২০১১ সাল। এই এক দশক আগের কথা। স্মার্টফোন আসেনি, স্মার্ট টিভি আসেনি। আসেনির লিস্ট বানালে গোটা রাত কেটে যাবে তাই, সে প্রসঙ্গে আর কিছু বলে লাভ নেই। সে সময় সদ্য বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত, ওয়াংখেড়ে থেকে দূরে রাহুল নি:শব্দে প্র্যাকটিস করছেন। সামনেই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। পরে ঐ সিরিজে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করা ক্রিকেটারের নাম রাহুল দ্রাবিড়।
সৌরভপন্থী বাঙালি হয়তো কোনওদিন তাঁকে আপন করতে পারবে না। এই ‘পন্থী’ শব্দটা ভারতবর্ষে এক ধরণের অর্গ্যাজম। যে কোনও মানুষ স্টার হওয়ার পর তাদের ঘিরে একটা অদ্ভুত বলয় তৈরি হয়। আজকের জমানায় তৈরি হয় ‘ফেসবুক গ্রুপ’। যেমন এসআরকিয়ান, গাঙ্গুলিয়ান, এমএসডিয়ান – দ্রাবিড়িয়ান কেউ দেখেছে? দেখেনি বোধহয়। কারণ দ্রাবিড় সেঞ্চুরি ক’রে লাফ মারেননি।
ক্যাচ ধরে বাড়তি, অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস করেননি, জামাও ঘোরাননি। ওগুলো হিরোদের জন্য, চরিত্রাভিনেতাদের জন্য নয়। দ্রাবিড় সেই কাজগুলো করতেন যা হিরোরা করতেন না, ক্যারেক্টার-অ্যাক্টররাই করতেন। যেমন মোমবাতির দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার মত পিচে গিয়ে উইকেটের পাশে চুপ করে বসে থাকা, খেলার শেষে চুপচাপ বই পড়া।
কনসেনট্রেশন, ডিপ কনসেনট্রেশন। খ্যাতির লোভ কোনওকালেই ছিল না। না ছিল ক্যাপ্টেন হওয়ার তীব্র বাসনা। দ্রাবিড় চিরকালের মুখচোরা। ভীষণ সিরিয়াস, একনিষ্ঠ পাঠক এবং পরামর্শদাতা।
আপাতত ভারতীয় কোচের হটসিটে দ্রাবিড়। বিসিসিআই অটোনমাস বডি হলেও, কার অঙ্গুলিহেলনে বডি চলে সে আপামর ভারতবর্ষ জানে। অতীতে বহু কোচ-ক্যাপ্টেন ঝগড়াও ভারতীয়দের দেখা, চেনা। দ্রাবিড় নতুন কিছু করতে পারেন কি না, সেইটা দেখার জন্যই এক এবং একমাত্র অপেক্ষা। ইদানীংকালে ভারতীয় ক্রিকেটাদের পুজো করার রেওয়াজটা খানিক বন্ধ হয়েছে।
একদিক দিয়ে সেটা খুব ভাল যে, পারফরমেন্স না দিতে পারলে এখন ভারতীয়রা ক্রিকেটারদের ছেড়ে কথা বলেন না। আরেকদিক থেকে দেখতে গেলে, এ শতাব্দী শুরুর জমানায় যে সব ক্রিকেটারদের দেখে আমরা বড় হয়েছি, এক একটা চরিত্রকে দেখে বড় হয়েছি – এই রোম্যান্টিসিজম, এই আবেগ বহুকাল হল গর্ভে তলিয়ে গেছে। সুতরাং স্টারকাস্ট আবেগে বিহ্বল হওয়ার কোনও জায়গা নেই, সুযোগও নেই। দ্রাবিড় সেখানেই নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটান কি না, দেখার অপেক্ষায় বুক বাঁধছে একখণ্ড ভারতবর্ষ।
দ্রাবিড় অবশ্য পারবেন সেটা বলাই বাহুল্য। ৩১৭৫৮ বল খেলা আর ২১০ ক্যাচ নেওয়া তো মুখের কথা নয়। সেই লোকটা নিজের জ্ঞান ভারতীয় ক্রিকেটে বিনাবাক্যে বিলিয়ে দেবে সে তো জানা কথা। জ্ঞানভাণ্ডারটি বিরাট-রোহিতরা কতটা নিতে পারে, সেটাই লক্ষ্যণীয়।
অল দ্য বেস্ট মাই অল টাইম ফেভারিট প্লেয়ার, রাহুল শরদ দ্রাবিড়।।