অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় জয় পেলেও বিশাখাপত্তমে শেষরক্ষা হলো না ভারতের। ঘরের মাঠে অজিদের বিপক্ষে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পন করেছে রোহিত শর্মার দল। ব্যাট হাতে তাঁদের দেয়া মোটে ১১৮ রানের লক্ষ্য অজিরা পেরিয়ে গেছে এগারো ওভারেই, সেটাও আবার কোনো উইকেট না হারিয়ে।
ভারতের ব্যাটিং এবং বোলিং দুই ডিপার্ট্মেন্টই যেন এদিন বাজে খেলায় একে অন্যকে ছাপিয়ে যাবার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। ম্যাচ শেষ হওয়ার সময় দুই দল মিলিয়ে খেলেছে মোটে ৩৭ ওভারে। শুরু থেকে খেলা না দেখে কেউ হঠাৎ টিভি খুলে বসলে নিশ্চিতভাবেই ভ্রম ভেবে বসবেন!
টস হেরে ব্যাট করতে নামা ভারত পথ হারিয়েছে প্রথম ওভার থেকেই। মিশেল স্টার্কের আগুনঝরা বোলিংয়ের কোনো জবাব ছিল না ভারতীয় ব্যাটারদের কাছে। একের পর এক ব্যাটসম্যান এসেছেন, ক্রিজে ধাতস্থ হবার আগে সাজঘরে ফিরেছেন। সুরিয়াকুমার যাদব তো এককাঠি এগিয়ে, টানা দুই ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়েছেন এই তারকা।
স্টার্কের পাঁচ উইকেট শিকারের দিনে বিরাট কোহলিই যা একটু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি, ১১৭ রানেই গুটিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। স্টার্কের পাশাপাশি পিচে আগুন ছড়িয়েছেন শন অ্যাবটও, ডানহাতি এই পেসারের শিকার তিন উইকেট। ভারতের ব্যাটিংয়ে এতটা অসহায় আত্নসমর্পণও হতে পারে!
ব্যাট হাতে এহেন দুরবস্থার পর বল হাতে যেন ব্যাটারদের ছাপিয়ে যাবার মিশনে নেমেছিলেন ভারতীয় বোলাররা। তাঁদেরকে রীতিমতো পাড়ার বোলারে নামিয়ে আনেন দুই অজি ওপেনার ট্রাভিস হেড এবং মিশেল মার্শ।
একটু আগেই যে পিচে ভারতীয় ব্যাটাররা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি, সেখানেই রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন এই দুই তারকা। তাঁদের প্রতিটা বাউন্ডারির মার যেন ভারতীয় সমর্থকদের বুকে শেল হয়ে বিঁধেছে।
তাঁদের টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিংয়ে যেন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থার উপক্রম মোহাম্মদ শামি, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজদের। দুই অজি ওপেনার যখন ম্যাচ শেষ করে সাজঘরে ফিরছেন ততক্ষণে ইনিংসের পেরিয়েছে মোটে ১১ ওভার, পশ্চিম আকাশের সূর্যটা তখনো অস্তমিত হয়নি পুরোপুরি। এতটা একতরফা ম্যাচও হয় আজকাল!
ইতিহাসের শুরু থেকেই ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের সুনাম বিশ্বজোড়া। রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলিদের নিয়ে গড়া বিশ্বসেরা ব্যাটিং অর্ডারের এমন অসহায় আত্নসমর্পন নিশ্চিতভাবেই কল্পনা করেননি কেউই। অথচ এই ম্যাচের একাদশে ছিলেন না অজি পেস বোলিংয়ের দুই ভরসা জশ হ্যাজলউড এবং প্যাট কামিন্স। তাঁদের ছাড়াই ব্যাট হাতে রীতিমতো অসহায় লেগেছে ভারতকে।
ঘরের মাঠে ভারত তাঁদের ইতিহাসেই এর চাইতে কম রানে আউট হয়েছে মাত্র তিনবার। এছাড়া মাত্র ২৬ ওভারে অল আউট হয়েছে রোহিত শর্মার দল, যা কিনা তাঁদের ইতিহাসের পঞ্চম দ্রুততম। নিজেদের ইতিহাসে এর চাইতে বড় ব্যবধানে কখনোই হারেনি স্বাগতিকরা, তাঁদের দেয়া লক্ষ্য অজিরা পেরিয়ে গেছে ২৩৪ বল হাতে রেখেই।
এর আগে হ্যামিল্টনে ভারতের বিপক্ষে ২১২ বল রেখেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দুই ইনিংস মিলিয়ে ম্যাচে মোট ২২২ বল করেছেন বোলাররা যা কিনা ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচগুলোর মাঝে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।