ভাল টাইমিং। নিয়ন্ত্রিত কাভার ড্রাইভ। তবুও যেন মনঃপুত হলো না ইমরুল কায়েসের। তিনি যেন পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। ঠিক পরের মুহূর্তেই ব্যাটটা পাল্টে ফেললেন। হাতে তুলে নিলেন ভিন্ন এক ব্যাট। যেটা দিয়ে অনুশীলন করবেন বলেই ঠিক করেছিলেন তিনি।
থ্রোয়ারের ছোড়া বল ফুলার লেন্থে লেগ স্ট্যাম্পের লাইনে। ব্যাটে-বলে সংযোগ দারুণ। আরও একটি নিয়ন্ত্রিত শট ইমরুলের কাছ থেকে। একটি বাউন্ডারি অন্তত তার পেয়ে যাওয়ারই কথা। এবার যেন খানিকটা স্বস্তিও পেলেন ইমরুল কায়েস।
আহা! ঠিক এমন করে ব্যাট বদলে ফেললেই যদি পরিস্থিতি বদলে যেত তাহলে কতই না ভাল হতো! সেই চিন্তাই হয়ত ঘুরপাক খেয়েছে ইমরুলের মস্তিষ্কে। তিনি হয়ত দারুণ সেই ফ্লিক শট খেলে সে কথাই চিন্তা করছিলেন। সময়টা পরিবর্তন হওয়া যে খুব প্রয়োজন।
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মোহামেডান বেশ চাপেই রয়েছে। টূর্নামেন্টের শুরুতে ধাক্কা খেতে হয়েছে। খাবি খেয়েছে কালো-সাদা শিবির। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে কোন রকমে সুপার লিগের টিকিট কেটেছে মোহামেডান।
সে পথে দারুণভাবে দলকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন ইমরুল কায়েস। তার ব্যাটে রান ছিল এই পুরো যাত্রা জুড়েই। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন কায়েস। একটি সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন তিনি সিটি ক্লাবের বিপক্ষে। তাছাড়া ১১ ইনিংসে ব্যাট করে চারটি হাফ সেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। প্রায় ৪২ গড়ে তিনি ৪৬৬ রান করেছেন এবারে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে।
নিজ ব্যাটে রানের ধারাবাহিকতা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল তাকে। তাইতো বেশ সাহস নিয়ে তিনি বলেছিলেন যে সুপার লিগ শেষে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্থানে শেষ করতে চায় মোহামেডান। তবে সেই ধারাবাহিকতায় খানিকটা ছন্দপতনের আভাস।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর সাথে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তিনি ছিলেন একেবারেই মলিন। ১২টি বল খেলেছেন আকাশী নীলদের বিপক্ষে। রান করেছেন কেবল একটি। মোহামেডান শেষ ওভারে গিয়ে হেরেছিল ম্যাচটি। সুপার লিগের শুরুটা মোটেও যায়নি মোহামেডানের পক্ষে।
সেটার দায় খানিকটা হলেও তো বর্তায় ইমরুল কায়েসের উপর। কেননা তিনিই তো সেনাপতি। তিনিই তো সাদা-কালো পতাকা বাহক। তাছাড়া সুপার লিগের আগের চার ম্যাচে টানা দারুণ খেলেছেন ইমরুল। একটি সেঞ্চুরি ও দু’টি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি এই সময়ে।
তাইতো দল তার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আস্থা রেখেছিল বেশি। আস্থার প্রতিদান দিতে তিনি পারেননি। দলকে ফেলেছেন চাপের মুখে। নিশ্চয়ই পীড়া দিয়েছে বিষয়টি তার। তাইতো মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনে তিনি ভীষণ ব্যস্ত।
ব্যাট বদলে ফেলার মত করে আবারও বদলে ফেলতে চান মোহামেডানের ভাগ্য। আরও একটিবার দলকে নিশ্চয়ই ফেরাতে চান জয়ের স্রোতধারায়। এবারের টুর্নামেন্টের ইতিবাচক এক সমাপ্তিই হয়ত প্রত্যাশা করে আছেন ইমরুল কায়েস।
জাতীয় দলে তার আবার নতুন করে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। তিনি হয়ত এখন বাকিটা সময় ঘরোয়া ক্রিকেটেই দেবেন নিজের পূর্ণ মনোযোগ। বনে যাবেন আরও একজন ঘরোয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি। তাই হয়ত মোহামেডানের হয়ে এই মৌসুমটা রানে রাঙিয়ে যেতে চাইবেন তিনি।