বড় অবেলায় সে ফেরা

বাউন্ডারি লাইনের উপর মোড়ানো কাগজের বাক্সটা ব্যাট দিয়ে বাড়ি মারলেন। বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে পারছেন না, অফ ফর্ম – সব মিলিয়ে ক্ষোভটা তাই বাউন্ডারি লাইনের উপর ঝাড়লেন। এইত কিছুদিন আগেই ঈশান কিষাণের এমনই এক ছবি ক্রিকেট পাড়ায় ভাইরাল।

এবারের আসরে ব্যাট হাতে যেন নিজের স্বভাবসুলভ খেলার উল্টোদিকে হাঁটছেন তিনি। দলের ব্যর্থতার সাথে সাথে ব্যাট হাতে তিনিও ব্যর্থ। চেহারায় হতাশার ছাপটাও স্পষ্ট। গায়ে আসরের সর্বোচ্চ দামি ক্রিকেটারের তকমাও আছে; চাপের বোঝাও তাই সবচেয়ে বেশি।

সমালোচনার ঝড়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন আরও। তবে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন কিষাণ। টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষাংশে ব্যাট হাতে আলোর দেখা মিলেছে এই পকেট ডাইনামাইটের।

আট ম্যাচ বাদে গেল রাতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ফিফটির দেখা পেয়েছেন কিষাণ। খেলেছে ৪৩ বলে ৫১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। যেখানে দল মাত্র ১১৩ রানেই গুড়িয়ে গেছে – সেখানে ঈশানের ইনিংস নিঃসন্দেহে অসাধারণ। আগের ম্যাচেই গুজরাটের বিপক্ষে ২৯ বলে ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন মুম্বাইয়ের এই ওপেনার।

পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলাম। জমকালো এক আয়োজনে নিলাম ঘরে চলছে রোমাঞ্চকর লড়াই। তরুণ তারকা ঈশান কিষাণকে দলে ভেড়াতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সাথে লড়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি। তবে জয়টা মুম্বাইয়ের হল। চড়ামূল্যে নিলাম থেকে কিষাণকে আবারও দলে ভেড়ালো মুম্বাই।

নিলামের আগেই প্রত্যাশিত ছিল চড়া মূল্যে বিকবেন কিষাণ। তবে সবার প্রত্যাশা ছাপিয়ে যেন সেই দামটা পাহাটসম অবস্থানে। পঞ্চদশ আসরের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার বনে গেলেন। এমন একজনের কাছ থেকে স্বাভাবিক ভাবেই সমর্থক সহ দলের প্রত্যাশা বাকিদের চেয়েও বেশি। এই প্রত্যাশার চাপটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে কিষাণের জন্য। আগের আসর গুলো ব্যাট হাতে উড়ন্ত ফর্মে থাকা ঈশান এবার যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন।

প্রথম ম্যাচেই আশির ঘরে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে টুর্নামেন্টের শুরু করেছিলেন। প্রথম ম্যাচেই যেন জানান দিয়েছিলেন তাঁর নামের পাশে দামটা মোটেও বেমানান না। পরের ম্যাচেই আরেকটি ফিফটি। প্রথম দুই ম্যাচে দুই দুর্দান্ত ইনিংস। কিষাণ যেন ছুঁটছিলেন রানের পাহাড়ে।

এরপরই দেখা মিলল উলটো চিত্র। পরের ছয় ম্যাচে বলের চেয়ে রানের পরিমাণ অনেক কম, সোনালি হাঁসের লজ্জায়ও ফিরেছেন এক ম্যাচে। ডট বল খেলে চাপ বাড়াচ্ছেন, রান পাচ্ছেন না, দৃষ্টিকটু আউট – সব মিলিয়ে নিন্দুকদের সমালোচনার পাহাড়ে চাপা পড়েন কিষাণ।

অবশ্য এবারের আসরে মুম্বাইয়ের জার্সি গায়ে দুই-এক ক্রিকেটার ছাড়া ধারাবাহিক পারফরম্যান্সটা দেখা যায়নি কারও মাঝেই। তবে অর্থের বোঝা যেহেতু নিয়েছে, তাই সমালোচনার পাল্লাটাও ঈশানের জন্য সবার চেয়ে বেশি। টুর্নামেন্ট যখন শেষের দিকে, ঠিক তখনি আবার ঘুরে দাঁড়ালেন কিষাণ। পর পর দুই ম্যাচেই খেললেন অসাধারণ দুই ইনিংস। সমালোচকদের মুখ খানিকটা বন্ধ করে আপাতত কিষাণ যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।

তবে এবারের অধারাবাহিকতা হয়ত কিষাণকে ছিটকে দিতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে! আপাতত বাকি ম্যাচগুলোতে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স দিতে পারলে হয়ত নির্বাচকদের ভাবনায় নিজের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারবেন ঈশান। এত এত তারকার ভীড়ে সেই রাস্তাটা এখন বড্ড কঠিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link