সুজন কেন সবার ‘চাচা’!

তাঁকে হয়ত সবার ভিন্ন ভিন্ন নামেই সম্বোধন করবার কথা। তবে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দুইটা দশকের প্রতিটা ক্রিকেটারদের কাছে তিনি পরিচিত ‘চাচা’ হিসেবেই।

ক্রিকেট মাঠে চিৎকার করে শোনা যাচ্ছে ‘চাচা’ হাঁক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের একেবারে ঘাসের সাথে পরিচিত যারা তারা নিশ্চয়ই এই হাঁক আর সাথে মানুষটিকে চেনেন। তবে যারা চেনেন না, তাদের জন্যে মানুষটির ভিন্ন এক পরিচয় রয়েছে। তিনি খালেদ মাহমুদ সুজন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন সুপরিচিত মুখ।

একজন খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ পদেই তিনি ছিলেন। সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে শুরু করে কোচিং সব খানেই রয়েছে তার বিচরণ। তাঁকে হয়ত সবার ভিন্ন ভিন্ন নামেই সম্বোধন করবার কথা। তবে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দুইটা দশকের প্রতিটা ক্রিকেটারদের কাছে তিনি পরিচিত ‘চাচা’ হিসেবেই। যার পরবর্তী প্রজন্মেও ছড়িয়ে গেছে। এর পেছনেও রয়েছে দারুণ এক গল্প।

খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রায় সমসাময়িক এক ক্রিকেটার ছিলেন হালিম শাহ। তিনিও একটা সময় ছিলেন বেশ জনপ্রিয় এক নাম। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি আছেন চর্চার এক বিষয় হয়ে। শুরুটা মূলত বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দিয়ে। সেখানে তিনি আলো ছড়িয়েছেন। জ্বেলেছিলেন সম্ভাবনার প্রদীপ বাতি। প্রতিভাবান তিনি ছিলেন বটে।

ব্যাটার হিসেবে তার কদর ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটের গণ্ডী পেরিয়ে তিনি একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াবেন সেই প্রত্যাশাই ছিল সবার। তবে সব প্রত্যাশার শেষপ্রান্তে নিশ্চয়ই সুখকর সমাপ্তি থাকে না। হালিম শাহের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল তাই।

সেই হালিম শাহই মূলত ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন খালেদ মাহমুদ সুজনকে। কারণ তিনি কোন একভাবে জানতে পারেন সুজন তার দূরসম্পর্কে চাচা। ব্যাস! তিনি মাঠে-ঘাটে সর্বত্র সুজনকে চাচা বলেই ডাকতে শুরু করেন। চাচাকে তো আর যাই হোক ভাই ডাকা যায় না।

তবে হালিম শাহয়ের শুরু করে দেওয়া সেই ডাক যেন ধ্রুবক হয়ে জুড়ে গেছে খালেদ মাহমুদ সুজনের নামের পাশে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আপামর খেলোয়াড়রা তাকে চাচা বলেই ডাকেন। সেখানে প্রজন্ম কিংবা বয়সের কোন বালাই নেই।

হালিম শাহ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা চল তৈরি করে দিয়ে গেলেন। অথচ তিনি রয়ে গেলেন আড়ালে। নিজের প্রতিভার ঝলকটা তিনি দেখিয়ে দিয়ে যেতে পারেনি দেশের ক্রিকেটের সমর্থকদের। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ক্রিকেটে তারকা বনে যাওয়া হালিম ক্যারিয়ার থামিয়েছেন দ্রুতই। ১৯৯৬/৯৭ সালে তার লিস্ট এ ক্যারিয়ার শুরু হয়। আর বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু।

তবে ছোট বয়সে দেখানো স্ফুলিঙ্গ কখনো হতে পারেনি বিশাল এক বিস্ফোরণ। লিস্ট এ-তে তিনি খেলেছেন ২৫ ম্যাচ। রান করেছেন ৪৪৮। ছিল না কোন অর্ধশতক কিংবা শতক। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন সাতবার। তার নামের পাশে শতক রয়েছে দুইটি। কিন্তু কথা ছিল তার আরও সমৃদ্ধ হওয়ার।

লাল বলের ক্রিকেটে ৪০টি ম্যাচ খেলেছেন। মাত্র ২৫.৫৫ গড়ে তিনি রান করেছেন ১৪৮২। নিজের ক্যালিবারটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে এক ম্যাচে। সেবার ক্যারিয়ার সেরা ১৬১ রানে অপরাজিত থেকেছিলেন হালিম শাহ।

আফসোসের একটা বিশাল পাথর বুকে চেপে ২০০৫ সালে তিনি বিদায় নিয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে। তবে তিনি যাকে চাচা বলে ডাকতেন, তিনি ক্রিকেট ছেড়েছে আরও এক বছর বাদে। খালেদ মাহমুদ সুজন ২০০৬ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান। হালিম শাহ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে পারেননি। তবে সুজন ঠিকই পেরেছিলেন।

দুইজন এখন ভিন্ন দুই পথের পথিক। ক্রিকেট পাড়ায় হালিম শাহ এখন আর তেমন একটা বিচরণ করেন না। তবে তার ফেলে যাওয়া চাচা ডাকটা রঙের আভা ছড়িয়ে এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...