ফিরে দেখা পিএসএল

ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান সুপার লিগের এ বছরের আসর। ষষ্ঠ এই আসরেও অংশ নিচ্ছে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গার নামে হওয়া ছয়টি দল। সেসব অবশ্য পুরনো কথা। ষষ্ঠ এই আসরের আগে আমরা বরং একটু পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করি।

ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান সুপার লিগের এ বছরের আসর। ষষ্ঠ এই আসরেও অংশ নিচ্ছে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গার নামে হওয়া ছয়টি দল। সেসব অবশ্য পুরনো কথা। ষষ্ঠ এই আসরের আগে আমরা বরং একটু পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করি।

ইতিহাস

পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এর জন্ম ২০১৫ এর সেপ্টেম্বর। ততোদিনে দুনিয়ায় আলোর মুখ দেখেছে আরও কিছু ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ। সে পথ ধরেই এ মাসেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রথমবারের মত পাকিস্তান সুপার লিগ আয়োজনের ঘোষণা দেয়।

নিয়মমাফিক লাহোরের জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে থ্রিডি লোগোও উন্মোচন করা হয় পাকিস্তান সুপার লিগের।  শুরুতেই লিগের প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে ওয়াসিম আকরাম ও রমিজ রাজাকে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর করে নেওয়া হয়। তিন বছর ধরে এই দুইজন কি করেছে সেটা অবশ্য একটা বিশেষ প্রশ্নের দাবি রাখে; কিন্তু পিএসএল দিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বেশ কিছু ক্ষেত্রে লাভবানও হয়েছে।

দল

শুরুতে পাকিস্তান সুপার লিগের দলসংখ্যা ছিল পাঁচ। দলগুলো ছিলো-ইসলামাবাদ ইউনাইটেড, করাচি কিংস, লাহোর কালান্দার্স, পেশোয়ার জালমি এবং কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্স। কিন্তু আয়োজকেরা শুরু থেকেই ছয় দলের কথা ভাবছিলেন। এটা স্বাভাবিকও। একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট পাঁচ দলের হলে সেখানে প্রতিদ্বন্দিতার ঝাঁঝ থাকেনা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাই ষষ্ঠ একটা দলের খোঁজ বেশ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিল।

পিসিবির এই ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’ এর প্রথম প্রাপ্তি হিসেবে কাশ্মিরের একটা দলের প্রস্তাবনা আসে। সেও প্রায় ২০১৭ সালের ঘটনা। কিন্তু কাশ্মিরের এই দলটার অন্তর্ভুক্তি কোন এক বিচিত্র কারণে পিসিবি নাকচ করে দেয়। ধারণা করা হয়, বিতর্কিত স্থানের নাম জড়িয়ে পিসিবি গ্লোবাল টুর্নামেন্টকে বিতর্কিত করতে চায়নি।

এরপর ২০১৮ সালে আবারও বেলুচিস্তানের নামে ষষ্ঠ একটা দলের নাম শোনা যায়। এমনকি সে দলের মালিকানা হিসেবে হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যাক্তি ঘোষণাও দিয়ে বসেন পিএসএলে দল দেওয়ার। তবে সেবার পিএসএলে দল কেনাবেচার ষষ্ঠ দলের জন্যে হাফিজুর রহমান ছাড়াও আরো অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, ষষ্ঠ দল হিসেবে পিসিবি যখন বেশ কিছু দলের নাম শর্ট-লিস্ট করে সেখানে দেখা যায় বেলুচিস্তান নেই!

সেসময়ের পিসিবির শর্ট লিস্টে ছিলঃ ফয়সালাবাদ, ফাতা, হায়দ্রাবাদ, ডেরা মুরাদ জামিল আর মুলতান। বেশ কিছু নিরীক্ষা শেষে পিসিবি মুলতানের অনুমোদন দেয় আর ‘মুলতান সুলতান’ পিএসএলের ষষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

ভেন্যু 

করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, মুলতান, পেশোয়ার, কোয়েত্তা: পাকিস্তানের ছয়টি ভেন্যুই মূলত ছয়টি দলের হোমগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যাবহার করার কথা ছিলো। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হওয়া এ খেলাতে নিজস্ব হোম গ্রাউন্ড না থাকলে আসলে খেলা চালানোটা মুশকিলও।

কিন্তু পিএসএলের প্রথম দিকে অবশ্য ম্যাচ আয়োজন করা হত আরব আমিরাতে। কারণ, নিরাপত্তার শঙ্কার কারণে বিদেশী খেলোয়াড়রা পাকিস্তানে আসতে চাইছিলেন না। তখনও পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরেনি। ফলে শুরুতে এই হোম ভেন্যুগুলো নামেই ছিলো।

টাইটেল স্পন্সর

টাইটেল স্পন্সর হিসেবে পিএসএলের জন্মলগ্ন থেকেই পিসিবির সাথে ছিল হাবিব ব্যাংক লিমিটেড বা এইচবিএল। তবে এইচবিএলের সাথে পিসিবির চুক্তি দুই রকম। প্রথম বার (২০১৬-২০১৮) তাঁদের সাথে চুক্তি ছিল বার্ষিক ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের। তবে পিএসএলের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে দ্বিতীয়বার চুক্তির সময় টাকার অঙ্কটা বেড়ে যায় প্রায় তিন গুণে। ২০১৯ এ হওয়া নতুন চুক্তি অনুসারে এইচবিএলের সাথে পিসিবির চুক্তি বার্ষিক ১৪.৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারে। তবে এইচবিএলের সাথে পিসিবির চুক্তি এ বছরই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

লাভ-ক্ষতি

পিএসএল দিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বেশ কিছু ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছে। বিদেশী ক্রিকেটারদের সাথে স্থানীয় ক্রিকেটারদের খেলানো, এটা তো আসলে কমন একটা লাভ। কিন্তু পাকিস্তান এর চাইতেও বড় লাভ করেছে নিজেদের দেশে ক্রিকেট ফিরিয়ে। পাকিস্তান নিজেদের দেশে ক্রিকেট ফেরাতে বেশ কিছু বছর ধরে চেষ্টা করলেও কোনরকম কোন লাভ হচ্ছিল না।

কিন্তু, পাকিস্তান সুপার লিগের প্রথম দিকে বেশ কিছু ম্যাচ যখন পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়া হয় সেখানে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়। তবে প্রথম দিকে নামী ক্রিকেটাররা পাকিস্তান যেতে অস্বীকৃতি জানালেও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পিছু হটেনি। তারা এরপরও পাকিস্তানে পিএসএল নিয়ে গেছে আর এতে যে লাভ হয়েছে সেটা তো দেখাই যাচ্ছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...