অনবদ্য এক জয়ের পর

পাকিস্তানের বিপক্ষে অনবদ্য এক জয় দিয়েই এবারের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে ভারত। স্টেডিয়ামে থাকা নব্বই হাজার দর্শক তো বটেই বিশ্বজুড়ে থাকা লক্ষ-কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর নজর ছিল এই ম্যাচের দিকে। ভারতে রীতিমতো উৎসব হয়েছে ম্যাচজয়ের পর। তবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের তাতে শামিল হবার ফুসরত কই, পরেরদিন সকালেই যে তাঁদের ছুটতে হয়েছে সিডনির ফ্লাইট ধরতে। সেখানেই পরবর্তী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে রোহিত শর্মার দল।

স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে বাসে ওঠার সময় ভারতীয় দর্শকদের অভিবাদন পেয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। দর্শকরা যেন এদিন খুশিতে আত্নহারা হয়ে গিয়েছিলেন, স্টেডিয়াম মুখরিত হয়ে উঠেছিল ‘কোহলি’, ‘কোহলি’ স্লোগানে। হোটেলে পৌঁছানোর পর পুরো ভারতীয় দলকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন হোটেল স্টাফরা। এরপর রুমে ফিরেই বসতে হয়েছে লাগেজ নিয়ে, পরদিন সকালেই যে ফ্লাইট। দমটুকু ফেলার সময়টুকু নেই যেন কারও।

ম্যাচের পর বেশিরভাগ ক্রিকেটারের ফোনই মেসেজ এবং শুভেচ্ছাবার্তায় পূর্ণ ছিল। সবগুলোর উত্তর দিতেই বোধহয় একদিন কেটে যেতো। কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটার অবশ্য ভেবেছিলেন উত্তেজনার রেশটা কাটিয়ে উঠতে বাইরে গিয়ে হেঁটে আসবেন। কিন্তু হোটেলের বাইরে ভক্ত-সমর্থকদের সরব উপস্থিতি দেখে তাঁরা জানালার পাশে বসেই সময়টা কাটিয়ে দেন। এমনকি গভীর রাতেও হোটেলের বাইরে উৎসবে মেতে ছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। 

ভারতের অন্যতম বড় উৎসব দিওয়ালি। ক্রিকেটাররা এবার দেশে পরিবারের সাথে এই উৎসবে থাকতে পারবেন না বিধায় অনেক আগেই ড্রেসিং রুমে পরিকল্পনা ছিল দিওয়ালির রাতে সবাই একসাথে টিম ডিনার করার। তাতে দুটো উপকার হতো – উৎসবের আমেজে বিশ্বকাপের চাপটা কিছুটা কমতো আর অন্যদিকে দলের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হত।

সিডনি হারবারে পুরো দল এবং খেলোয়াড়দের স্ত্রী-সন্তানদের সহ টিম ডিনার আয়োজনের ব্যবস্থা করা হলেও কোচ দ্রাবিড় এবং সিনিয়র খেলোয়াড়রা দলকে জানান রোমাঞ্চকর এই জয়ের রেশ সিডনিতে টেনে নেয়ার চাইতে বর্তমানে থাকাই ভাল। সেই কারণেই বাতিল হয়ে গেছে সেই ভাবনা।

রাহুল দ্রাবিড় কোচ হবার পর থেকেই দলকে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং জয়-পরাজয়ের দিকে ভাবতে নিষেধ করেছেন। ম্যাচের পর তাই টিম ম্যানেজমেন্টের নির্দেশনা ছিল বড় টুর্নামেন্টে উত্থান-পতন থাকবেই, সেজন্য ভবিষ্যত নিয়ে না ভেবে বর্তমানটাকেই যেন সবাই উপভোগ করে।

দলের এক সাপোর্টিং স্টাফ বলেন, ‘ম্যাচ পরবর্তী সভায় সবাইকে পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে না ভেবে বরং সামনের দিকে তাকাতে বলা হয়েছে। আমাদের শুরুটা ভাল ছিল এবং টুর্নামেন্টে দারুণ কিছু করার জন্য এর চাইতে ভাল শুরু হতেই পারতো না। তবে টুর্নামেন্ট এখনও শেষ হয়নি, সবাইকে পা মাটিতে রাখতে হবে।’

ম্যাচ জয়ের দুই নায়ক- বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া সবার শেষে রুমে ফিরেছেন। ব্রডকাস্টারদের পাশাপাশি বিসিসিআইয়ের ওয়েব সাইটের জন্য তাঁদের একাধিক সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে। যেখানে তাঁরা কথা বলেছেন নিজেদের দায়িত্বের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা নিয়ে। 

ম্যাচের মুহূর্তে হার্দিককে নিয়ে কোহলি বলেন, ‘সে আমাকে ফোকাসড রাখতে বেশ সাহায্য করেছে, কারণ আমি বড় শট খেলার ব্যাপারে ভাবছিলাম। যেটা খুবই ঝুঁকির কাজ ছিল, কারণ আমরা ততক্ষণে চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম।’

অন্যদিকে হার্দিক কথা বলেছেন ম্যাচের পূর্বে ড্রেসিং রুমের পরিবেশ নিয়ে। হার্দিক বলেন, ‘ড্রেসিংরুমে সবাই বেশ চাপে ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম। সবার জন্য এটা ছিল বড় একটা ম্যাচ, কিন্তু আমার জন্য ব্যাপারটা এমন ছিল না। সত্যি বলতে শুনতে কিছুটা বোকা বোকা লাগবে, মাঠে নামার সময় আমার মাথা ছিল একদম ফাঁকা।’

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রোহিত শর্মা বেশ কয়েকবার ফোকাসড শব্দটা ব্যবহার করেন। রোহিতের ভাষ্যমতে, ‘এটা সহজ হতে যাচ্ছে না আর এটাই আমি সবাইকে বলেছি; আমাদেরকে নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে এবং নিজেদের আসল লক্ষ্যের কথা মাথায় রাখতে হবে। অবশ্যই মাঠে আমাদের সমর্থনে অনেকে থাকবে, কিন্তু আমাদের কেবল নিজেদের খেলাতেই ফোকাস রাখতে হবে।’

ভারতীয় ক্রিকেটাররা পা মাটিতে রাখার চেষ্টা করলেও অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম অবশ্য কোনো রাখঢাক করেনি বিরাট কোহলির প্রশংসা করতে। প্রতিটি গণমাধ্যমেরই প্রথম পাতায় ছিল কেবল কোহলির স্তুতি-গাঁথা।  

পুরো বিশ্ব যখন মেতে আছে সেদিনের সন্ধ্যার নায়কদের মহিমান্বিত করে তুলতে, সেখানে খোদ নায়করাই চাইছেন সেই সন্ধ্যাটা মন থেকে সরিয়ে ফেলতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link