লিটনের আইপিএল অধ্যায়ের ইতি

অধীর আগ্রহে বসে থাকা। শিল্পী হয়ত তার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবেন। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্রিকেট প্রদর্শনীতে তারও থাকবে ঝলমলে এক পোর্ট্রেট। তবে সেটা আর হল কই! হতাশার ভারত সাগরে তিনি ডুবিয়ে মারলেন। দিল্লীর মসনদে আর বসা হয়নি লিটন দাসের।

আর তাতেই তো তার সমাপ্তি। এবারের আইপিএলে নিজের শেষটা হয়ত দেখে ফেলেছেন লিটন দাস। অধিকাংশ ম্যাচেই তিনি বসে রইলেন ডাগআউটে। সেখানে দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ের সাথে হাসি-ঠাট্টা হয়ত করেছেন। তবে মনের ভেতর চাপা একটা কষ্ট নিশ্চয়ই ছিল তার।

বাংলাদেশের বোর্ড পরিচালক তো নিজের চাপা কষ্ট চাপিয়ে রাখেননি। খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘একটু তো কষ্টের জায়গা, লিটন বসে আছে দেখতে ভাল লাগে না।’ একটা খেলোয়াড় তার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। এই সময়েও তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মত বেশ বড় এক আসরে নিজেকে ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারলেন না।

এর থেকে বেদনাতুর সময় বোধহয় আর হয় না। দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে বেশ আত্মবিশ্বাসী শুরুটাই পেয়েছিলেন তিনি। ঈশান্ত শর্মাকে দৃষ্টিনন্দন এক কাভার ড্রাইভ মেরে শুরু। তবে এরপর যেন স্নায়ুচাপটা আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি লিটন কুমার দাস।

অহেতুক এক শট খেলে তিনি উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। সেই নড়বড়ে আত্মবিশ্বাসটা নড়বড়ে করেছে তার একাদশের জায়গা। উইকেটের পেছনেও নার্ভাস হওয়ার বিষয়টি ছিল স্পষ্ট। আইপিলের মত তুমুল প্রতিযোগিতামূলক একটা টূর্নামেন্টে একটি ভুলই গড়ে দিতে পারে পার্থক্য। সেখানে তিনি করেছেন তিনটি ভুল। তবে ভুল না ঠিক সহজ সুযোগ মিস করেছেন।

তাতেই যেন একাদশের পথটা বন্ধ হয়ে যায় লিটনের। এবারের মৌসুমে আর সুযোগও পাচ্ছেন না তিনি। সেটা ধরে নিতে দ্বিধা নেই। বরং তাতে বাংলাদেশি ক্রিকেট দর্শকদের বিষয়টি হজম করে নিতে সুবিধাই হবে। মে মাসের নয় তারিখে বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। সেই সিরিজের জন্যে লিটনকে রাখা হয়েছে স্কোয়াডে।

বাংলাদেশ দল তিন দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করছে সিলেটে। সেই অনুশীলন শেষেই দল যাবে ইংল্যান্ডে। কার্যত লিটনকে এই সময়ের মধ্যেই দলের সাথে যোগ দিতে হবে। মাঝে সর্বোচ্চ দুইটি ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের সাথে থাকার সুযোগ পাবেন লিটন।

সেই দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন। কলকাতা সম্ভবত তাদের সেরা কম্বিনেশন খুঁজে পেয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে তারা জয় পেয়েছে, টানা চার হারের পর। দলের প্রতিটা ইউনিটই ছিল যথাযথ। এই কম্বিনেশন নিশ্চয়ই ভাঙ্গতে চাইবে না কলকাতা ম্যানেজমেন্ট।

অন্যদিকে লিটনের অনুপস্থিতিতে লিগ পর্বের সবগুলো ম্যাচ খেলা হয়ে যাবে কলকাতার। লিটন আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে ফিরে কেবল প্লে-অফের জন্যে দলের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। তবে সেখানেও বেশ কিছু সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রথমত নাইট রাইডার্সদের অবস্থান এখন পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম অবস্থানে। সেরা চার কলকাতা শেষ অবধি থাকবে কি-না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিওবা কলকাতা প্লে-অফের টিকিট কাটে, তবুও তো একাদশে পরিবর্তন আনতে চাইবে না টিম ম্যানেজমেন্ট। একটাই পথ খোলা বেশ কিছু খেলোয়াড়ের ইনজুরি। তবে সেটাও বেশ দূরের আলাপ।

সুতরাং, এবারের আসরে এই একটি ম্যাচ খেলেই লিটনকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। হয়ত আগামী আসরে লিটনের ভাগ্যের চাকা দৌড়াবে। ততদিন অবধি লিটন নিশ্চয়ই দিল্লীর বিপক্ষে খেলা সে ম্যাচটি নিয়ে আফসোস করবেন। তবে লিটনদের নিশ্চয়ই আফসোস করা মানা না।

যা কিছু বিষাদময়, সেসব পেছনে ফেলে লিটনদের এগিয়ে যেতে হয়। তবে তো নান্দনিকতার বিস্তার ঘটে। তবেই তো লিটনরা মোহনীয় করে তুলতে পারে গোটা একটা জেনারেশনকে। লিটন হয়ত সেদিকেই মনোনিবেশ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link