এশিয়া কাপ এবং বাংলাদেশ: আশা-ভরসার দোলাচলে

বাংলাদেশের গ্রুপে আছে মহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি বাহরাইন, এছাড়া আছে তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মালয়েশিয়া। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তো নিশ্চিতই, রানার আপ হলেও ভাল সম্ভাবনা থাকবে এশিয়া কাপ খেলতে পারার।

ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার কত ম্যাচই চলছে; চলছে উয়েফা নেশন্স লিগের দ্বৈরথ। ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার ফুটবলের ভক্তরা রীতিমতো বুঁদ হয়ে আছে টিভি পর্দা। আর এরই মাঝে মাঠে নামতে প্রস্তুত হয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। না, কোন প্রীতি ম্যাচ নয় বরং এশিয়ান কাপ ফুটবলের মূল মঞ্চে জায়গা পেতে বাছাইপর্ব খেলতে নামছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

দেশের মানুষ যখন ভিনদেশি মেসি-রোনালদোর খেলায় মগ্ন তখন মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ ফুটবল দল ব্যস্ত স্বপ্নপূরনে, এশিয়ান কাপে জায়গা পাওয়ার স্বপ্ন। ফুটবলে এমনিতেই পিছিয়ে থাকা একটা দল বাংলাদেশ, আর তার উপর স্বংশ্লিষ্টদের উদাসিনতায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সাধারন দর্শকরাও। আর তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে নেই কোন উন্মাদনা।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব এবং ২০২৩ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব শুরু হয়েছিল একইসাথেই। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সুবিধা করতে না পারলেও বাংলাদেশ দল জায়গা করে নিয়েছে এশিয়ান কাপের মূল বাছাইপর্বে। এই রাউন্ডে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ মোট ২৩টি দল। সবমিলিয়ে এই ২৪টি দলকে ভাগ করা হয়েছে মোট ছয়টি গ্রুপে। ছয়টি গ্রুপের ছয়টি চ্যাম্পিয়ন দল এবং পাঁচটি রানার আপ দল সুযোগ পাবে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে।

বাংলাদেশের গ্রুপে আছে মহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি বাহরাইন, এছাড়া আছে তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মালয়েশিয়া। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তো নিশ্চিতই, রানার আপ হলেও ভাল সম্ভাবনা থাকবে এশিয়া কাপ খেলতে পারার।

জেনে রাখা ভাল, বাহরাইনের বর্তমান ফিফা র‍্যাংকিং ৮৯, তুর্কিমেনিস্তানের ১৩৪ আর মালয়েশিয়া’র ১৫৪। অন্যদিকে বাংলাদেশের র‍্যাংকিং একেবারে তলানিতে, ১৮৬ তে।

র‍্যাংকিং আর বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়াই বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য অনেক বড় অর্জন। আর তার জন্য প্রয়োজন প্রত্যেক খেলোয়াড়ের দৃঢ় মনোবল আর লড়াই করার প্রেরনা।

না, আমাদের বড় বড় স্টেডিয়াম নেই। নেই একটা জাঁকজমকপূর্ন লিগ। এমনকি মানসম্মত খেলোয়াড় বিশেষ করে স্ট্রাইকারের ঘাটতিও প্রকট। কিন্তু এত কিছুর পরেও একটা লাল-সবুজ পতাকা আছে, আছে গায়ের জার্সিটা। রক্তে আগুন জ্বালানোর জন্য এই যথেষ্ট। আর ম্যাচের নব্বই মিনিটের দ্বৈরথে জ্বলে উঠতে পারলে নিশ্চিতভাবেই শেষ হাসি হাসার সামর্থ্য রয়েছে টাইগারদের।

শক্তিশালী বাহরাইন কিংবা স্বাগতিক মালয়েশিয়াকে টেক্কা দিয়ে পয়েন্ট টেবিলে উপরে থাকা বাংলাদেশের জন্য আপাতদৃষ্টিতে কঠিন একটা পথই। কিন্তু পরাজয়ের বলয় ভাঙ্গার এই একটা সুযোগ, দেশের মৃতপ্রায় ফুটবলকে বাঁচিয়ে তোলার একটা সুযোগ পাওয়া গিয়েছে এবার। সুযোগের শতভাগ সদ্ব্যবহার করতে না পারলে আক্ষেপ থেকে যাবে। আর তাই ‘কঠিনেরেই ভালবেসে’ জয় করতে হবে।

প্রথম ম্যাচেই ৮ই জুন বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে বাহরাইনের। আর এরপর ১১ই জুন একই সময়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান আর শেষ ম্যাচে ১৪ তারিখ সন্ধ্যায় সাতটায় স্বাগতিক মালয়েশিয়া’র বিপক্ষে নামবে টিম টাইগার্স।

  • বাংলাদেশ দল: আনিসুর রহমান জিকো, আশরাফুল ইসলাম রানা, মোহাম্মদ নাইম, বিশ্বনাথ ঘোষ, রিমন হোসেন, টুটুল হোসেন বাদশা, রিয়াদুল রাফি, ইয়াসিন আরাফাত, রহমত মিয়া, ইসা ফয়সাল, জামাল ভূঁইয়া, আতিকুর রহমান ফাহাদ, বিপলু আহমেদ, মারাজ হোসেন, সোহেল রানা, পাপন সিং, রাকিব হোসেন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জাফর ইকবাল, ফয়সাল ফাহিম এবং সাজ্জাদ হোসেন।

ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন তপু বর্মন, তারিক কাজী, মাহবুবুর রহমান সুফিলের মত নিয়মিত সদস্যরা। এদের মধ্যে তপু আর তারিকের অনুপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই ভোগাবে বাংলাদেশের ডিফেন্স লাইনকে।

বিশ্বকাপ তো বাংলাদেশের জন্য অলীক কল্পনা, এশিয়া কাপেও সর্বশেষ সুযোগ পেয়েছিল সেই আশি-নব্বইয়ের দশকে। আমাবস্যার চাঁদের মতই হয়ে উঠেছে এশিয়া কাপের মূল পর্বে জায়গা পাওয়া। এবারও কাগজে-কলমে সম্ভাবনাটা কমই তারপরও ফুটবলের মাঠে কতশত অঘটন দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৬৪ বছর বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছে ওয়েলস, আর তিন যুগ পর বিশ্বকাপে জায়গা পেয়েছে কানাডা।

এসব গল্প শুনে আমাদেরও আশার পালে হাওয়া লাগে। গুটিকয়েক বাংলাদেশি ভক্ত হয়তো আশা করে আছে বাংলাদেশও লম্বা খরা কাটিয়ে ফিরবে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে। জেগে উঠবে ফুটবলের প্রান। ইউরোপীয় ফুটবলের পাশাপাশি দেশের ফুটবল নিয়েও আগ্রহ জেগে উঠবে। আর তার জন্য এখন শুধু কয়েকটা পয়েন্ট প্রয়োজন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...