কেউ ব্যবসা করেন, কেউ চাকরি করেন, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন কিংবা কেউ আবার ফুড ডেলিভারিম্যান। বিভিন্ন পেশার এই মানুষদের নিয়ে একটা ক্রিকেট দল তৈরি করে ফেলা হলো। তাও আবার জাতীয় দল। সেই দলটা আবার জায়গা করে নিল এশিয়ার সেরা ছয় দলের মধ্যে। এত বড় মঞ্চ, এত বড় আসরে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া গেল ভারত-পাকিস্তানকে।
আপনি হয়তো বলবেন এতো বড়ই অবিচার। এমন অসম লড়াইয়ের মানে কী। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া লড়াইটা অসম ভাবলেও হংকং এর ক্রিকেটাররা একটুও ভাবেননি। বলা ভালো হংকং এর পার্টটাইম ক্রিকেটার। কেননা শুধু ক্রিকেট খেলে সংসার চালানোর মত অবস্থা এখনো হংকং ক্রিকেটের হয়নি।
ওদিকে ভারত, পাকিস্তান ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম দুই পরাশক্তি। এই দুই দেশেরই ক্রিকেট কাঠামো ভীষণ শক্তিশালী। তবুও মাঠের ক্রিকেটে চোখে চোখ রেখে লড়াই করলো হংকং। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও হংকং এর ক্রিকেটারদের ইনটেন্ট ক্রিকেট দুনিয়ার নজর কেড়েছে।
হংকং এর ক্রিকেটাররা সাহস দেখিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও। পাকিস্তান ও হংকং এর এই ম্যাচ যে জিতবে সেই যাবে সুপার ফোরে। এই ম্যাচে ক্রিকেট দুনিয়ার কেউই বোধহয় হংকং এর পক্ষে বাজি ধরবেনা। সেটাই স্বাভাবিক। তবুও মাঠে নামার পর থেকেই যেন মনে হচ্ছিল হংকং জেতার জন্য নেমেছে। শুধুমাত্র অংশগ্রহণ করার স্মৃতি নিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরতে চায়না। কিছু একটা করে দেখাতে চায়।
শারজাহ’র উইকেটে শুরু থেকেই চেপে ধরেছিল পাকিস্তানের ব্যাটারদের। প্রথম দশ ওভারে পাকিস্তান করতে পেরেছিল মাত্র ৬৪ রান। তবে এরপর আর রিজওয়ান, খুশদিলদের অভিজ্ঞতার সাথে পেরে উঠেনি হংকং। পাকিস্তান ১৯৩ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই এত বড় টার্গেট হংকং জয় করে উঠতে পারেনি। ইনিংসের শুরুতেই জোড়া আঘাত এনেছেন পাকিস্তানের নয়া সেনসেশন নাসিম শাহ। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৫ রান করতেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটা। এরপর বাকি কেউই ব্যাট হাতে লড়াই করতে পারেনি। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের বোলিং লাইন আপ দিশেহারা করে তুলে হংকংকে। বিশাল ব্যবধানে ম্যাচও হারলো তাঁরা।
পাকিস্তান ফেভারিট দলের মতই জয় তুলে নিয়েছে। ফলে সুপার ফোরে ভারত, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কার সাথে তারাও যোগ দিল। আর এশিয়া কাপের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ও হংকং।
তবুও একটা ধন্যবাদ কী হংকং পেতে পারেনা? হংকং দুই ম্যাচেই হেরে এশিয়া কাপ শেষ করলেও তাঁদের জন্য সম্মানটা দেখাতেই হয়। কোনরকম ক্রিকেট কাঠামো ছাড়াই, নানা পেশায় কাজ করা এই পার্টটাইম ক্রিকেটাররা বাবর আজম, বিরাট কোহলিদের সাথে যে সাহসটা দেখিয়েছে তা প্রশংসনীয়। দুই ম্যাচেই মাঠে নিজেদের সেরাটা নিঙরে দিয়েছেন।
সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে হংকংকে এখনো অনেকটা পথ হাটতে হবে। তবে তাঁরা একটা বার্তা দিয়ে গেল এই এশিয়া কাপে। একটু সহযোগিতা পেলে তারাও যে খেলতে জানেন সেটা প্রমাণ করে গেলেন। ক্রিকেটের বড় আসরে নিজেদের একটা ছাপ রেখে গেলেন।
হংকং এর এমন খেলা আসলে ক্রিকেটটাকেই সমৃদ্ধ করে। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অনেকদিন ধরেই কাজ করছে আইসিসি। হংকং এর মত সহযোগী দেশগুলো যখন ভারত-পাকিস্তানের সাথে এভাবে লড়াই করে তখন আসলে ক্রিকেটি জিতে যায়। হংকং গ্রুব পর্ব থেকেই বিদায় নিচ্ছে বটে, তবে ক্রিকেট দুনিয়া এই সাহসটা মনে রাখবে।