লিটন-সৌম্য: ‘আজীবন নির্বাসিত’ থেকে অটো চয়েজ

গত এক দশকে বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেছেন এমন ক্রিকেটার তো অসংখ্য। তবে তাঁদের সবার মধ্যেও দুজন একটু আলাদা। দুজনই নিজেদের ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই প্রমাণ করেছেন তাঁরা বিশ্বসেরাদের একজন হতে পারেন। তাঁদের এই সক্ষমতার বিশ্বাসটাও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। এই দুই ওপেনারের নাম লিটন দাস ও সৌম্য সরকার।

এই সময়ে এসে লিটনের সাথে সৌম্যের নামটা হয়তো একটু বেমানান লাগে। কেননা গত দুই বছরে লিটন নিজেকে সত্যিই বিশ্বসেরাদের কাতারে নিয়ে গিয়েছেন। ওদিকে সৌম্য নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি গুলো রাখতে পারেননি। হতাশ করেছেন। তবে ২০১৯ সালেও তো দুজনের মধ্যে লড়াই হতো। বাংলাদেশের হয়ে কে ওপেন করবেন? সৌম্য নাকি লিটন।

তবে এরপর লিটন দাস নিজের ব্যাটিং সত্ত্বাটা বুঝতে পারলেন। নিজের উইকেটের গুরুত্ব বুঝতে পারলেন। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি যেকোন ফরম্যাটেই লিটন রানের পর রান করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠলেন।

ওদিকে সৌম্য সরকার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকলেন। লিটন যখন ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শিখরে উঠছেন সৌম্য তখন তলানিতে। একইসাথে পথ চলতে শুরু করা দুই বন্ধুর দুটি পথ যেন বেঁকে গেল।

তবে লিটন-সৌম্য আবার এক হয়েছেন। ওপেনিং সমস্যার সমাধান করতে না পেরে বাংলাদেশ আবার সৌম্য সরকারের কাছেই ফিরে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে দলের মান বাচানোর জন্য সৌম্যকেই সেরা অপশন্ মনে করছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। সত্যিই তো তাই। ওই কন্ডিশনে সেরা সব পেস আক্রমণের সামনে নতুন বলে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারেন এমন ব্যাটার বাংলাদেশে কজন আছেন। কিংবা ছন্দে থাকা সৌম্যের চেয়ে এই কাজটা ভালো কে পারে?

যদিও সৌম্য সরকারে আস্থা রাখার আগে বাংলাদেশ তাঁদের হাতে থাকা সবধরনের অপশনই বাজিয়ে দেখেছে। নতুন ওপেনার থেকে, পুরনো কিংবা মেকশিফট ওপেনার সব পরিকল্পনাই হয়েছে ব্যর্থ।

নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমান কাউকে দিয়েই ঠিক হচ্ছেনা। আর বাংলাদেশ এই ওপেনিং সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে অনেকদিন ধরেই। কোনকিছুতেই যেন কাজ হচ্ছেনা। ফলে বাংলাদেশের আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হারানোর কিছু নেই।

সেজন্যই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে একটা সাহস তো বাংলাদেশ দেখাতেই পারে। ওপেনিং পজিশনে নামিয়ে দেয়া যেতে পারে পুরনো দুই বন্ধুকে। বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করতে নামছেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্যেও যেন এক নস্টালজিয়া। যদিও, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই তাঁদের এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে ‘আজীবন নির্বাসন’-এ পাঠানোর আওয়ার উঠেছিল। আরেকটি বিশ্বকাপের আগে সেই দু’জনই আবার অটো চয়েজ দলের।

লিটন দাস দলের পরীক্ষিত ওপেনার। যদিও লিটনকে আবার মিডল অর্ডারে ভাবতে চাইছে দল। তবে ওপেনিং পজিশনের এমন সংকটে লিটনকে ওপেনার হিসেবে নামানোর সিদ্ধান্তটা খুব বেশি কঠিন হবার কথানা।

ওদিকে আরেক প্রান্তে ওপেন করার জন্য বাংলাদেশের সামনে অপশন আসলে দুটি। কন্ডিশন বিবেচনায় নিশ্চয়ই এগিয়ে থাকবেন সৌম্যই। এছাড়া তাঁর বোলিংটাও ওই কন্ডিশনে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। ফলে সৌম্য যদি একাদশে থাকেন তাহলে ওপেনিংটাই তাঁর জন্য সেরা জায়গা। ম্যাচের শুরুতেই প্রতিপক্ষ বোলারদের মনোবল ভেঙে দেয়ার কাজটা তিনি খুব ভালোই পারেন।

ইনফর্ম লিটনের সাথে যদি সৌম্যও আবার নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। দুই বন্ধুর পথটা যদি আবার এক হয়ে যায় তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান তো বাংলাদেশের ক্রিকেটই হবে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link