হিটম্যান ‘হিট’ কাপ্তান

ব্যাটিংয়ে তিনি ‘আর দশজন প্রতিভাবানের মত’ থেকে ‘সম্ভাবনাময়’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন একটা সময়। সেখান থেকে ‘নেক্সট বিগ থিঙ’ – অত:পর ‘অতিমানবীয় তারকা’য় পরিণত হয়েছেন তিনি। আর কালক্রমে ‘হিটম্যান’ তকমা পাওয়া রোহিত শর্মা এখন অধিনায়ক হিসেবেও হিট!

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বরাবরই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বড় দল। তবে, শিরোপার জটটা তাঁরা খুলতে পারে ২০১৩ সালে এসে। মানে, ষষ্ঠ আসরে গিয়ে। সেখান থেকে শুরু করে মুম্বাই আজ এক অজেয় দল। আর রোহিত এখন ‘কিং লিডার অব আইপিএল!’

আট বছরের মধ্যেই তাঁরা পাঁচ বার শিরোপা ঘরে তুলেছে। এই সময়ে টানা দুই বছর কখনোই শিরোপা বঞ্চিত হয়নি মুম্বাই। চেন্নাই সুপার কিংসের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে আইপিএলের শিরোপা ধরে রাখলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। মহেন্দ্র সিং ধোনির পাশে অধিনায়ক হিসেবে নাম লেখালেন রোহিত শর্মা।

আসলে, বলা উচিৎ রোহিত শর্মা আদতে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ছাড়িয়েই গেছেন। ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হিসেবে খ্যাত ধোনির শিরোপা সংখ্যা যেখানে তিনটি, রোহিত শর্মার শিরোপা পাঁচটি। বলা যায়, ২০১৩ সালে যখন অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং পদত্যাগ করলেন, তখন এই রোহিতের ছোঁয়াতেই বদলে গেল আম্বানিদের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। সাধেই তো তাঁকে আর ‘কিং অব আইপিএল’ বলছি না।

এমনিতে ভারতীয় দলের হয়েও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে রোহিতের। বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দেওয়া হলেই ডাক আসে রোহিতের। সেখানেও তাঁর সাফল্য কম নয়। এই তো বছর দুয়েক আগে এই সংযুক্ত আরব আমিরাতেই তিনি এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছেন।

শিরোপা জিততে জিততে রোহিত শর্মা সত্যিকারের নেতাও হয়ে উঠেছেন। দিল্লীর বিপক্ষে রান তাড়া করতে নেমে সুরিয়া কুমার যাদব যখন তাঁর সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন, তখন তাঁর মুষড়ে পড়াটা দেখা গেছে। ম্যাচ শেষে বিজয়ের নিশ্বাস নিতে নিতেও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁর নিজেরই উইকেটের মায়া ত্যাগ করা উচিৎ ছিল। এই মানসিকতাটা একজন নেতার থাকা উচিৎ। অধিনায়ক তো অনেকেই আছেন, নেতা হতে পারেন ক’জন!

আইপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর সামর্থ্য তো বরাবরই অনবদ্য। সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ধোনির পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই ফাইনাল দিয়েই ২০০ তম ম্যাচ খেলে ফেললেন। এর মধ্যে ১১৬ টাই তিনি খেলেছেন অধিনায়ক হিসেবে। জয় ৬৮ টি ম্যাচে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি এই আসরে তাঁর চেয়ে বেশি জয় অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন আর মোটে দু’জন।

অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির সাফল্য নেহায়েৎ কম নয়। যদিও, আইপিএলে তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে যতটা সফল, অধিনায়ক হিসেবে ততটা নন। বড় কোনো শিরোপা জিততে পারে না – এই নিয়ে সমালোচিতও হয়। তাই, খোদ ভারতেই একটা পক্ষ এখন অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিত শর্মাকে অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চায়। সাবেক ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর তো বলেই দিলেন, ‘রোহিতকে সাদা বলের অধিনায়ক বানানো না হলে সেটা ভারতেরই ক্ষতি!’

রোহিতকে ভারতের পূর্ণকালীন নেতা হিসেবে দেখা যাবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও ডোয়াইন ব্রাভোর মত অনন্ত এটুকু বলা যায় – রোহিত ইজ আ চ্যাম্পিয়ন!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link