সেঞ্চুরিয়ন, বক্সিং ডে টেস্ট, সেঞ্চুরি আর লোকেশ রাহুল। এ যেন এক অদ্ভুত সখ্যতার এক জাল। ২০২১ সালে এই সেঞ্চুরিয়নে বক্সিং ডে টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই টেস্টের প্রথম দিনেই শতক পূর্ণ করেছিলেন লোকেশ রাহুল।
দুই বছর বাদে ঠিক একই দৃশ্যের চিত্রায়ণ হলো সেই সেঞ্চুরিয়নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন লোকেশ রাহুল। বক্সিং ডে-তে স্যাঁতসেঁতে পিচের কারণে সকালের সেশনে খেলা শুরু হতে দেরী হয়ে ৩০ মিনিট।
কিন্তু, এর মধ্যেই উইকেট থেকে যা সহায়তা পাওয়ার তা পেয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার চার পেসার। রাবাদার পাশাপাশি শুরুর দিনেই ভারতীয় ব্যাটারদের বিপরীতে রীতিমতো একেকটা গোলা ছুঁড়েছিলেন ন্যান্দ্রে বার্গার ও মার্কো ইয়ানসেনরা।
চা-বিরতির আগেই ১৭৬ রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। তবে ভারতের ইনিংসের বাকি গল্পটা লিখেছেন রাহুল। শার্দূল ঠাকুরের সঙ্গে ৪৩ এবং জাসপ্রিত বুমরাহর সঙ্গে ২৭ রানের জুটি গড়েন তিনি।
বৃষ্টি এবং আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে রাহুলের জুটি অবিচ্ছিন্ন ছিল ১৭ রানে। তাতে ৮ উইকেটে ২০৮ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করে ভারত।
লোকেশ রাহুল ৭০ রানে অপরাজিত থেকে নিঃসঙ্গ যোদ্ধার মতো লড়াই করেছিলেন বটে। তবে প্রথম দিনে তাঁকে ছাপিয়ে যান ৫ উইকেট নেওয়া কাগিসো রাবাদা। সপ্তম দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়ে ফেলেন ২৮ বছর বয়সী এ পেসার।
তবে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুর গল্পটা ছিল শুধুই রাহুলময়। ক্রমাগত উইকেট পতনের চাপে ভারতের ইনিংস এমনিতেই মন্থর হয়ে এগোচ্ছিল। তবে হাতে মাত্র দুই উইকেট নিয়েই এ দিন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছিলেন লোকেশ রাহুল। এ যাত্রায় তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে লোকেশ রাহুল এগিয়ে যাচ্ছিলেন শতকের দিকেই। ৮৯ রানে ব্যাটিং করার সময় ছক্কা মেরে ৯৫ রানে পৌঁছান রাহুল। কিন্তু ঐ ওভারেই আউট হয়ে যান সিরাজ। বাকি ছিলেন একমাত্র প্রসিধ কৃষ্ণা। এমতাবস্থায় সেঞ্চুরির পথে খুব একটা সময় নেননি রাহুল।
সেই ওভারের শেষ বলে ছক্কা মেরে শতরান করেন এ ব্যাটার। টেস্টে যেটি তাঁর অষ্টম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পথে ১০১ রানের এ ইনিংসটি তিনি সাজান ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে। অর্থাৎ ৮০ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে।
এই সেঞ্চুরি দিয়েই আবার অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন লোকেশ রাহুল। প্রথম সফরকারী উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে টেস্টে শতরান করেন ভারতীয় এ ব্যাটার। এর আগে বিশ্বের আর কোনও উইকেটরক্ষক-ব্যাটার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে সেঞ্চুরিয়নে টেস্ট সেঞ্চুরি করতে পারেননি।
তবে সেঞ্চুরির পর আর নিজের ইনিংসকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি রাহুল। পরের ওভারে আবার বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। ১০১ রানে ফেরেন এ ব্যাটার। সেই সঙ্গে ২৪৫ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস।
সবশেষ ১০ ইনিংসে কোনো ফিফটি করতে না পারায় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। এবার স্বরূপে ফেরাটা রাঙালেন দারুণ এক ইনিংস খেলে। বক্সিং ডে টেস্টে ভারতকে লড়াইয়ে রাখলেও একাই, এক রাঙা শতকে। ক্যারিয়ার জুড়ে এই সব ইনিংসই তো অমরত্বের পথে একজন ক্রিকেটারকে এগিয়ে দেয়। লোকেশ রাহুল নিশ্চয় সেই পথটাই পাড়ি দিতে চাইবেন।