রাদামেল ফ্যালকাও গার্সিয়া জারাটে।
একজন ফুটবল সমর্থক হলে নামটা দেখা মাত্র চিনে ফেলার কথা। নাকি ভুলে গেলেন! মেসি, রোনালদোর সময়ে আসলে কার নামই বা মনে থাকে? তবে যারা সত্যি ফুটবল দেখেন, তাঁদের কাছে এটা নতুন কোনো নাম নয়। একটা সময় বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন ছিলেন তিনি।
‘দ্য টাইগার’ ডাকনামে ডাকা হয় তাঁকে। অনেকে আবার আদর করে ‘কিং অব দ্য ইউরোপা লিগ’ বলেও ডাকেন। ডাকারও যথেষ্ট কারণ আছে। ইউরোপা লিগে পারফর্ম করা তো রীতিমত অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন।
কলম্বিয়ার সান্তা মারটা শহরে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জন্ম তাঁর। খেলেন নিজের প্রিয় ফরোয়ার্ড পজিশনে।
প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। কলম্বিয়ার সেকেন্ড ডিভিশনে। এরপর যখন আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটে যোগ দেন। তখন থেকেই আলোচনায় আসতে শুরু করেন। রিভার প্লেটের হয়ে ৯২ ম্যাচে করেছেন ৩৭ গোল। প্রিমেরা ডিভিশন জিতেছেন আর্জেন্টাইন ক্লাবটির হয়ে।
ভালো পারফরমেন্স তাঁকে এনে দিয়েছিল প্রথম ইউরোপে খেলার সুযোগ। রিভার প্লেট থেকে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তো তাঁকে কিনে নেন। আস্থার প্রতিদানও ভালো মতোই দেন। পোর্তোর হয়ে জিতেছেন ইউরোপা লিগ, দুইটা প্রিমেইরা লিগাও। পোর্তোর জার্সি গায়ে তাঁর পারফরমেন্স ছিল অবিশ্বাস্য। তাদের হয়ে ৮৬ ম্যাচে করেছেন ৭২ গোল! পোর্তোর আন্তর্জাতিক ক্লাব প্রতিযোগিতায় সেরা গোলদাতা এই কলম্বিয়ানই। প্রথম কোনো কলম্বিয়ান প্লেয়ার হিসেবে জিতেছেন পর্তুগিজ গোল্ডেন বুট।
ফ্যালকাও যেন তখন উড়ছিলেন। তাঁকে দলে পেতে মরিয়া ছিল বড় বড় ক্লাব গুলো। ২০১১ সালে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তাঁদের ক্লাব ইতিহাসের রেকর্ড করে ৪০ মিলিয়নের বিনিময়ে ফ্যালকাওকে নিজেদের করে নেয়।
স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়েও আলো ছড়িয়েছেন এই ‘নাম্বার নাইন’। ৯১ ম্যাচে ৭০ গোলই তার প্রমাণ। যোগ দেওয়ার পরের বছরই অ্যাটলেটিকোকে ইউরোপা লিগ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতান। বছর শেষ করেন টপ স্কোরার হিসেবে। এমন অবিশ্বাস্য পারফরমেন্স তাঁকে এনে দিয়েছিল ২০১২ সালে ফিফা ফিফপ্রো ওয়ার্ল্ড একাদশের জায়গা। ঐ বছরই ফিফা ‘ব্যালন ডি’অর’ লিস্টের সেরা পাঁচের একজন ছিলেন এই কলম্বিয়ান।
এবার ফ্যালকাও এর উপর চোখ পড়ে ফ্রেঞ্চ ক্লাব মোনাকোর। রেকর্ড ৬০ মিলিয়নে মোনাকো কিনে নেয় তাঁকে। যদিও ঐ ক্লাবের হয়ে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। দুইবার ধারে খেলেছেন ম্যানইউ ও চেলসির হয়ে। আবার শেষ পর্যন্ত মোনাকোতে ফিরে আসেন। মোনাকোতে বছর চারেকের ক্যারিয়ারে ৮০ উপরে গোল করেছেন। সাফল্য বলতে কেবল একটা লিগ ওয়ান ট্রফি জয়।
ইউরোপা লিগের কথা বললে, একটা নাম তো আসতেই হবে- রাদামেল ফ্যালকাও। ইউরোপা লীগ মানেই তো ফ্যালকাও।
পরপর দুই ক্লাবের হয়ে ইউরোপা লিগ জেতার অনন্য রেকর্ড। ইউরোপা লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৩০ গোল করে শীর্ষে। টানা ২ মৌসুমে ইউরোপা লিগের সেরা গোলদাতা। পরপর দুইবার ফাইনালে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। এক সিজনে ১৭ গোল করার রেকর্ড। ইউরোপা লিগে সর্বোচ্চ ৩ টা হ্যাটট্রিক। নকআউট পর্বে এক ম্যাচে ৪ গোল করার রেকর্ড, নকআউট পর্বে সর্বোচ্চ ২০ গোল করার রেকর্ড। ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩ গোল। সব রাদামেল ফ্যালকাও এর দখলে।
এবার বুঝতে পারছেন কেন তাঁকে ইউরোপা লিগের রাজা বলা হয়?
শুধু কী তাই, উয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে একমাত্র হ্যাটট্রিক করা ফুটবলারও তিনি। কলম্বিয়ার ইতিহাসের সেরা গোলদাতাও এই স্ট্রাইকার। ৩৫ গোল করেছেন এই লাতিন দেশটার হয়ে।
বর্তমানে খেলছেন তুরষ্কের ক্লাব গালাত্যাসারাইয়ে। বয়স ৩৫ পেরিয়েছে। অথচ, এখনো গোল করে চলেছেন। বয়সটা তাঁর কাছে যেন স্রেফ একটা সংখ্যা। তুর্কি সুপার লিগে এই মৌসুমে ৮ ম্যাচে ৫ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট করেছেন। এখনো যে পারফরমেন্সে মরিচা ধরেনি এটাই তার প্রমাণ।