ইশান্ত শর্মা, বাতিল থেকে বাজির ঘোড়া

সবাই তাঁকে একপ্রকার বাতিলের তালিকাতেই ফেলে দিয়েছিলেন। জাতীয় দল তো বটেই, আইপিএলেও একপ্রকার ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন। তবে এবারের আইপিএলে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিয়ে ইশান্ত শর্মা যেন বুঝিয়ে দিলেন এভাবেও ফিরে আসা যায়!

সবাই তাঁকে একপ্রকার বাতিলের তালিকাতেই ফেলে দিয়েছিলেন। জাতীয় দল তো বটেই, আইপিএলেও একপ্রকার ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন। তবে এবারের আইপিএলে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিয়ে ইশান্ত শর্মা যেন বুঝিয়ে দিলেন এভাবেও ফিরে আসা যায়!

জাতীয় দলের হয়ে শেষ টি টোয়েন্টি খেলেছেন প্রায় এক দশক আগে। যে ফরম্যাটে ভারতীয় বোলিং লাইন আপের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই টেস্টেও মাঠে নেমেছেন সেই ২০২১ সালে। বুড়িয়ে গেছেন এমন অজুহাতে জাতীয় দল থেকে একপ্রকার নির্বাসনেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাঁকে। তরুণ পেসারদের আবির্ভাবে যেন তাঁকে নিয়ে কথা বলার কেউই নেই। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেট বোলিংয়ের ভিডিও নেই, নেই পেশিবহুল শরীরের ছবি। দল থেকে বাদ পড়ায় সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ জানাননি, বিতর্কিত কোনো মন্তব্যেও তাঁকে পাবেন না আপনি। ইশান্ত লড়াইটা চালিয়েছেন নিজের সাথেই, নীরবে নিভৃতে একাকী।

নিজের বোলিংয়ে আমূল পরিবর্তন এনেছেন ইশান্ত। আগে নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে ক্রমাগত বাউন্সার আদায় করে নেবার প্রবণতা ছিল তাঁর মাঝে। টেস্টে কার্যকরী হলেও টি টোয়েন্টিতে বাউন্সার মোটেই কার্যকরী কোনো অস্ত্র নয়। ইশান্ত নিজেও বুঝতে পেরেছেন সেটা। তাই টেকনিকে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি তূণে যোগ করেছেন স্লোয়ারের মতো অস্ত্র।  

এবারের আইপিএল তাই ইশান্তের জন্য ছিল নিজেকে নতুন রূপে জানান দেবার। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইনজুরিতে পড়েন এই তারকা। ফলে শুরুর দিকে ম্যাচগুলোতে তাঁকে পায়নি দিল্লী, মাঠেও দেখা গিয়েছে তাঁর প্রতিফলন। নখদন্তহীন দিল্লীর বোলিং সামলাতে বেগ পোহাতে হয়নি প্রতিপক্ষকে, প্রথম পাঁচ ম্যাচেই হারতে হয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারের দলকে। 

এক বছর বাদে আইপিএলে মাঠে নেমেই তাঁর বোলিংয়ে থমকে গিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স, দিল্লী পেয়েছিল টুর্নামেন্টে তাঁদের প্রথম জয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, সময় যত গড়িয়েছে পুরনো ওয়াইনের মতো সুস্বাদু লেগেছে ইশান্তের বোলিং। 

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে যেন সেই পুরনো ইশান্ত ফিরে এলেন আরো একবার। মাত্র ১৩০ রানের পুঁজি নিয়ে ইনিংসের শুরুতে গুজরাটের টপ অর্ডারকে আটকে রেখেছেন। বিজয় শংকরকে আউট করা ডেলিভারিতে তো হতবাক করে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে। ডেল স্টেইন তো বিস্ময় সামলাতে না পেরে টুইট করেছেন এটাই তাঁর দেখা সেরা নাকল বল। 

তবে নিজের সেরাটা যেন জমিয়ে রেখেছিলেন শেষ ওভারের জন্য, গুজরাটের তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন মোটে ১২ রান। এরপর রীতিমতো অবিশ্বাস্য এক ওভার করলেন ইশান্ত। স্বীকৃত দুই ফিনিশার হার্দিক পান্ডিয়া এবং রাহুল তেওয়াতিয়াকে নাকাল করলেন দুরন্ত পেস আর ইয়র্কারে। তাঁর অনবদ্য বোলিংয়ের সুবাদেই পাঁচ রানের অবিস্মরণীয় এক জয় পায় দিল্লী।

ইশান্ত হয়তো ভারত জাতীয় দলে আর ফিরবেন না। আইপিএলেও তাঁর পরিসংখ্যানটা আহামরি নয়, মন্দের ভালো। তবে ক্রিকেটপ্রেমীরা ইশান্তকে পরিসংখ্যান নয়, বরং মনে রাখবেন তাঁর হাল না ছাড়া মানসিকতার জন্য। তাঁর মতো করে ফিরে আসার গল্পটা যে সবাই লিখতে জানেন না! 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...