মাস খানেকের ব্যবধানে দু’টো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ। এমন নিদারুণ কষ্টের সময়টাই সঙ্গী হয়েছে সদ্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা রোহানাত দৌল্লা বর্ষণের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খুব কাছে গিয়েও হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সে ম্যাচে ব্যাট হাতে আরেক প্রান্তে নিস্তব্ধ হয়ে বসে পড়েছিলেন বর্ষণ।
তিনিই যে ম্যাচ জয়ের ক্ষীণ আশাটা জাগিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি পাওয়া হয়নি জয়। সেই ম্যাচ শেষে। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তারা সকলেই। ‘অবশ্যই খুব খারাপ লেগেছিল। সবাই কান্না করছিলাম।’ পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাথে পরাজয় যেন মেনেই নিতে পারেননি বর্ষণরা।
তবে সে ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বর্ষণ পেয়ে গেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) স্বাদ। নক আউট পর্বের ঠিক আগের মুহূর্তে তাকে দলে নিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে দারুণ বল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বর্ষণ। মাত্র ২১ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এরপরই ফাইনালেও তার উপর আস্থা রেখেছিলেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
একেবারেই তরুণ এক ক্রিকেটার। ফাইনালের স্নায়ুচাপে কাবু হয়েছিলেন বটে। প্রথম ওভারে একটুখানি খেই হারিয়ে ১৫ রান খরচ করেছেন তিনি। এরপর আর তাকে বল হাতে দেখা যায়নি বাইশ গজে। যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী অভিজ্ঞদের ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক।
তবুও বর্ষণের কাছে বিপিএলের ফাইনালে চাপ একটু কমই অনুভূত হয়েছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের ম্যাচটি এর থেকেও ভীষণ স্নায়ুচাপের সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, ‘সেই ম্যাচটা খুব বেশি চাপের ছিল। এই ম্যাচে আমি খুব একটা চাপ অনুভব করিনি। জ্বি অবশ্যই, অনেক অনেক প্রচুর ব্যাকআপ করেছেন আমাকে সিনিয়র খেলোয়াড়রা।’
দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সান্নিধ্যেই চাপ খানিকটা শোষণ করতে পেরেছিলেন বর্ষণ। সেই সাথে একটা স্বপ্ন অন্তত পূরণ হয়েছে তার। বিপিএলের ফাইনাল খেলবার স্বপ্ন তার ছিল বটে। কিন্তু দ্রুতই সে স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে তা মোটেও আশা করেননি বর্ষণ, ‘অবশ্যই খুব ভাল অনুভূতি কারণ, বিপিএলের ফাইনাল খেলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কখনো ভাবিনি এই বিপিএলের ফাইনাল খেলব আমি। অবশ্যই অভিজ্ঞতাটা ভাল ছিল।’
কিন্তু তবুও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে না পারা, শিরোপা ছুঁয়ে না দেখার আক্ষেপ এখনও পোড়ায় তাকে। তিনি বলেন, ‘এই বিপিএলের ফাইনাল আমি কিন্তু সামনের বারও খেলতে পারি। আরও অনেকবার খেলতে পারি। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ এমন একটা জিনিস আপনার জীবনে যা একবারই আসতে পারে। কারো কারো জীবনে হয়ত দুইবার আসে। তবে আমার ওটাই প্রথম বিশ্বকাপ ছিল, ওটাই শেষ বিশ্বকাপ ছিল। অনেক প্রত্যাশা ছিল, অনেক আশা ছিল। সেগুলো পূরণ হয়নি। অবশ্যই খুব খারপ লাগছিল।’
তবে এসব ভুলে বর্ষণ নজর রাখছেন সামনের দিকে। তিনি জাতীয় দলের আসার প্রস্তুতিতেই দিতে চান মনোযোগ। তবে দ্রুতই নয়, পরিণত হয়েই তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে চান। তরুণ এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি চাই আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে জাতীয় দলে সুযোগ পেতে। যদি আরও সময় লাগে আমার কোন সমস্যা নেই। আমার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, আমি এমনভাবে প্রস্তুত হয়ে যাই যেন পরে আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে না হয়।’
বর্ষণ হয়ত তার পরিকল্পনা মতই জাতীয় দলের পথটা খুঁজে নেবেন। অন্তত তার বলের গতির মত জাতীয় দলে এসে আবার ফিরে যাবেন না অতল অন্ধকারে।