চেলসি এত টাকা পায় কোথায়!

ইউরোপিয়ান ফুটবলে গত এক দশকের মধ্যে দল বদলের বাজারে সবচেয়ে বেশি আলোচিত দলটার নাম কি? সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনায় সৌদি ক্লাব আল নাসরের নামটাই বোধহয় সবার মাথায় আসার কথা। তবে আল নাসর তো আর কোনো ইউরোপিয়ান ক্লাব নয়। খেলোয়াড় কেনাবেচায় গত এক দশকের সবচেয়ে বেশি কেনা বেচা করা দলটার নাম চেলসি।

এই যেমন গত এক মৌসুমেই চেলসি ছেড়েছেন কালিদু কুলিবালি, মাতেও কোভাচিচ, এদুয়ার্দো মেন্দি, কাই হাভার্টজ, রুবেন লফটাস-চিক ও ম্যাসন মাউন্টের মতো ফুটবলারা।

খেলোয়াড় বিক্রিতে শীর্ষে থাকা চেলসি আবার সবার উপরে রয়েছে খেলোয়াড়দের পিছনে ব্যয় করার ক্ষেত্রেও। ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, ট্রান্সফার উইন্ডোতে সর্বশেষ ১০ বছরে চেলসি খরচ করেছে ২০৯ মিলিয়ন ইউরো।  ফুটবলারদের পিছনে এমন ব্যয়ের দিক দিয়ে চেলসির পরে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। যারা এ সময়কালে খেলোয়াড়দের পিছনে খরচ করেছে ১৭০ মিলিয়ন ইউরো।

চেলসির এমন দলবদলে চমক দেখানোর নেপথ্যে অবশ্য রয়েচে গত মৌসুমে ক্লাবের মালিকানা পরিবর্তন। নতুন মালিক টড বোহেলির অধীনে চেলসি প্রিমিয়ার লিগে নিচের সারিতে থাকলেও খরচের দিকে তারা ছিল সবার উপরে। শুধু ২০২২-২৩ মৌসুমে তারা খেলোয়াড় কেনা বাবদ খরচ করেছে ৬১১ মিলিয়ন ইউরো।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ক্লাবগুলোর আয় ব্যায়ের ক্ষেত্রে তো একটা এফএফপি রুল রয়েছে। চেলসি উয়েফার সেই ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে-কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ট্রান্সফার উইন্ডোতে এত টাকা খরচ করতে পারছে। মূলত, উয়েফার সেই নীতিমালায় কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে। আর চেলসি দল বদলের ক্ষেত্রে সেই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলাই মেনে চলেছে।

এ ক্ষেত্রে এনজো ফার্নান্দেজের দলবদলকেই উদাহরণ হিসেবে টানা যেতে পারে। আর্জেন্টাইন এ ফুটবলারের সাথে চেলসির চুক্তি হয়েছে একদম ২০৩১ সাল পর্যন্ত। মানে তিনি সাড়ে ৮ বছরের চুক্তি করেছেন। তো তার জন্য খরচ করা চেলসির ১০৬.৭ মিলিয়ন ইউরোকে সাড়ে ৮ ভাগে ভাগ করা হবে। অর্থাৎ এফএফপির নীতিমালা এটি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না৷

তবেএনজোর সাথে চুক্তি যদি ৫ বছরের হতো তখন ঠিকই ঝামেলায় পড়তে হতো চেলসিকে। আর এ কারণে চেলসি প্রায়ে ফুটবলারের সাথেই দীর্ঘ চুক্তি করেছে, যাতে এফএফপির কোনো নীতিমালা ভঙ্গ না হয়।

তবে চেলসির এমন কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে এবার নড়েচড়ে বসেছে উয়েফা। শোনা যাচ্ছে, নীতিমালায় আসতে পারে সংশোধনী। তাদের প্রস্তাবিত ৫ বছরের চুক্তি নীতিমালা হিসেবে যুক্ত হতে পারে খুব শিগগিরই। এমন কিছু চূড়ান্ত হলে অবশ্য ঝামেলায় পড়তে হবে চেলসিকেই। অবশ্য সেটিকে আপাতত চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা হিসেবে ধরা যাচ্ছে না।

চেলসি অবশ্য দলবদলের বাজারে শেষটাও করেছে দারুণ এক নাটকীয়তায়। প্রায় ১৩০ মিলিয়ন ইউরোতে মইজেস কাইসেদোজে ব্রাইটন থেকে দলে টেনেছে চেলসি। যা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে দামী ট্রান্সফারের নতুন রেকর্ড। ফুটবলের দল বদলের ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি দামে অন্য ক্লাবে গিয়েছেন শুদু ২ জন— নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দলবদল ফির আগের রেকর্ডটাও অবশ্য এই চেলসিরই সৃষ্টি। এই ২০২৩ সালেই পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা থেকে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজকে ১০৬ মিলিয়ন ইউরোতে দলে টেনেছিল লন্ডনের ক্লাবটি।

অবশ্য দল বদলের বাজারে আলোচিত থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে চেলসির বর্তমান অবস্থা বেশ নাজুকই বটে। সবশেষ ইপিএল তাঁরা শেষ করেছিল ১২-তে থেকে। যার দরুনে এবার ইউরোপিয়ান কোনো চ্যাম্পিয়নশীপেও চলতি মৌসুমে খেলতে পারছে না দলটি। তবে আপাতত ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে চেলসি। ঢেলে সাজানোর সেই প্রক্রিয়া কতটা ফলপ্রসু হবে সেটিও নিশ্চয় সময়ই বলে দিবে।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link