ভারতের বিপক্ষে বহুল প্রতীক্ষার এক ম্যাচে মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান। মূলত চাপটা পাকিস্তানের উপর একটু বেশিই ছিল। প্রথমত এখনকার ভারতের সাথে মাঠে নামাটা যেকোনো দলের জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বিশ্বকাপের এর আগে কখনো ভারতের বিপক্ষে জিততে না পারার একটা আক্ষেপও ছিল। ফলে জবাবটা দেয়ার একটা তাড়নাও ছিল।
প্রথমেই দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তানের পেস বোলিং আক্রমণের বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন বাঁহাতি এই পেসার। এবারের বিশ্বকাপেও শুরুটা করেছেন দুরন্ত গতিতে। নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নিলে রোহিত শর্মার উইকেট। আফ্রিদির এই বলটার উত্তরই যেন জানা ছিল রোহিত শর্মার মত ব্যাটসম্যানের। আর সে জন্য ম্যাচ শেষে একাদশে রোহিত শর্মার জায়গা নিয়েও উঠল প্রশ্ন।
এরপর অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার স্বপ্ন দেখছিল ভারত। তবে আবারো আঘাত হানলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। রাহুলও যেনো জানেননা ঠিক কী করা উচিৎ। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইন আপকেও অসহায় মনে হচ্ছিল। আকাশে উড়তে থাকা ভারতকে একাই মাটিতে টেনে নিয়ে এসেছিলেন আফ্রিদি। এরপর এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কোহলিকেও ফেরান তিনি।
বাঁহাতি এই পেসারের কাছে সেদিন অসহায় আত্মসমর্পন করেছিল ভারত। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাজিত হন পাকিস্তান ক্রিকেটের সময়ের অন্যতম সেরা এই পেসার। তবে এই বিশ্বকাপে বাঁহাতি পেসারদের ভয়াবহতার এটিই একমাত্র উদাহরণ না। আফ্রিদি ছাড়াও এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাঁহাতি পেসাদের রাজত্ব চলছে।
ওদিকে নবীন দল নামিবিয়ার বাঁহাতি পেসার রুবেন ট্র্যাম্পেলম্যানও বিশ্বকাপে নিজের কার্যকারিতার প্রমাণ দিচ্ছেন। তাঁর স্যুইং এ পরাস্ত হচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। স্কটল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ক্যালাম ম্যাকলিয়েডকে এমনই একটি বলে আউট করেছেন ট্র্যাম্পেলম্যান। বাঁহাতি বোলারদের এই সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হচ্ছেন বিশ্বকাপের দর্শকরা। তিনি ম্যাচের প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন তিনবার। সৌন্দর্য্য বাড়ছে ক্রিকেটেরও।
এছাড়া নামিবিয়ার আরেক পেসার জ্যান ফ্রাইলিঙ্কও নিজের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। এই বিশ্বকাপে এখন অবধি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের একজন তিনি। সবমিলিয়ে বাঁহাতি পেসাররা ন্যাচারাল যে সুবিধা গুলো ক্রিকেটে পান সেগুলোর পুরো ব্যবহার দেখা যাচ্ছে এই বিশ্বকাপে।
ওদিকে ইংল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার টাইমাল মিলস তো বাংলাদেশের বিপক্ষে রীতিমত এক প্রদর্শনী খুলে বসেছিলেন। কাটার ও হার্ড লেন্থের বল দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ধুকিয়েছেন তিনি। এছাড়া এবারের বিশ্বকাপের কিছু মাঠ এক পাশে একটু বড়। বাঁহাতি পেসাররা এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারছেন।
মিডল ওভার জুড়েও দেখা যাচ্ছে বাঁহাতি পেসারদের দাপট। তারচেয়েও বড় কথা এই বিশ্বকাপে দুনিয়ার সেরা ব্যাটসম্যানদেরও বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে সংগ্রাম করতে দেখা যাচ্ছে। কেন উইলিয়ামসন, রোহিত শর্মা, কোহলি তিনজনেরই বাঁহাতিদের বিপক্ষে গড় ৩০ এর নিচে। বিরাট কোহলির সেটা মাত্র ২৩.৮১।
এছাড়া বিশ্বকাপে এখনো মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা মিশেল স্টার্কদের মত পেসারদের পুরোটা দেখাই যাইনি। তাঁরাও নিজেদের সেরাটা দেখালে এই বিশ্বকাপ বাঁহাতি বোলারদেরই হয়ে উঠতে পারে। আরো স্পষ্ট করে বললে, বিশ্বকাপটা হতে পারে বাঁ-হাতি পেসারদের। অন্তত এখন পর্যন্ত সেই আভাসই পাওয়া যাচ্ছে।
– স্পোর্টসকিডা অবলম্বনে