মোহাম্মদ সিরাজ ও কাঁঠালের আঠা

রাজ্য পর্যায় থেকে আইপিএল, সেখান থেকে জাতীয় দল, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া সফরের নায়ক – ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সিরাজের ক্যারিয়ারের ধাপগুলো এমনটাই ছিল। হায়দ্রাবাদের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের বেড়ে ওঠা সিরাজের জীবনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি ছিলেন তাঁর বাবা মোহাম্মদ গাউস। কিন্তু সিরাজের অটোচালক বাবা ছেলের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি।

রাজ্য পর্যায় থেকে আইপিএল, সেখান থেকে জাতীয় দল, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া সফরের নায়ক – ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সিরাজের ক্যারিয়ারের ধাপগুলো এমনটাই ছিল। হায়দ্রাবাদের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের বেড়ে ওঠা সিরাজের জীবনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি ছিলেন তাঁর বাবা মোহাম্মদ গাউস। কিন্তু সিরাজের অটোচালক বাবা ছেলের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি।

২০১৬-১৭ রঞ্জি ট্রফি টুর্নামেন্টে, হায়দ্রাবাদের হয়ে ১৮.৯২ গড়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন সিরাজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইপিএল মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ সিরাজকে ২ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে কিনে নেয়। পরবর্তী বছরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু তাঁকে দলে ভেড়ায়।

সিরাজ তাঁর প্রথম আইপিএল মৌসুমে আগামীর অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল ফাস্টবোলার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯ মৌসুমটা বাজে কেটেছিল তাঁর। নয়টি ম্যাচ খেলে পেয়েছিলেন মাত্র সাতটি উইকেট। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে তাঁর পারফরম্যান্স শঙ্কা জাগিয়েছিল তাঁর ভবিষ্যত্‍ নিয়েই! অনেক সমালোচনার স্বীকার হয়ে হয়েছিল সেই সময়টায় তাঁকে। এমনো শুনতে হয়েছে, ‘খেলা ছেড়ে দিয়ে বাবার সাথে গিয়ে অটো চালাও!’

২০১৯ সালের ব্যর্থতা ২০২০ আইপিএলে ঝেড়ে ফেলেন সিরিজ। পাশাপাশি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট দলে সুযোগ পান এই ক্রিকেটার। গ্যাবা টেস্টে পাঁচ উইকেট নিয়ে তিনি টেস্ট দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেন। তৃতীয় ভারতীয় পেসার হিসেবে গাব্বায় পাঁচটি উইকেট নেয়াড় কীর্তি গড়েন তিনি। তাঁর আগে এই মাইলফলক ছোঁয়া প্রথম প্রথম দুজন হলেন মদন লাল (১৯৭৭) ও জহির খান (২০০৩)

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তার ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল। যেখানে তিনি ১০ ওভারে ৭৬ রান দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক টি- টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটে তাঁর। টেস্ট ক্রিকেটে খুব সহজে মানিয়ে নিলেও সাদা বলের ক্রিকেটে এখনো শক্তপোক্ত হয়ে উঠতে পারছেন না সিরাজ।

যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে তিনি দুর্দান্ত ছিলেন। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই বছর, সিরাজ সাতটি ওয়ানডেতে ২৫.০৯ গড়ে, ৩১.৬ স্ট্রাইক রেটে এগারোটি উইকেট নিয়েছেন। তাঁর ইকোনমি রেট, যা তাঁকে অতীতে বেশ ভোগাতো, তা ২০২২ সালে এসে ৪.৭৫ এ দাঁড়িয়েছে।

পাওয়ার প্লেতেও ভালো বোলিং করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই বছর নেয়া এগারো উইকেটের মধ্যে সাতটিই প্রথম দশ ওভারের মধ্যে নিতে পেরেছেন। ২০১৯ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর থেকে, ভারত নিজেদেরকে পাওয়ারপ্লেতে সেরাটা উজাড় করে দেয়ার কৌশল নিচ্ছে। সিরাজ তার ডেথবোলিংয়েও যথেষ্ট উন্নতি করেছেনযা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সামনে এসেছিল।

যাইহোক এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, সাম্প্রতিক সময়ে সিরাজ আরও দারুণ সাদা বলের বোলার হয়ে উঠেছেন। তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের ঘাটতির জায়গায় কাজ করে ওয়ানডে ঘরানায় সেরাটা দিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারতীয় দল – টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই জিতেছে।

শেষ ম্যাচ, মানে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৪ রানে দুইটি উইকেট নেন সিরাজ। এর মধ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইট ওয়াশ করে, ওয়ানডে সিরিজটি ৩-০ ব্যবধানে জিতে নিলো ভারত। এছাড়াও এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও দুইই উইকেট নিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ মোহাম্মদ সিরাজ যে ব্যর্থ এই কথা বলার অবকাশ নেই। আশা করাই যায় মোহাম্মদ সিরাজ নিজেকে ঘষেমেজে শীঘ্রই ওয়ানডে ঘরানায়ও হয়ে উঠতে পারবেন ব্যাটারদের ত্রাস। হয়তো এই সিরাজই কাঁঠালের আঠা হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে একত্র করতে পারবেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...