Social Media

Light
Dark

ডি ব্রুইনা যেন অন্য ধাঁতুতে গড়া

প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়া কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজটা তাঁদের করতে হয়। শুধু বল ছিনিয়ে নিলেই কি কাজ শেষ? না। বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়কে বল জোগান দেওয়ার কাজটাও তাঁদের করতে হয় নিপুণভাবে। সম্ভব হলে তাঁদেরও গোল করতে হয়। মিডফিল্ডারের প্রধান কাজ তো এগুলাই। না কি?

ads

কিছু আছেন ব্যতিক্রম। বহুমুখ কর্মশক্তিসম্পন্ন। নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার পাশাপাশি দলের রক্ষণ ও আক্রমণ ভাগেও সাহায্য করে থাকেন।

তেমনই একজন নিয়ে কথা বলি।

ads

যার নাম বলবো,  ফুটবল মাঠে এমন মিডফিল্ডার দেখা যায় খুব কমই। উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি, জন্ম বেলজিয়ামের ড্রনগেনে। নাম – কেভিন ডি ব্রুইনা।

আনন্দের পসরা সাজিয়ে বসায় যে ফুটবলের জুড়ি নেই, সেই ফুটবলে কেভিন ডি ব্রুইনার বল নিয়ে কারুকাজ দেখার চেয়ে আনন্দদায়ী খুব বেশি কিছু নেই।

ডি ব্রুইনে যেন অন্য ধাতুতে গড়া। বর্তমান বিশ্বে একেবারে ‘কমপ্লিট’ ফুটবলার ধরতে গেলে, তাঁর নামও নিতে হবে।মূলত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও তাঁকে যে পজিশন দেওয়া হয়, সেখানেই পারফর্ম করেন। যেন  সত্যিই এক অলরাউন্ডার। প্লেমেকার, ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার, বক্স টু বক্স, উইঙ্গার এবং সেকেন্ড স্ট্রাইকার যে পজিশনে দেওয়া হোক না কেন সে নিজের সামর্থ্যের জানান দিবেই।

তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক শক্তি, বল পায়ে তাঁর গতি; তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। শূন্যে ভাসানো বলেও সে ভয়ংকর। তাঁর ড্রিবলিং দক্ষতা, ডিফেন্স ছেড়া পাস, পজিশনাল জ্ঞান,  সুকৌশলী বুদ্ধিমত্তা, বল পায়ে তাঁর নড়াচড়া যেকোন প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে জায়গা করে নিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। গোল করাতে নয়, গোল করতেও সমান দক্ষ বহুমুখী কর্মশক্তিসম্পন্ন এই মিডফিল্ডার।

বেলজিয়ান ক্লাব জেঙ্কের হয়ে তাঁর সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু। ৯৭ ম্যাচে ১৬ গোল করেছিলেন।এই ক্লাবের হয়ে বেলজিয়ান লিগ জিতেছিলেন। এরপরে ইংলিশ ক্লাব চেলসি এবং জার্মান ক্লাব ওয়ার্ডার ব্রেমেন ও উলসবার্গের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন।সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে উলসবার্গের হয়ে ২০১৪-১৫ মৌসুমে ডিএফবি পোকাল জিতেছিলেন। হয়েছিলেন বুন্দেসলিগার সেরা খেলোয়াড়।

২০১৫ সালের গ্রীস্মে,  রেকর্ড ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার সিটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। পারফরমেন্স করেই সিটিজেনদের মধ্যমণি হয়ে যান এই বেলজিয়ান ফুটবলার। সিটিতে যোগ দেওয়ার পর যেন অন্য ব্রুইনে দেখছে গোটা ফুটবল বিশ্ব। পারফর্ম করে দিনের পর দিন নিজেকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন। সিটির জার্সিতে ২৫৫ ম্যাচে করেছেন ৬৫ গোল এবং ১০৫ অ্যাসিস্ট। যদিও  সংখ্যা দিয়ে ডি ব্রুইনেকে বিচার করা যায় না।

সিটির হয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। দুটি প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন (পড়ুন তিনটা)। এই মৌসুমে তো শিরোপায় এক হাত দিয়ে রেখেছেন। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে  এই মৌসুমেও যে শিরোপা উৎসব করবে ডি ব্রুইনেরা এটা তো বলাই যায়। লিগ কাপ চারটা, এফএ কাপ ও কমিউনিটি শিল্ড জিতেছেন একটা করে। এরমধ্যে ১৭-১৮ মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের একমাত্র দল হিসেবে রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট অর্জন করে জিতেছেন শিরোপা।

ডি ব্রুইনা ‘প্রিমিয়ার লিগ প্লেমেকার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন দুই বার। ম্যানচেস্টার সিটির প্লেয়ার অব দ্য সিজন নির্বাচিত হয়েছেন তিন বার। প্রিমিয়ার লিগ প্লেয়ার অব দ্য সিজন হয়েছেন একবার। একক কোনো মৌসুমে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করার রেকর্ড ও করেছেন।

বেলজিয়ামের হয়ে ৮০ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। ২০১৮ বিশ্বকাপে  তৃতীয়  হয়েছিল বেলজিয়াম। জাতীয় দলের হয়ে এটাই তাঁর বড় কোনো সাফল্য।

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে চান এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। নতুন চুক্তি করেছেন ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

জীবনে দরকার রোনালদো-মেসিদের। তার চেয়ে বেশি দরকার সম্ভবত কেভিন ডি ব্রুইনেদের। সাফল্যের পিছনে কলকাঠি যে ডি ব্রুইনারাই  নাড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link