আইপিএল নিলাম: যেভাবে পরিকল্পনা সাজায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ম্যানেজমেন্ট

মুস্তাফিজুর রহমানের দাম বাড়ে নাই। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিদেশিদের আগে ভাগে টাকা খরচ করতে খুব আগ্রহী না। মুস্তাফিজের পিছনে টাকা ব্যায় না করার কারণ অনেক দলই তাদের দেশি অপশন অনেক মূল্য দিয়ে কেনে বা কিছু প্রাইম বিদেশি পেসার নেয়। আর কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি অপেক্ষায় ছিলো পরবর্তী ভারতীয় পেসারদের। আবেশ খান, শিভাম মাভি, কার্তিক ত্যাগীর জন্য।

নিলামে খেলোয়াড়ের দামটা আমি কখনোই খুব একটা মূখ্য বলে মানি না। দাম নিয়ে অনেক সময়ই হাসা হাসি হয়, ট্রল হয়, মজা হয়। আমার কাছে মনে হয় যদি কোনো খেলোয়াড় দল পান তবে তিনি যথেষ্ট যোগ্য বলেই দল পাচ্ছেন। দামের বিষয়টা অকশন পরিস্থিতি এবং দলের চাহিদার উপর নির্ভর করে। ম্যানেজমেন্টের চিন্তা ভাবনার উপর নির্ভর করে।

রাজস্থানের দলটার কথা ধরি একটু। ওদের দলের একদশ অনেকটা তৈরি।

  • দেবদুত পাদ্দিকাল
  • জশ বাটলার
  • যশস্বী জ্যাসওয়াল
  • সাঞ্জু স্যামসন
  • রিয়ান পরাগ
  • শেমরন হেটমায়ার
  •  রবিচন্দ্রন অশ্বিন
  • যুজবেন্দ্র চাহাল
  • ট্রেন্ট বোল্ট
  • প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা

ওদের একাদশ কিন্তু মোটামুটি তৈরি। তিন জন বিদেশি হয়ে। চার জন রেগুলার বোলিং অপশন, ২ জন স্পিনার। ২ জন পিউর বোলার। এখন ৭/৮ এর জন্য ওদের কি দরকার?

একজন মিডল ওভারে বল করতে পারবে এমন একজন পেসার। এবং ৭/৮ নেমে ক্যামিও খেলতে পারবে এমন কেও।

এখন ওদের সামনে শেবাগ, শচীনের লোভ দেয়া হলেও ওরা এদের জন্য বিড করবে না। ওদের ঐরকম একজন কাউকেই দরকার পড়বে খুব। এখন এইরকম ৭/৮ ক্যামিও পাশাপাশি চার ওভার করতে পারবে কে?

নিলামে যদি ক্রিস মরিস, কাইল জেমিসন টাইপের কেউ এখন থাকতো৷ ওরা হয়তো ৭-৮ কোটি খরচ করতেও দ্বিধা বোধ করতো না। অথচ মরিস, ওকস জেমিসনের চেয়েও ভালো কোনও ক্রিকেটার ধরেন (ফিঞ্চ বা বিলিংস)হয়তো মরিসের আগের নম্বরে এসে অন্য কোনও ফ্রানচাইজিতে ২/৩ কোটিতে যাবে। কিন্তু মরিস, জেমিসনরা হয়তো আরও বেশি পাবে।

এখন আপনি হাসবেন কার উপরে? রাজস্থান যদি ৬/৭ কোটি দিয়ে এখন মরিস, জেমিসন টাইপের কাউকে কেনে তাতে কি তারা মজার পাত্র হবে? না যিনি কমে বিক্রি হচ্ছেন। বা সিচুয়েশন যেই মরিস, ওকস বা জেমিসনদের ৬/৭ কোটি বানাচ্ছে তারা মজার পাত্র হবেন? তাদের জন্য এখন মরিস বা জেমিসনের মতো কেউই ঐ ৭ নম্বরে সেরা অপশন।

দ্বিতীয় দিনে হয়তো রাজস্থান সেই এক বিদেশির খোজেঁ ঐ পজিশনের কোনও ক্রিকেটার অনেক টাকাই খরচ করবেন। সেটা হতে পারে অজি অলরাউন্ডার শন এ্যাবট্ট, কিংবা হেইডেন কের। বা দক্ষিন আফ্রিকার ইয়েনসন কিংবা কিউইদের জিমি নিশাম” এখন এদের ৫/৭ কোটি দিয়ে কিনলে বলে দেবেন ‘সাদা চামড়া তাই দাম বেশি’। এখন কাল আপনি এইসব অপশনের চেয়ে ভালো অপশন পাবেন এই সব পজিশনে?

দেশ ফ্যাক্ট না। কিছু বায়সড সিদ্ধান্ত তাদের ক্ষেত্রে যায় না এটা অস্বীকার করতেছি না। ব্যাক আপ ক্রিকেটার নেয়ার ক্ষেত্রে এটা হয়। মাইক হেসন গতবার একজনকে শেষ সময়ে স্লট পূরনের জন্য নিয়েছিলেন। ঐ বেস প্রাইসে অন্য কিছুও নিতে পারতেন৷ তবে ঢালাও ভাবে যেভাবে বলি সেভাবে হয় না।

এখানে ফ্রানচাইজিগুলো অনেকটা ‘Punt’ নেয়। একটা প্লেয়ারের উপর বাজি রাখে জাস্ট। কখনো সেই বাজিটা লাগে কখনো লাগে না। মইন আলীকে গতবার ৭.৫ কোটিতে হাসাহাসি ছিলো বাংলাদেশের ফেসবুকে সোসাইটিতে! অথচ দেখা গেলো মইনের উপর চেন্নাইয়ের বাজিটা ঠিকই ছিলো। মরিসের নিয়ে হাসাহাসি হলেও রাজস্থান ৬/৭ টা ম্যাচ জিতলো তার মধ্যে তিনটায় সেরা মরিস হয়েছিলো। যদিও পুরো সিজন ভালো ছিলেন। তো এমন অনেক পান্ট লাগে অনেক গুলোই লাগে না।

আইপিএল শুরুর আগে আমরা খুব হার্শ স্টেটমেন্ট দিয়ে দিই একজন ক্রিকেটার নিয়ে। দাম উঠা তার হাতে নাই। পরিস্থিতি তার দামটা বাড়ায় দেয়।

ওয়ানিন্দু  হাসারাঙ্গা আগামী দিনের তারকা। প্রাইসটা বাদ দিয়ে চিন্তা করেন। ব্যাঙ্গালোর জানতো না একসাথে ওয়াশিংটন সুন্দর এবং চাহালকে অকশন থেকে আনা সম্ভব না। তো তারা চাহাল লেগ স্পিনের চেয়েও বেটার স্পিন পাবে হাসারাঙ্গাতে এবং সুন্দর ব্যাটিংটা পাবেন হাসারাঙ্গাতে। চ্যালেঞ্জার চিন্তাভাবনা এমনই হতো ছিলো। হাসরাঙ্গার তো দুর্দান্ত অনেক দিনই। র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে দিন। আগের রান বেশি দিলেও ফিঞ্চ, স্মিথ, ম্যাক্সির তিনটা দুর্দান্ত উইকেট নিয়েছে। কোয়ালিটি তো তাঁর আছে।

মুম্বাই তাদের একটা কোর বের হয়ে গেছে৷ কুইন্টন ডি কক এবং কুনাল পান্ডিয়া। তো ওরা সবটা দিয়ে ঈশান কিষাণকে নিয়েছে। যার ফিউচার অনেক ব্রাইট। এর সাথে তাঁরা ডেওয়াইল্ড ব্রেভিসকে নিছে। কক এবং পান্ডিয়ার যাওয়াতে তারা তিনটা জিনিস মিস করেছে একটা জন ফরেন ব্যাটার, উইকেট কিপিং এবং একজন ভারতীয় ব্যাটার যিনি নিয়মিত ২-৩ ওভার করতে পারেন। এটা তারা ব্রেভিস এবং কিষাণের মাধ্যমে পূরন করবে। কিশান তাদের কিপিং দিবে, তাদের ভারতীয় ব্যাটারের ব্যালেন্সটা দিবে। ব্রেভিস বিদেশি ব্যাটারের সার্ভিস দিবে যেটা কক দিতো। সাথে নিয়মিত ২-৩ ওভার যেটা পান্ডিয়া প্রোভাইড করতো। এভাবে করে আসলে অনেক সমীকরণ থেকে বিডিং হয়।

কখনো সেই বিডিংটা ক্রেজি হয়ে যায়। কারণ ঐ ফ্র্যাঞ্চাইজির ঐরকম কাউকে চাই- চাই। তখন তারা করবেটা কি?

মুস্তাফিজ বিক্রি হওয়ার পর দিয়ে ক্রিস উড মূল্য আসলো আলোচনায়। মার্ক উড আপনাকে এক্সট্রা পেস প্রোভাইড করবে। টি-টোয়েন্টি দলে এই ভ্যারিয়েশনটা যে কেউ চাইবে। এখন ফার্গুসন একটা দলে চলে গেছে, কামিন্স একটা দলে, নর্খিয়া রাবাডা চলে গেছে। এখন ১৪৫+ অপশন পাওয়াটাও তো মুশকিল। তো এইরকম অপশন এড করতে তারা বিডিং চালিয়ে গেছে৷ বিডিং না থামলে আরও দাম উঠতো।

ফ্র্যাঞ্চাইজির এইরকম কাউকে চাই। ১৪৫+। ফ্র্যাঞ্চাইজি মুস্তাফিজের ডেথ ওভার বা তাঁর স্লোয়ারের দরকার নাই। এর বাইরে হিসাব কি বের করেন?

মুস্তাফিজুর রহমানের দাম বাড়ে নাই। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বিদেশিদের আগে ভাগে টাকা খরচ করতে খুব আগ্রহী না। মুস্তাফিজের পিছনে টাকা ব্যায় না করার কারণ অনেক দলই তাদের দেশি অপশন অনেক মূল্য দিয়ে কেনে বা কিছু প্রাইম বিদেশি পেসার নেয়। আর কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি অপেক্ষায় ছিলো পরবর্তী ভারতীয় পেসারদের। আবেশ খান, শিভাম মাভি, কার্তিক ত্যাগীর জন্য।

বাংলাদেশি, বাঙালি খেলোয়াড় – এগুলো খুব চিপ টাইপের ভিক্টিম কার্ড খেলে জাতিগত ভাবে নিজেরা ছোট করা ছাড়া কিছু না। আফগানরী দল পাচ্ছে। আপনি পাইতেছেন না। নূর আহমেদ এই সেইদিন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলছে সেও দল পাইছে। দল পাওয়া, দাম পাওয়া এগুলোর মধ্যে চামড়া, জাতি ফ্যাক্ট কখনো না।

তবে আপনার বিপিএলটা মস্ত বড় ফ্যাক্ট। এটাকে তার তাচ্ছিল্য করে ফেয়ারভাবেই৷ এখানের পারফরম্যান্স থেকে আশা করতে পারেন না।

আলজারি জোসেফের ভালো দাম পাওয়ার কথা। ভারতের সাথে ভালো খেলার জন্য নজরে আসেন। কেউ বিগ ব্যাশ দিয়ে, কেউ ব্লাস্ট দিয়ে। নজর আসার জন্য বড় বড় জায়গায় বড় বড় কাণ্ড ঘটাতে হবে৷

দল গঠনের ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো একাদশে নজরটা দেয় বেশি। ৩ জন untouchable বিদেশি নেয়। যারা ফর্ম হারালেও ৯০-৯৫% ম্যাচ খেলবেন। আরেক জন নেন এমন কাউকে যিনি দলের ব্যালেন্স করে। বা যিনি খারাপ করলে বেঞ্চের থাকে কেউ আসবে। যেমন ধরেন রাজস্থানের তিনটা ভালো বিদেশি এখন হয়ে গেছে। এখন আরেক জন যাকে কাটিং বা ফ্যাবিয়েন এ্যালেনের মতো কাউকে রাখবে।

আজকের দলগুলো লক্ষ করেন। ৭০-৮০% টাকায় শুধু একাদশে দিছে। এবার কাল হয়তো বাকি স্লটের সাথে কিছু বিকল্প নেবে৷ ২ মাসের একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট৷ এই জায়গায় বেঞ্চে মোটামুটিভাবে হইলেই হয়। কারন প্রচুর ফিল্টার করেই একজন বিদেশি নেয়া হয়।

দাম বেশি কম নিয়ে কখনোই ভাবাই খুব একটা উচিত না। আইপিএল খুব কম দেখা হলেও, অকশনটা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি। ব্যক্তিগতভাবে বেশ মজা লাগে মনে মনে কিছু একটা প্রেডিক্ট করতে। লাভ লস, ফেয়ার আনফেয়ার এই শব্দগুলো প্রতি অকশন শেষেই শুনি৷ যত সময় না ঐ খেলোয়াড় মাঠে নামছে তত সময় তার মূল্য কোনও ফ্যাক্ট হয় না। দাম নিয়ে তীর্যক একটা মন্তব্য খুবই বেফাঁস লাগে।

সাকিবের বেস প্রাইস বা তার আশাপাশে বিক্রি হবেন এটা অনেক জায়গায় বলেছি। এক সাংবাদিকের একই মন্তব্য তার গুষ্টি উদ্ধার করে দেয়া হয়েছে দেখলাম। আমি আমার জায়গা থেকে তার দাম ঐটা কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। অনেকের ভালো লাগে নি, অসন্মান করে তার দাম না। যেটুক বুঝি সেই থেকে বলছি। আমি দাম দিয়ে মরিস সাকিবের কিংবা হাসারাঙ্গা,সাকিব বা মইন আলী,সাকিবের পার্থক্য তৈরী মোটেই সমার্থন করি না।

মইন আলীকে চেন্নাই পার্টিকুলার ভূমিকায় চিন্তা করে নিয়েছে। তবে খেলার মান নিয়ে মনে করি তুলনা করা যায়। তবে ভালো খেলছে, বা গুনি প্লেয়ার হলেই দাম বেশি হইতে হবে এটা কোনও সঠিক ব্যাখ্যা না। কালকে হঠাৎ বাবর আজম অকশনেন প্রবেশ করলে ওদের দলে নিবে না, তবে হাসান আলী প্রবেশ করে বাবরের চেয়েও বেশি খরচ করবে কারন তাদের স্লটে হাসান আলী দরকার৷ এতে হাসান আলী বেটার দ্যান বাবর হয় না। তো এইসব দাম দিয়ে ক্রিকেটার বিচার করবেন। ফ্রানচাইজি গুলো Punt নেয়। পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে৷

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...