টেকনিক বদলে রাজা যখন ঈশ্বর

নামটা যখন কোহলি, তখন সমালোচনার ঝড় তো অনুমেয়ই। হয়েছিলও তাই। রব উঠছিল, বিরাট ফুরিয়ে গেছেন, ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়ে আছেন অন্তিম লগ্নে। তবে সেই ঝড়, ঝাপটা ঠেলেই বিরাট ফিরেছিলেন দুর্দান্তভাবেই। সেঞ্চুরিয়ান রূপে বিরাটের প্রত্যাবর্তন, একই সাথে রানক্ষুধায় সেই চিরায়ত রূপের বিরাট আবারো শাসন করতে শুরু করেন বাইশ গজের প্রান্তরে। 

সময়কালটা টেনেই আনা যাক। ২০২০ থেকে ২০২২। ক্যালেন্ডারের পাতায় প্রায় আড়াই বছরেরও বেশি। দিনের হিসেবে সেটা সহস্র ছাড়িয়ে। বাইশ গজের ক্রিকেটে দৌর্দণ্ড্য প্রতাপে রান করে চলা বিরাট কোহলি এই সময়টাতেই খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। ছিলেন সেঞ্চুরিহীন। আগের দশকে সেঞ্চুরি যেখানে তাঁর রোজকার অভ্যাস হয়ে উঠেছিল, সেখানে ২০২০ এর পর বিরাটের জন্য তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার হয়ে উঠেছিল রীতিমত আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো।

নামটা যখন কোহলি, তখন সমালোচনার ঝড় তো অনুমেয়ই। হয়েছিলও তাই। রব উঠছিল, বিরাট ফুরিয়ে গেছেন, ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়ে আছেন অন্তিম লগ্নে। তবে সেই ঝড়, ঝাপটা ঠেলেই বিরাট ফিরেছিলেন দুর্দান্তভাবেই। সেঞ্চুরিয়ান রূপে বিরাটের প্রত্যাবর্তন, একই সাথে রানক্ষুধায় সেই চিরায়ত রূপের বিরাট আবারো শাসন করতে শুরু করেন বাইশ গজের প্রান্তরে।

অনেকের কাছেই ধোঁয়াশা, ঠিক কোন কারণে বিরাটের সেই সময়ে ছন্দচ্যূতি হয়েছিল। আবার অনেকের কাছের বিস্ময়ের বিষয়, কীভাবে স্বরূপে ফিরে এলেন বিরাট। এই দুই ধোঁয়াশার ব্যবধানই গড়েছে বিরাটের ব্যাটিং টেকনিক।

কোভিড-১৯ এর কারণে ক্রিকেট বন্ধ ছিল অনেক দিন। এরপর মাঠে যখন ক্রিকেট ফিরেছে, তখন বদলে যায় অনেক কিছুই। বিরাট কোহলির ব্যাটিং টেকনিকও কিছুটা বদলে যায়। আর ঐ বদলটাই তাঁকে ভুগিয়েছিল অনেক দিন।

অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বল খেলতে গিয়ে বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন কোহলি। ব্যাটিং স্ট্যান্সেও কিছুটা গলদ দেখা যায় বিরাটের। কখনও দেখা যায় পা দুটো আর আগের মতো সমান্তরাল অবস্থায় নেই, আবার কখনও বা দেখা যায় ফ্রন্ট ফুট বোলারের কাছে অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে আছে।

এ ছাড়া কনুইয়ের অবস্থান সোজা মিড অনের দিক বরাবর হওয়ায়, আউট সুইং হওয়া বলগুলো তিনি ঠিক মতো খেলতে পারছিলেন না। ২০২০ সালের আগে ফ্রন্টফুট আর পা একদম বলের সাথে একই লাইনে নিয়েই খেলতেন কোহলি। কিন্তু কোভিডের পর কোহলির আউট হওয়া ডেলিভারি গুলোর ব্যবচ্ছেদ গড়লে দেখা যায়, ফ্রন্টফুট সোজা থাকলেও, তাঁর কাঁধ আছে বলের সাথে একই লাইনে।

এমন বেশ কিছু টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণেই বিরাট কোহলি বেশ কিছু দিনই স্বরূপে ফিরতে পারছিলেন না। তবে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে ছুটে গিয়েছিলেন কোচ সঞ্জয় ব্যাঙ্গারের কাছে। সেখানেই তিনি ফ্রন্ট ফুট মুভমেন্টে উন্নতি ঘটান।

একই সাথে ব্যাটে বল সংযোগ ও ব্যাট লিফটিংয়ে ক্ষেত্রে তাঁর সূক্ষ্ম ত্রুটি গুলো খুঁজে বের করেন।  এভাবে অনেকটা সময় দেওয়ার পরই আবারো বিরাট কোহলি স্বরূপে ফিরে আসেন। এক বছর আগেও যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৩ সেঞ্চুরিতে আটকে ছিলেন, সেই কোহলি এখন পৌছে গিয়েছেন শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙার দোরগড়ায়।

এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। একই সাথে ক্যারিয়ারে ৮ম বারের মতো পেরিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক হাজার রান। ক্রিকেট ইতিহাসে যে রেকর্ড আর কারো নেই। ২০২০-২২ এ নিজেকে হারিয়ে ফেলা কোহলি এভাবেই নিজেকে ফিরিয়েছেন।

রান, রেকর্ড, কিংবা কীর্তি- বিরাট কোহলির সঙ্গী এসব ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। মাঝে শুধু দুটো বছরের দুঃস্মৃতি। সেটাও পেরিয়ে এসেছেন। তবে এবার বোধহয় নিজের কীর্তির চেয়েও ভারতের এক যুগের বিশ্বকাপ খরা কাটানোর দিকেই চোখ এ ব্যাটারের। পারবেন তো বিরাট?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...