শোক-ক্ষুধা জয় করে আইপিএল

বাসায় কোনো টিভি ছিলো না বিধায় বন্ধুদের বাড়িতে খেলা দেখতেন আর স্বপ্ন বুনতেন ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু ম্যাচ খেলার জন্য জুতোও ছিলো না তার। এরপর আস্তে আস্তে রঞ্জি ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সুযোগ পেলেন। আইপিএলের নিলামে বিক্রি হবার মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই ছোট ভাই আত্মহত্যা করেন!

বাবা ছিলেন টেম্পু চালক। কোনো রকমে সংসার চালাতেন।

বাসায় কোনো টিভি ছিলো না বিধায় বন্ধুদের বাড়িতে খেলা দেখতেন আর স্বপ্ন বুনতেন ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু ম্যাচ খেলার জন্য জুতোও ছিলো না তার। এরপর আস্তে আস্তে রঞ্জি ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে সুযোগ পেলেন। আইপিএলের নিলামে বিক্রি হবার মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই ছোট ভাই আত্মহত্যা করেন! এতো কষ্টের মধ্যে পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। সেই কষ্টকে পাশ কাটিয়ে চেতান সাকারিয়া আইপিএলের অভিষেক ম্যাচেই শিকার করলেন তিন উইকেট।

জন্ম ২৮শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ ; রাজকোটের ভাবনগরে। ছোট বেলা থেকেই চেতন সাকারিয়া দারিদ্র্যর মাঝেই বেড়ে উঠেছেন। স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেটার হবেন, কিন্তু তার বাসায় টিভিও ছিলো না! বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে খেলা দেখতেন। ছোটবেলার বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে কাজ করেছিলেন ষ্টেশনারি শপেও। ধীরে ধীরে পরিশ্রম করে নিজের প্রতিভা দিয়ে সুযোগ পেলেন স্বরাষ্ট্র দলে।

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতে সৌরাষ্ট্রর হয়ে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে অভিষেক হয় চেতনের। ২০ নভেম্বর ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্রর হয়েই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। প্রথম ইনিংসেই তিনি পাঁচ উইকেট শিকার করেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রর হয়েই সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অভিষেক করেন চেতন। এরপর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ২০২১ আইপিএলের নিলামে তাকে দলে ভেড়ায় রাজস্থান রয়েলস।

স্বরাষ্ট্রর হয়ে খেলতেন ভাবনগর থেকে উঠে আসা আরেক ক্রিকেটার শেলডন জ্যাকসন। যেহেতু চেতন সাকারিয়ার আর্থিক সমস্যা থাকায় তিনি খেলার জুতো কিনতে পারতেন না তাই একবার, নেটে অনুশীলনের সময় সাকারিয়া শেলডন জ্যাকসনকে আউট করে! আর আউট করার পর জ্যাকসন তাকে এক জোড়া ক্রিকেট বুট উপহার দেয়। সেটা দিয়েই দীর্ঘদিন চালিয়ে দেন চেতন।

রঞ্জি ট্রফিতে সুযোগ পাওয়ার পর তার বাবাকে আর টেম্পু চালাতেন দেননি চেতন। আইপিএলের নিলামে ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হবার পর পুরো পরিবারে যেনো খুশির আমেজ আসে! চেতন বলেন যে টাকার অভাবে তাদের কোনো স্থায়ী ঘর ছিলো না, তাই আইপিএলের এই টাকা দিয়ে রাজকোটে একটা বাসা নিবেন। তবে নিলামে ঠিক দুই সপ্তাহ আগেই তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।

চেতন সাকারিয়ারা দুই ভাই এক বোন ছিলেন। যার মধ্যে চেতন ছিলেন সবার বড়। আইপিএলের নিলামের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে তার ছোট ভাই আত্মহত্যা করে পরপারে পাড়ি জমান। তখন চেতন সাকারিয়া সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে খেলছিলেন। সে মানসিকভাবে কষ্ট পাবে বিধায় পরিবার থেকে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। এরপর যখন বাড়ি ফিরে তিনি এই খবর শুনেন দুই দিন না খেয়ে ছিলেন চেতন এমনকি কষ্টে পরিবারের কারো সাথে বেশ কয়েকদিন তিনি কথাও বলেননি।

এরপর সব কষ্টকে পাশ কাটিয়ে সুযোগ পেলেন আইপিএলে রাজস্থানের হয়ে প্রথম ম্যাচেই। আর সুযোগ পেয়েই করলেন বাজিমাত! প্রথম ম্যাচে দামি দামি বোলাররা রাহুল-হুডাদের কাছে চরম মার খেলেও একপ্রান্তে ৪ ওভারে ৩১ রানে তিন উইকেট তুলে নেন চেতন। তার অসাধারণ বোলিং নজর কেড়েছে ক্রিকেট সমর্থকসহ অনেক ক্রিকেটারদের।

জুতোর অভাবে খেলতে না পারা ছেলেটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগে বড় বড় তারকা ক্রিকেটারদের বিপক্ষে দাপুটে বোলিং করেছেন সেই সাথে শেয়ার করছেন ড্রেসিং রুমও। অভাবে খেয়ে না খেয়ে থাকা ছেলেটাও আজ কোটিপতি হয়েছে শুধুমাত্র তার তপস্যা আর প্রতিভা দেখিয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...