চেন্নাইয়ের গুগলির চমক অস্ট্রেলিয়ায়

একেবারেই নেই কোন আলো। অন্ধকার নয় ঠিক। তবে ওই যে স্পটলাইট বিষয়টা নেই জীবনে। তবে ইচ্ছে আছে, একদিন সব আলো নিজের করে নেবার। সেই ইচ্ছের প্রতিফলনই যেন ঘটালেন কার্তিক মেরিয়াপ্পান। হুট করেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মত মঞ্চের অন্যতম চরিত্রে পরিণত হয়ে গেলেন কার্তিক। নিজের জীবনের গল্প বলবার সুযোগটা যেন পেয়ে গেলেন।

জন্মটা হয়েছিল চেন্নাইয়ে। তবে ক্রিকেট খেলাটা তিনি শুরু করেননি ভারতে। ক্রিকেটের পুন্যভূমির মাঠে দৌড়ে বেড়ানোর আগেই তাঁর পরিবার পাড়ি জমিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০১২ সাল নাগাদ সেখানেই থিতু হয়ে মেরিয়াপ্পানের পরিবার। বয়সটা তখন দশ কার্তিকের। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের অধিকাংশ বাবা-মায়ের মতই তাঁর পরিবার সখের বসেই খেলতে পাঠিয়েছিল তাঁকে ক্রিকেট। তবে নিজের প্রতিভার জোরে আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে কার্তিক মেরিয়াপ্পান।

শুধু বিশ্বকাপের মঞ্চে এসেই ক্ষান্ত হননি কার্তিক। তিনি নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পুরো বিশ্বকে। সে কাজটা করলেন। বনে গেলেন রেকর্ডের মালিক। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিকের মালিক তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের হিসেবে পঞ্চম বোলার হিসেবে তিনি তুলে নিয়েছেন হ্যাট্রিক। ২২ বছর বয়সী তরুণ এই লেগ স্পিনার নিশ্চয়ই একটা ঘোরের মধ্য়ে রয়েছেন। বিশ্বকাপের মত বিশাল আয়োজনে হ্যাট্রিক করারটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।

তাও আবার শ্রীলঙ্কার মত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় ঠাসা একটা ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে। বাছাই পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে গেল এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন দলের মুখোমুখি হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেই দলের গুরত্বপূর্ণ সদস্যই ছিলেন কার্তিক মেরিয়াপ্পান। তবে ম্যাচে চালকের আসনে বসে ছিল শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের ১৫ তম ওভার যখন করতে আসেন কার্তিক তখন শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দুই উইকেট হারিয়ে ১১৪। বড় টার্গেটের দিকেই ছুটছিল শ্রীলঙ্কা। তবে আচমকা একটা ঝড় বয়ে গেল শ্রীলঙ্কার সাজানোর পরিকল্পনার উপর দিয়ে।

কার্তিক মেরিয়াপ্পান নামক সে ঝড়ে খানিকটা পথ ভ্রষ্ট হয়ে গেল গোটা শ্রীলঙ্কা। পরপর তিন বলে নেই তিন উইকেট। ভানুকা রাজাপাকশে, চারিথ আসালাঙ্কা ও দাসুন শানাকার মত বাঘা বাঘা ব্যাটাররা মুহূর্তের মধ্যে সাজঘরে। সবকিছুই যেন একটা পলকে হয়ে গেল। ১৫ তম ওভারের শেষ তিন বলে মেরিয়াপ্পান নিজের নামটি লিখে গেলেন ক্রিকেট ইতিহাসে। রাজাপাকশে হার্ডহিটার গোছের খেলোয়াড়। ইনিংসের শেষ দিকে তিনি ব্যাট চালাবেন সেটা ভাল করেই জানতেন কার্তিক।

সে জন্য কার্তিক বলটা রাজাপাকশের ব্যাট থেকে দূরেই রাখার প্রচেষ্টা করলেন। আর তাতেই মিলল ফল। কাভার অঞ্চলে ক্যাচ দিয়ে চলে রাজাপকশের ঠিকানা সাজঘর। এরপর আরও এক বাঁ-হাতি আসালাঙ্কা এলেন। একই পরিকল্পনা কার্তিকের। এবারও সফল। কট বিহাইন্ড দ্য উইকেট। হ্যাট্রিক করবার সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের স্নায়ুচাপটা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন কার্তিক। তিনি যেন এক লহমার জন্য ভুলে গেলেন সবকিছু। মাথায় শুধু উইকেট তুলে নেওয়ার চিন্তা।

আর সেই ভাবনার উত্তর- গুগলি। লেগস্পিনারদের সবচেয়ে কার্য্কর এক অস্ত্র। আর সে অস্ত্রেই কুপোকাত লংকান অধিনায়ক শানাকা। তিনি যেন বুঝতেই পারলেন না বলের লাইন আর হাওয়ায় ভেসে বেড়ানোর সময়টুকু। ব্যাস! যা হবার তাই হল, ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল গিয়ে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। এরপর কার্তিক মেরিয়াপ্পানের এক ছুট। সে দৌড়ে তিনি জায়গা করে নিলেন ব্রেট লি, কার্টিস ক্যাম্ফার, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কাগিসো রাবাদাদের পাশে।

স্মরণীয় এই ম্যাচে মাত্র ১৯ রান খরচা করেছেন কার্তিক। তবে কার্তিকের ঘূর্ণিতে আগুন ঝড়লেও গোটা আরব আমিরাত দল ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। ফলস্বরুপ হার বরণ। এই হারে অবশ্য বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু কার্তিক মেরিয়াপ্পান রয়ে যাবেন অবিস্মরনীয় হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link