শিখরে ওঠা এক ধাওয়ানের গল্প

২০১৩ সালের ১৪ মার্চ যখন মোহালির মাঠে চোটগ্রস্ত বীরেন্দ্র শেবাগের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেলেন, তখন গল্পটা আবার রূপকথায় রূপান্তরিত করবার সুযোগ এসে গেলো।তবে সুযোগ শুধু এলেই তো হয়না, তা কাজে লাগাতে হয়, অনেকেই এটা করে উঠতে পারেন না। কিন্তু শিখর ধাওয়ান করে দেখালেন, আর সেটা প্রবলভাবেই এবং সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই। টেস্ট অভিষিক্ত হিসেবে দ্রুততম শতরান করে থেমে যাওয়া গল্পটা নতুন করে শুরু করলেন। সেদিন করেছিলেন ১৮৭ রান, অভিষিক্ত ভারতীয় হিসেবে টেস্টে আজো সেটা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

দিল্লির বিখ্যাত সনেট ক্রিকেট ক্লাব – যেখান ভারতীয় ক্রিকেট পেয়েছে মনোজ প্রভাকর, আশিষ নেহেরা, রমন লাম্বা, অজয় শর্মা, আকাশ চোপড়ার মতো অসাধারণ সব ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তাঁদের সবাইকে বিশ্বকে চিনিয়ে দেওয়া একজন অসাধারণ অভিজ্ঞ কোচ তারাক সিনহার কাছে ১২ বয়সী এক কিশোর প্রশিক্ষণ নিতে এলো উইকেটরক্ষক-ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে।।

হ‍্যাঁ, নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিল সেই কিশোর। সেই গুনি অভিজ্ঞ কোচের প্রশিক্ষণে প্রথমে দিল্লী অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে অসাধারণ সাফল্য পেলো। শুরু হলো এবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে চিনিয়ে দেওয়ার। তবে উইকেটরক্ষক-ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে নয় একজন আক্রমণাত্মক ওপেনার হিসেবে।

২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারত তথা গোটা বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। ওই বাঁহাতি, ওপেনার হিসেবে সাত ম‍্যাচে প্রায় ৮৫ এর গড়ে ৫০৫ রান শুধু ওই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ নয়, এখনো পর্যন্ত সমস্ত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান। ওই প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার হয়ে নিজের স্বপ্নপূরণের দিকে একধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর বহু বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাননি। তবে গল্পটা পাল্টে যায় ২০১৩ সাল হতে। শিখর ধাওয়ান নামের ওই আক্রমণাত্মক বাঁহাতি ওপেনার আজ আইসিসির বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ভারতের অন‍্যতম সেরা রান সংগ্রাহক ও বর্তমান সীমিত ওভারের বিশ্ব ক্রিকেটে অন‍্যতম সেরা ব‍্যাটসম্যান।

২০১০ সালে ঘরের মাঠে যখন নিয়মিত ওপেনারদের অনুপস্থিতি তথা বিশ্রামের সুযোগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে ওপেন করবার সুযোগ পেলেন শিখর, তখন শুরুটা রূপকথার মতো হলো না। মাত্র দুটি বল খেলে কোন রান না করেই প‍্যাভিলিয়নে ফিরলেন তখন দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার আশা প্রায় কমেই গেলো। কিন্তু, ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ যখন মোহালির মাঠে চোটগ্রস্ত বীরেন্দ্র শেবাগের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেলেন, তখন গল্পটা আবার রূপকথায় রূপান্তরিত করবার সুযোগ এসে গেলো।

তবে সুযোগ শুধু এলেই তো হয়না, তা কাজে লাগাতে হয়, অনেকেই এটা করে উঠতে পারেন না। কিন্তু শিখর ধাওয়ান করে দেখালেন, আর সেটা প্রবলভাবেই এবং সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই। টেস্ট অভিষিক্ত হিসেবে দ্রুততম শতরান করে থেমে যাওয়া গল্পটা নতুন করে শুরু করলেন। সেদিন করেছিলেন ১৮৭ রান, অভিষিক্ত ভারতীয় হিসেবে টেস্টে আজো সেটা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

এর মাত্র কয়েক মাস পর যখন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দল ও ম‍্যানেজমেন্ট রোহিত-শিখর নামক এক আনকোরা ওপেনিংয়ে জুটিকে নিজেদের মঞ্চ প্রস্তুত করবার সুযোগ দিল তখন বর্তমানের রোহিত মিডল ওভারের একজন দিকভ্রান্ত পথিক আর শিখরের ঝুলিতে মাত্র পাঁচটি ওডিআই খেলবার অভিজ্ঞতা।

এরপর যা হয়েছে তা আজ ইতিহাস। রোহিত ওশিখরের সেই ওপেনিং জুটি আজ সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অন‍্যতম সফল জুটি। আর শিখর নিজের দক্ষতায় শিখর ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, নিজেকে পরিনত করেছেন একজন অসাধারণ ধারাবাহিক ওপেনার হিসেবে যাকে ছাড়া সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতকে ভাবা কঠিন হয়ে যায়।

মাঠে তিনি পরিচিত ‘গাব্বার’ নামে। সেঞ্চুরি করে পাঁকানো গোফে তা দেওয়া আর ব্যাট-হেলমেট সমেত বাহু দুই পাশে প্রসারিত করে উদযাপন – ক্রিকেট মাঠে আজ এক নিয়মিত দৃশ্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...