লা ফুয়েন্তের স্পেন কিভাবে খেলে?

ইউরো যখন শুরু হয় তখন ফেভারিটের তালিকায় ছিল জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স; কেউ আবার পর্তুগাল, ইতালির নামও নিয়েছেন। সেই তুলনায় স্পেন ছিল আড়ালে, বিশ্বমানের কোন তারকা না থাকায় তাঁদের নিয়ে আলোচনা হয়নি। কিন্তু মাঠের খেলায় ঠিকই সবাইকে বিস্ময় উপহার দিয়েছে তাঁরা, তারুণ্য নির্ভর একটা দল নিয়েই সেমিফাইনালে জায়গা হয়েছে তাঁদের।

আর এর পিছনের কারিগর এক বুড়ো ভদ্রলোক – লুইস দে লা ফুয়েন্তে। স্পেনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দলটাতে বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন এনেছেন তিনি; পুরনো মরচে ধরা খেলার ধরন বদলে আধুনিক ঘরানায় সাজিয়েছেন তাঁর পরিকল্পনা। এর ফলেই চলতি ইউরোতে স্পেন আবির্ভূত হয়েছে একেবারে নব রূপে; আগের চেয়ে ধারালো হয়ে এসেছে তাঁরা।

স্পেন মানেই টিকিটাকা – এমন একটা ধারণা ফুটবল সমাজে প্রচলিত আছে। ধারণাটা অবশ্য মিথ্যে নয়; গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ছোট ছোট পাসে সাফল্যের সন্ধান করেছে স্প্যানিশরা। সফলতাও মিলেছে; জাভি, ইনিয়েস্তাদের যুগে তাঁরা বিশ্ব শাসন করেছে এই টিকিটাকার জোরেই। কিন্তু যখনি মিডফিল্ডের শক্তি কমে এলো তখন ধীরে ধীরে টিকিটাকার কার্যকারিতাও কমে এসেছে।

সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টগুলোতে এজন্য সুবিধা করতে পারেনি ইউরোপীয়ান জায়ান্টরা। পুরো ম্যাচে বল দখলে যোজন যোজন এগিয়ে থেকেও বলার মত সুযোগ তৈরি করতে পারতো না, গোলের দেখা পেতো না। তাই তো লা ফুয়েন্তে সেসবের ধার ধারেননি; পজেশন বেশি রাখার চিন্তা বাদ দিয়ে ফলাফলে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন তিনি।

তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্পেন এখন অনেক বেশি স্পিডি ফুটবল খেলে। রয়েসয়ে আক্রমণে উঠার চেয়ে বরং দ্রুত বড় বড় পাসে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ঝাপিয়ে পড়ে তাঁরা। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছেন দুই তরুণ উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামাস আর লামিন ইয়ামাল। তাঁদের গতি আর ড্রিবলিংয়ের সুবাদে উইংয়ে আধিপত্য দেখাতে সক্ষম হচ্ছে দলটি।

এছাড়া সেন্টার মিডফিল্ডার পেদ্রিকে একটু ওপরের দিকে খেলিয়ে দারুণ একটা কাজ করেছেন ফুয়েন্তে। এর ফলে অ্যাটাকারদের সঙ্গে মিডফিল্ডের সংযোগ করাটা সহজ হয়েছে। জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচে পেদ্রি চোট পাওয়ার দানি অলমোকে ‘নাম্বার টেন’ রোলে খেলানো তাঁর আগ্রাসী পরিকল্পনারই অংশ। আবার দুই ফুলব্যাককে ওভারল্যাপ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি।

চলতি ইউরোতে স্পেন এখন পর্যন্ত পরাজয় তো দূরে থাক, ড্রয়ের স্বাদও পায়নি। ইতালি, জার্মানির মত দলকে হারিয়ে সেমিতে জায়গা হয়েছে তাঁদের। সম্ভবত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ইনফর্ম দল তাঁরা – এই সবকিছুর পিছনে মূল কৃতিত্ব বর্ষীয়ান কোচের। তাঁর সাহসী ভাবনার ফলে বসন্ত এসেছে স্প্যানিশদের, এখন কেবল সেই বসন্তকে পূর্ণতা দেয়া বাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link