজের শেষ নি:শ্বাসটা ত্যাগ করে ফেলেছেন। হেনরি ওলোঙ্গারা এখন নিশ্চিন্ত হয়ে স্মৃতিচারণা করতে পারেন। কেউ হোয়াটস্যাপে নক করে তাঁদের ভুল ভাঙাবে না।

খুব লম্বা হল না হিথ স্ট্রিকের আলোচিত ও সমালোচিত জীবন। ব্লাড ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধটা আর চালিয়ে যেতে পারলেন না এই পেস বোলিং গ্রেট। জীবন নদীর ওপারে চলে গেলেন মাত্র ৪৯ বছর বয়সেই। পেছনে রেখে গেলেন নিজের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার ও কিছু বিতর্ক।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে ইতিহাসে সর্বকালের সেরাদের একজন তিনি। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল – এই পাঁচটা বছর তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন আফ্রিকান দেশটিকে। খেলেছেন ৬৫ টি টেস্ট ও ১৮৯ টি ওয়ানডে।

আজও তিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে ১০০ টি টেস্ট উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার। ১২ বছরের লম্বা ক্যারিয়ার তাঁর অর্জনের শেষ নেই।

ব্যাট হাতেও লড়তে জানতেন স্ট্রিক। মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডারে ছিলেন দলের জন্য সম্পদ। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার রান করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারারেতে আছে তাঁর একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি।

১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচিতে টেস্ট অভিষেক। রাওয়ালপিন্ডিতে ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্টে নিজের জাত চিনিয়ে দেন স্ট্রিক। উইকেটহীন অভিষেকের পরের টেস্টে নেন আট উইকেট।

কাউন্টি ক্রিকেটেও ছিল স্ট্রিকের সরব উপস্থিতি। ২০০৫ সালে তিনি দুই বছরের জন্য ওয়ারউইকশায়ারের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেন। যদিও, ব্যক্তিগত কারণে ছেড়ে দেন ২০০৬ সালেই। ২০০৭ সালে যোগ দেন বিদ্রোহী ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল)।

সেখানেই তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে কোচ হিসেবে ছিলেন আরও আলোচিত। জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ডের কোচিং স্টাফ দলে ছিলেন। বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ ছিলেন বড় সময়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্স ও গুজরাট লায়ন্সের মত দলে ছিলেন।

যদিও, ক্রিকেট জীবনের সকল অর্জন তিনি বিসর্জন দিয়েছিলেন ২০২১ সালে। সেবার আট বছরের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। আইসিসিরি দুর্নীতি দমন বিধির চারটি ধারা ভঙ্গ করেছিলেন তিনি। তদন্তে প্রমাণিত হয়তো ২০১৭ ও ২০১৮ সালে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ফিক্সিং জনিত অনৈতিক কাজের সাথে নিজেকে জড়ান তিনি।

এমনকি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার সিরিজ চলাকালেও তিনি তথ্য পাচার করেছেন। তখন তিনি জিম্বাবুয়ে দলের কোচ ছিলেন। এরপর থেকেই স্ট্রিকের নামটা ছিল অন্ধকারে।

চলতি বছরের মে মাসে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। লড়াকু এই ক্রিকেটার এই লড়াইটায় আর পারেননি। বিধাতা তাঁর জীবনের স্টামড বলে দিয়েছেন একটু আগেভাগেই! ডিসিশন রিভিউ নিয়ে বাড়তি কিছু সময় টিকে গেলেন বটে – তবে তাতে শেষ রক্ষা হল না।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...