ক্রিকেট পাড়ার হারিয়ে যাওয়া এক আক্ষেপ কেনিয়া। এখন শুধু নামেই আছে দলটি। কিন্তু এক সময় আইসিসি ইভেন্টগুলোতে নিয়মিতই দেখা যেত আফ্রিকার এই দলটিকে। ১৯৮১ সালে আইসিসির কাছ থেকে আংশিক ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভ করে কেনিয়া ক্রিকেট।
এরপর ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় কেনিয়া। স্টিভ টিকোলো, থমাস ওদোয়ো, জিমি কামান্ডেদের সাথে কেনিয়ার স্বর্ণযুগের এক সারথী ছিলেন হিতেশ মোদি। ভারতের গুজরাটের বংশোদ্ভূত হিতেশ মোদি জন্ম নেন কেনিয়ায়। সেখানেই বেড়ে ওঠা, আর ক্রিকেটে পথচলা।
কেনিয়া ক্রিকেটের উত্থান-পতন সবকিছুই তিনি দেখেছেন! ২২ গজে মিডল অর্ডারে কেনিয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও ছিলেন যে তিনি। ভারতের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তিনি একাদশে ছিলেন। ওই বিশ্বকাপেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ‘অঘটন’ ঘটায় কেনিয়া! শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭৩ রানে হারিয়ে এক অঘটনের জন্ম দেয় কেনিয়া। ওই ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৬ রান করেন হিতেশ।
সে সময় মিডল অর্ডারে কেনিয়ার অন্যতম ভরসার নাম ছিলেন হিতেশ। হিতেশের ক্যারিয়ার জুড়ে আছে এক অনন্য ঘটনাও। ক্রিকেটে একই ম্যাচে বাবা-ছেলে একসাথে খেলার ঘটনা বেশ কয়েক বারই ঘটেছে। কিন্তু একই ম্যাচে ছেলে খেলছে আর বাবা আম্পায়ার এমন ঘটেছে কেবলই একবার!
১৩ আগস্ট, ২০০৬। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি কেনিয়া। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩৩ রানে ২ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে আসেন হিতেশ মোদি। ম্যাচে আম্পায়ারিং করছিলেন তাঁরই বাবা সুভাষ মোদি! সৈয়দ রাসেল ও মাশরাফি মুর্তজার আগ্রাসী বোলিংয়ে ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন কোণঠাসা কেনিয়া। এরপর দলীয় ৪৫ রানে মাশরাফির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন হিতেশ!
বোলিং প্রান্তের আম্পায়ার তখন সুভাষ মোদি। মাশরাফিসহ বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে নিজ ছেলেকেই আউটের সিদ্ধান্ত জানান সুভাষ! একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেখানে বাবা আম্পায়ার ও ছেলে ব্যাটসম্যান। তার উপর বাবাই কিনা আঙুল উঁচিয়ে আউট দিলেন ছেলেকে! সেদিন নাইরোবির জিমখানা ক্লাব গ্রাউন্ডে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হয় ক্রিকেট দুনিয়া।
বাবার সিদ্ধান্তে আউট হওয়া হিতেশের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচও ছিল সেটি! এরপর আর দলে সুযোগ পাননি তিনি। বয়সটাও যে তখন ৩৫! বাবার হাত ধরেই ক্রিকেটে আসা হিতেশের ক্যারিয়ারটাও শেষ হয় বাবার সিদ্ধান্তেই। আঙ্গুল উঁচিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে জানান দিয়ছিলেন ক্রিকেটে তোমার পথচলাটা এতটুকুই!
২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম কেনিয়ার ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে অভিষিক্ত হন সুভাষ! ছেলের সামনেই আম্পায়ার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা হয় সুভাষের।
১৯৯৬ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হিতেশের। জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ ছাড়া ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে! জিম্বাবুয়ের পর ভারতের বিপক্ষেই করেছেন সর্বোচ্চ ২ ফিফটিও।
১০ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে হিতেশ খেলেছেন ৬৩ ম্যাচ। ২৪ গড়ে ৫ ফিফটিতে করেছেন ১১০৯ রান! পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুব বড় মাপের কেউই নন হিতেশ। কিন্তু কেনিয়া ক্রিকেটের মাথা তুলে দাঁড়াবার দিনে মিডল অর্ডারে তাঁর দৃঢ় ব্যাটিং দলের জন্য ছিল আস্থার জায়গা! ১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০০৩ বিশ্বকাপ ছাড়াও ১৯৯৪ ও ১৯৯৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলেন হিতেশ।
২০০৪ সালে তৎকালীন কেনিয়ার অধিনায়ক স্টিভ টিকোলোর নেতৃত্ব বেতন-ভাতা নিয়ে বেশ কিছু ক্রিকেটার স্ট্রাইকে যান! যার দরুন সে সময়ে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান হিতেশ। কেনিয়ার হয়ে বেশ কিছু সময় অধিনায়কত্বও করেন তিনি। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেন। ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা পাননি কোনো ফিফটির!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পাঁচ বছর পর ২০০১ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হিতেশের। অবশ্য লিস্ট এ ক্রিকেটটা খেলছিলেন অনেক আগ থেকেই। নব্য দল আর সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে থাকায় ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি হিতেশের। ১২২ ম্যাচে ২৯ গড়ে করেছেন ৩১০৬ রান! যার মধ্যে ১৮ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।