‘জশ’খ্যাতির সময়

রামায়নে লঙ্কা বধের পেছনে ছিলেন হনুমান। আর ২২ গজে এবার লঙ্কা বধের পেছনে বল হাতে মূল কারিগর জশ হ্যাজেলউড। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটেও হ্যাজি এখন অন্যতম সেরা একজন তারকা। গেল এক বছরে তাঁর ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স অজিদের পেস শিবিরে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ঘরের মাটিতে অজিদের জন্য তিনি হতে পারেন তুরুপের তাস।

চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সরকার পতন আর খাদ্য, জ্বালানি সংকটে চরম দুর্দশা দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কার। কঠিন এক অবস্থার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে দেশটি। এই দুরবস্থার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল এখন শ্রীলঙ্কা সফরে। কঠিন মূহুর্তে ক্রিকেট দিয়ে সমর্থকদের মনে খানিকটা স্বস্তি ফেরানো যায় কি-না সেটাও একটা ভাবনা লঙ্কানদের।

কিন্তু, দেশের অর্থনীতির মতই দুর্দশার চিত্র লঙ্কান ক্রিকেটেও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত শুরুর পরেও মুখ থুবড়ে পড়ে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অসহায়ত্ব দেখিয়ে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে লঙ্কানরা। আর লঙ্কা ধসের পেছনের মূল কারিগর ছিলেন অজি পেসার জশ হ্যাজেলউড।

ক্যারিয়ারের প্রথম ৮ বছরে মাত্র ৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি কতটা অধারাবাহিক সেটা এই ক্ষুদ্র পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। টেস্ট ও ওয়ানডে – দুই ফরম্যাটে বর্তমান বিশ্বের সেরা পেসারদের তালিকা করলে তাতে অনায়াসে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিবেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা জশ হ্যাজেলউড।

কিন্তু প্রসঙ্গ যখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের, সেখানে তিনি খানিকটা পিছিয়ে। আরেকটু স্পষ্ট করে যদি বলি, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনি বছর খানেক আগেও ছিলেন অনিয়মিত আর অধারাবাহিক এক মুখ। কিন্তু বছর খানেকের মাথায় টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার পেস বিভাগের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেন এই অজি পেসার। সেই ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও।

লঙ্কানদের ডেরায় ম্যাজিকেল স্পেলে মাত দিয়েছেন হ্যাজি। নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর দুর্দান্ত এক স্পেলে ধসিয়ে দিয়েছেন লঙ্কান ব্যাটিং শিবির।

কলম্বোর প্রেমাদাসায় প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১২ ওভার না যেতেই লঙ্কানদের সংগ্রহ এক উইকেটে একশো রান। বড় সংগ্রহের স্বপ্ন যখনই চোখে ভাসছিল – তখনই সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে বল হাতে আসেন হ্যাজেলউড। তাসের ঘরের মতন ভেঙে পড়ে লঙ্কান ব্যাটিং শিবির। ১০০ রানে ১ উইকেট থেকে ১২৮ রানেই শেষ লঙ্কানদের ইনিংস! মাত্র ২৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং শিবির।

প্রথম ওভারে দেন মাত্র ২ রান। এরপরের ওভারে শিকার করেন দানুশকা গুনাথিলাকার উইকেট। ১৪তম ওভারে এসে ভানুকা রাজাপাকশা ও দাসুন শানাকাকে ফেরান শূন্য রানে। ৪ ওভারে ১৫ ডটে মাত্র ১৬ রান দিয়ে শিকার করেন ৪ উইকেট। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে চার উইকেট পাওয়া বিরাট ব্যাপার। আর সেই কাজটা জশ হ্যাজেলউড পেয়েছেন চারবার, এর মধ্যে শেষ তিনটি এল গত দু’বছরের মধ্যে।

হ্যাজেলউডের সামনে আছেন কেবল এখন পাকিস্তানের সাবেক পেসার উমর গুল। গুল ছয়বার নিয়েছেন চার উইকেট। খুব দ্রুতই গুলকে যদি হ্যাজেলউড ছাড়িয়ে যান, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই!

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর ২০২০ সাল পর্যন্ত খেলেছেন মোটে ৯ ম্যাচ। এই ৯ ম্যাচে ৯ এর বেশি ইকনমিতে নেন মাত্র ৮ উইকেট। তবে গেল এক বছরে বদলে গেছে সেই চিত্র। ১৯ ম্যাচে ৬ এর কম ইকনমিতে শিকার করেছেন ৩৫ উইকেট। স্রেফ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি নয় – ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর জার্সিতে ১২ ম্যাচে ৮.১১ ইকনমিতে এই পেসার শিকার করেন ২০ উইকেট।

রামায়নে লঙ্কা বধের পেছনে ছিলেন হনুমান। আর ২২ গজে এবার লঙ্কা বধের পেছনে বল হাতে মূল কারিগর জশ হ্যাজেলউড। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটেও হ্যাজি এখন অন্যতম সেরা একজন তারকা। গেল এক বছরে তাঁর ঈর্ষনীয় পারফরম্যান্স অজিদের পেস শিবিরে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ঘরের মাটিতে অজিদের জন্য তিনি হতে পারেন তুরুপের তাস।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...