ক্রিকেটে কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর আস্থা রাখতে পারাটা খুব বড় ব্যাপার।
আপনি ঠিক কোন ব্যাটসম্যান বা বোলারের উপর আস্থা রাখবেন তা নির্বাচন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা বোর্ড যদি ঠিক ক্রিকেটার কে বাছাই করে তাঁর উপর লম্বা সময় বিনিয়োগ করতে পারেন তাহলে সেই ক্রিকেটাররাও দলকে প্রতিদান দেন। এটাই ক্রিকেটের সবচেয়ে মজার বিষয়। আপনার দলের সবচেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান ও শূন্য রান করে প্যাভিলয়নে ফিরতে পারেন। তাই বলে আস্থা হারানো যাবে না, বিশ্বাস হারানো যাবে না।
সবাই হয়তো সমানভাবে এই আস্থার প্রতিদান দেন না। আমরা আজ প্রতিদান দেওয়া কয়েক জনের গল্প শুনবো।
আজ আমরা এমন পাঁচ জন ব্যাটসম্যানের তালিকা করেছি যারা বেশ বড় সময় ধরে একদিনের ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তবে দল তাঁদেরকে সময় দিয়েছে, তাঁদের উপর বিশ্বাস রেখেছে। ফলে তারাও সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। দু:সময় কাঁটিয়ে ফিরে এসেছেন সেরাদের সেরা হয়ে। দলকে সার্ভিস দিয়েছেন লম্বা সময় ধরে।
- অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান ১৯৯২ বিশ্বকাপে তাঁর অভিষেক ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। তবে তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরির জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ৮ বছর। ২০০০ সালে ১৪৯ ম্যাচ পর তিনি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন। সেদিনও তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা এবং সেটি ছিল তাঁর ১৫০ তম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
অথচ এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। ২১৩ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে করেছেন ৬৭৮৬ রান। পরবর্তীতে কোচ হিসেবেও নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার।
- মোহম্মদ আজহারউদ্দীন (ভারত)
আমাদের তালিকার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহম্মদ আজহারউদ্দিন। ১৯৯০ সালে আজহারউদ্দিন তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন শ্রীলংকার বিপক্ষে। তারপর থেকে ৭ টি বছর আর কোনো ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পাননি এই ব্যাটসম্যান। ১৯৯৭ সালে আবারও সেই শ্রীলংকার বিপক্ষে তাঁর চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন।
তিনি ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন প্রায় ১৬ বছর। ৩৩৪ টি ওয়ানডে খেলে করেছেন ৯৩৭৮ রান। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর রয়েছে ৭ টি সেঞ্চুরি ও ৫৮ টি হাফ সেঞ্চুরি।
- কার্ল হুপার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
এই অলরাউন্ডার আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন প্রায় ১৬ বছর। ১৯৮৮ সালে ভারতের বিপক্ষে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি করার পর তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় ছয় বছর। ১৯৯৪ সালের আবার সেই ভারতের মাটিতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন কার্ল হুপার।
১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তিনি ২২৭ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। প্রায় ৩৫ গড়ে ৭ টি সেঞ্চুরিসহ করেন ৫৭৬১ রান।
- স্টিফেন ফ্লেমিং (নিউজিল্যান্ড)
নিউজিল্যান্ডের এই ওপেনার টানা ৫ বছর কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় ২০০৩ বিশ্বকাপ অবধি। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবার সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।
স্টিফেন ফ্লেমিং নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেন। ২৮০ টি ওয়ান্ডে খেলে করেন ৮০৩৭ রান। তাঁর ঝুলিতে আছে ৮ টি সেঞ্চুরি ও ৪৯ টি হাফ সেঞ্চুরি।
- মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কার এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যানেরও সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল পাঁচ বছর। ২০০১ সালে উইন্ডিজদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর পাঁচ বছর আর সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি। আবার ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
অথচ এই মাহেলাই শ্রীলংকা তো বটেই বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন।শ্রীলংকার তৃতীয় ও বিশ্বের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন ১০ হাজার রানের মাইলফলক। ৪৪৮ টি ওয়ানডে খেলে করেন ১২৬৫০ রান।